রাজিক হাসান
একটা ঈগল, বাঘ বা কুমীরকে নিয়ে পড়াশোনা করলে পৃথিবীর সকল ঈগল, বাঘ বা কুমীর সম্পর্কে মোটামুটি একটা নিরঙ্কুশ ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু একটা মানুষকে নিয়ে পড়াশোনা করলে দুনিয়ার সকল মানুষ সম্পর্কে নিরঙ্কুশ ধারণা পাওয়া যায় না। কারণ চিন্তা করতে সক্ষম আরও বহু প্রাণীর মতো মানুষই একমাত্র প্রাণী যে তার চিন্তা বিকশিত করতে পারে। এজন্য সকল প্রাণী চিন্তা ও আচরণে অবিরাম পুনরাবৃত্তি করে গেলেও মানুষ তা করে না। নতুন চিন্তা নতুন কাজ উদ্ভাবন করতে সে পারে। মানুষ এতোটাই একক, এতোটাই স্বতন্ত্র যে কারও সঙ্গে কারও চ‚ড়ান্ত মিল হতে পারে না। সুতরাং মানুষ দুর্বোধ্য হতে বাধ্য। যখন মানুষ তার ‘শুভবোধ’কে জয়ী দেখতে চায় এবং তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়ে লড়ে তখন আশাবাদ জাগে। ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ’ রবীন্দ্রনাথের এই ভাবনা তখন আমাদেরও সঙ্গী হয়। কিন্তু যখন দেখি ‘অশুভবোধ’ তাড়িত সেই মানুষ নৃশংস কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছে, সামান্য বিকার পর্যন্ত নেই তখন মানুষ সম্পর্কে যাবতীয় আশাবাদ লোপ পায় আমাদের। কিন্তু এও তো ঠিক প্রাণীজগতে একমাত্র মানুষই তার নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবেছে, বুঝতেও চেয়েছে নিজেকে।
জগৎ বা নির্দিষ্ট কোনো ভৌগোলিক সীমারেখায় মানুষকে ব্যাখ্যা করা যায় না। এ কারণে, শুধু এই একটা কারণে বলা যায় মানুষের কোনো স্থিরকৃত ধর্ম থাকা সম্ভব নয়। কারণ প্রতিমুহূর্তেই সে নিজেকে নতুন করে তৈরি করে। তবে কি মানুষের বৈশিষ্ট্য আর তার অন্তর্নিহিত প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে মানুষের সংজ্ঞা দেওয়া যাবে? দেওয়া যাবে না। কেননা মানুষ সব সময় অনিয়ন্ত্রিত। তাহলে মানুষকে বুঝতে হবে কী দিয়ে? উত্তর হলো বোঝা যাবে না। দার্শনিকদের একাংশের মতে, তারপরও কেউ যদি বুঝতে চান মানুষকে তাহলে তাকে বুঝতে হবে তার ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে। কারণ যে চেতনা তাকে ধরে রাখে ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে তা প্রকাশ পায়। জগতের সঙ্গে তার যে চেতনার সম্পৃক্ততা তাও বিচ্ছিন্ন নয়। মানুষ সম্পর্কে প্রকৃত আশাবাদ জাগাতে এ বিবেচনাগুলো করতে হবে। ভুল আশাবাদ থেকে সরে আসার জন্যও এটা মনে রাখতে হবে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :