রুবেল মজুমদার: [২] রক্তের ছোপ ছোপ দাগ, গুলির খোসা পড়ে আছে মাটিতে। দূর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিল সোহেলের নিজ কার্যালয়ের বতর্মান অবস্থা। নগরজুড়ে মোতায়ন রয়েছে র‍্যাব ও পুলিশ।

[৩] কুমিল্লায় এমন চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আতঙ্কজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন নগরবাসী। গত কয়েক মাসে নগরীতে পূর্জা মণ্ডপ হামলা, মহানগর যুবলীগ নেতা জিলানী ও ব্যবসায়ী আক্তার হোসেনসহ বেশ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। জনসম্মুখে এমন হত্যাকাণ্ড হতবাক নগরবাসী।

[৪] সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, পূজা মণ্ডপের হামলা পর নগরীতে জনপ্রতিনিধি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নগরবাসী খুবই আতঙ্কিত। এসব হত্যাকাণ্ডের পিছনে মাদকের বিষয়টি জড়িত থাকায় আমাদের জন্য অশুভ সংকেত। ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।

[৫] এদিকে সোমবার(২২ নভেম্বর) রাতে কাউন্সিলার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে নগরীর ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর অভিযোগ উঠেছে। একদল হামলাকারী নগরীর পাথরিয়াপাড়া ও সুজানগর এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়ায়।

[৬] পরে তারা শতাধিক বাড়ি-ঘর, অফিস ও দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এ সময় আতঙ্কে সুজানগর পূর্বপাড়া এলাকায় শাহিনুর ইসলাম (৬০) নামে এক ব্যক্তি প্রাণ হারান বলে অভিযোগ উঠেছে। মারা যাওয়া শাহিনুর কুমিল্লার বাখরাবাদ গ্যাস অফিসের কর্মচারী।

[৭] মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) বাদ জোহর কাউন্সিলর জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী আসেন নগরের পাথরিয়াপাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজে নামে কার্যালয়ে। পরে পাথুরীপাড়া ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় কাউন্সিলর সোহেলকে। আর কাউন্সিলরের সহযোগী নিহত হরিপদ সাহাকে সকালে ১১ টায় নগরীর টিক্কাচর শ্মশানে সৎকার করা হয়।

[৮] প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কুমিল্লার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কার্যালয়ে প্রবেশ করে বুকে ও মাথায় ৯টি গুলি করা হয়। হত্যাকাণ্ডে পাঁচ থেকে আট জন অংশ নেন। তারা মুখোশ এবং মাথায় হেলমেট পরে মোটরসাইকেলযোগে এসে বৃষ্টির মতো গুলি চালান। এদিকে মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহত সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ।

[৯] এ হত্যাকাণ্ডে শাহ আলম নামের এক ব্যক্তিকে সন্দেহ করছে নিহত কাউন্সিলরের পরিবার।

[১০] পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই ঘটনায় শাহ আলমকে আটক করতে পারলে পুরো ঘটনার রহস্য বের করা যাবে। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে।

[১১] কুমিল্লা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, কী কারণে এ ঘটনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতরা যেই হোক দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

[১২] উল্লেখ্য, সোমবার বিকেল কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সোহেল (৫২) ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা (৫০) দূর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। নগরীর পাথরিয়াপাড়ায় কাউন্সিলরের কার্যালয়ে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলিতে আটজন গুলিবিদ্ধ হন। আহতরা কুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

[১৩] কাউন্সিলর সোহেল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়রও ছিলেন। ২০১২ ও ২০১৭ সালে তিনি কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় মেয়াদে প্যানেল মেয়র ছিলেন সোহেল। নিহত হরিপদ সাহা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।

[১৪] এ রিপোর্টি লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ