ইউসুফ মিয়া: [২] রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম চলছে জোড়াতালি দিয়ে। বালিয়াকান্দিতে সরকারি স্বাস্থ্য সেবার বিপর্যয় চিকিৎসক নার্স টেকনিশিয়ানসহ চিকিৎসা কর্মীর ঘাটতি হয়েছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৩ লাখ জনবসতির স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় গত ২০১১ সালের ২৫ মার্চ।
[৩] তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে স্বাস্থ্যসেবা বিপর্যয়ে পড়েছে। গুরুতর কোনো রোগীর সেবা তো দূরের কথা প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য অনেক রোগীকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
[৪] উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, বালিয়াকান্দি উপজেলা ও ইউনিয়নের প্রায় ৩ লাখ লোকের বসবাস ৩ লাখ লোকের জন্য বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৮ জন চিকিৎসকের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৫ জন চিকিৎসক। ২৩টি কর্মচারী পদের বিপরীতে রয়েছে মাত্র ৬ জন।
[৫] একটি এনালগ এক্সরে মেশিন থাকলেও সেটিকে ব্যবহারের উপযোগী করা যায়নি জনবলের অভাবে বলেও জানা যায়। অপারেশন থিয়েটারটি স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকলেও তা জনবলের অভাবে ভুগছে।
[৬] বিদ্যুৎ চলে গেলে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা রোগীদের পরতে হয় আরেক বিরম্বনায় ২০০৮ সালের জুন মাসের ৬ তারিখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে একটি ৫০ কেভির একটি জেনারেটর প্রদান করা হলেও তা আজ পর্যন্ত চালু করা হয়নি। তবে জেনারেটরটি ইতিমধ্যে তার কার্যকারিতা হারিয়েছে বলে মতামত অনেকের।
[৭] সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ডাক্তার দেখাতে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। এতো রোগী দেখতে ডাক্তাররাও বেশ হিমশিম খাচ্ছেন। পাশাপাশি করোনার টিকা চালু থাকায় অনেকে টিকা নেওয়ার আগে বা পরে ডাক্তার দেখাতে লাইনে দাঁড়ানোই চাপ পড়েছে বেশি হাসপাতালে রোগীরা।
[৮] স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখাতে আসা রোগীরা জানান, বালিয়াকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন চিকিৎসা সেবা সম্পূর্ণ পাওয়া যায় না। যারা তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে ফরিদপুর রাজবাড়ী রেফার্ড করা হয়। এখানকার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট থাকায় আমাদের পরতে হয় ভোগান্তিতে তবে অন্য হাসপাতালে গিয়ে আমার চিকিৎসাসেবা নিতে হবে।
[৯] চিকিৎসা সেবা নিতে এক রোগী বলেন, বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে ও আলট্রাসনো মেশিন না থাকায় বা নষ্ট থাকায় আমাদের বিভিন্ন ক্লিনিকে পরীক্ষা করাতে হয় অনেক বেশি টাকায়। সেখানে তারা তাদের ইচ্ছামতো টাকা নেয়। সরকারি হাসপাতাল থাকতে যদি বাইরে থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষা করাবো তাহলে সরকারি হাসপাতাল থেকে আমাদের বালিয়াকান্দিবাসীর লাভ হলো কি? আমাদের মতো গরিব মানুষ যাতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা সম্পূর্ণরূপে পায় এজন্য সরকারকারের কাছে দাবি দয়া করে আমাদের হাসপাতালের দিকে নজর দিন।
[১০] বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার নাসির উদ্দিন জানান, ৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। জরুরী ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ ও এক্সরে মেশিন সচল করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। জনবল সংকট থাকায় চিকিৎসায় যে লক্ষ্যমাত্রা সেটি অর্জন করা আমাদের সম্ভব হচ্ছে না।
[১১] তিনি আরো বলেন, আমাদের সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে বালিয়াকান্দিবাসীকে উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা আমরা প্রদান করতে পারি।
[১২] রাজবাড়ী ২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পাংশা, বালিয়াকান্দি,কালুখালির ৩টি উপজেলার অভিবাবক বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম এমপি বলেন, বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারসহ বিভিন্ন পদে জনবল সংকটের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই এই হাসপাতালের বিভন্ন সমস্যা চিকিৎসক সংকটসহ নানান জটিলতা নিরশন হবে বালিয়াকান্দির উপজেলার মানুষ কাঙ্খিত সেবা পাবে।