শিরোনাম
◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের

প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর, ২০২১, ১২:২৭ রাত
আপডেট : ১০ নভেম্বর, ২০২১, ১২:২৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গুণাগুণে ভরপুর ঠাকুরগাঁওয়ের নিষিদ্ধ ‘কালো চালের’ ধান চাষে সফল

নিউজ ডেস্ক: ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের জওগাঁও গ্রামের আলমগীর হোসেন এবার ‘ব্ল্যাক রাইস’ বা ‘কালো চালের ধান’ চাষ করে সফল হয়েছেন। মাড়াই করে তিনি এখন ধান রোদে শুকাচ্ছেন। কখনো এই ধানের নাম না শোনা আলমগীর এবার চাষ করে ভবিষ্যতেও চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঢাকা পোস্ট

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এবার ৮ কৃষককে ব্ল্যাক রাইস ধান চাষ করার জন্য দেওয়া হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে এবারই প্রথমবারের মতো ‘ব্ল্যাক রাইস’ চাষ হয়েছে। ২ নভেম্বর এই জাতের ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সবাই ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে একজন কৃষক আলমগীর।

সরেজমিনে তার বাড়িতে গেলে ভালো ফলন পেয়ে খুশি আলমগীর বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে এটি চাষাবাদ করি। এই চাল অনেক পুষ্টিকর এবং এর ভাত খেলে শরীরের ওজন বাড়ে না। আমি বিঘাপ্রতি ১৮ মণ ফলন পেয়েছি। যেহেতু এটি কালো চাল, তাই সামনেরবার আরও বেশি কর আবাদ করব বলে আশা করছি।

ব্ল্যাক রাইস বা কালো চাল ঠাকুরগাঁওয়ে প্রথম আবাদ হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা আসছেন চালের রং দেখতে। ব্ল্যাক রাইস দেখার পর ও তার পুষ্টির গুণাগুণের বর্ণনা শুনে সবাই আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

ইতোপূর্বে ব্ল্যাক রাইস নামে ঠাকুরগাঁও জেলায় কখনো কোনো ধানের নাম শোনেননি বা চাষাবাদ হয়নি বলে জানেন তারা। কোনো কৃষক এমন ধান দেখেছেন বলেও জানা নেই, একে অন্যের সঙ্গে বলাবলি করছেন তারা। এমন একজন আবদুল্লাহ আল নোমান বলে ওঠেন, এটি আমাদের উপজেলার প্রথম চাষ হয়েছে। চালটি ব্যতিক্রম, পুষ্টিকর এবং গুণাগুণক্ষমতা বেশ ভালো। আমি উদ্বুদ্ধ হয়েছি। ভবিষ্যতে ব্ল্যাক রাইস চাষাবাদ করব।

একই রকম চাষ করেছিলেন পয়গাম আলী। এবার অল্প আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। ফলন দেখে ভবিষ্যতে এ ধানের চাষ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষিকাজে সময় দেন দীর্ঘদিন ধরে। নিত্যনতুন কৃষিপণ্য উৎপাদনে তার ব্যাপক আগ্রহ। এ জন্য সম্প্রতি তিনি ঠাকুরগাঁও জেলার শ্রেষ্ঠ কৃষক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। সব সময় চেষ্টা করতেন নতুন কিছু উৎপাদন করার।

কৃষক পয়গাম আলী জানান, সব সময় চেষ্টা করি কম খরচে উচ্চ ফলনশীল ফসল আবাদ করার। আমি এই ধানের বিষয়ে খবর পেয়ে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সংগ্রহ করে চাষাবাদ করি। এ ধানটি যেমন উচ্চ ফলনশীল, আবার পুষ্টিকরও। এবার স্বল্প ব্যয়ে অল্প আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছি। ভবিষ্যতে ব্ল্যাক রাইসের চাষাবাদ বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

জানা যায়, একসময় চীনে শাসকগোষ্ঠীদের প্রিয় খাবার ছিল ব্ল্যাক রাইস। শুধু তাদের জন্য গোপনে চাষ করা হতো এ ধান। প্রজাদের জন্য ব্ল্যাক রাইস চাষাবাদ ও খাওয়া নিষিদ্ধ করে শাসকরা। সেই থেকে এর নাম হয়ে যায় ‘নিষিদ্ধ ধান’।

ব্ল্যাক রাইস বা কালো চাল ইতিমধ্যে ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকদের কাছে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে। এটি সাধারণ ধানের মতোই চাষাবাদ করতে হয়। তবে তুলনামূলকভাবে রাসায়নিক সার, কীটনাশক কম লাগে, অতিরিক্ত পানির প্রয়োজনও হয় না।

রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ জানান, চীনের শাসকগোষ্ঠীর সুস্বাস্থ্যের জন্য গোপনে ব্ল্যাক রাইস চাষাবাদ করা হতো, যা প্রজাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। সেই থেকে ব্ল্যাক রাইসকে নিষিদ্ধ চাল বলা হয়ে থাকে। ব্ল্যাক রাইসে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রচুর থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। ত্বক পরিষ্কার করে ও শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে শরীরকে ফুরফুরে রাখে। এতে থাকা ফাইবার হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখে।

তিনি বলেন, এই ধান ডায়াবেটিস, স্নায়ুরোগ ও বার্ধক্য প্রতিরোধক। এতে ভিটামিন, ফাইবার ও মিনারেল রয়েছে। ব্ল্যাক চাল কিছু কোম্পানি প্যাকেটজাতের মাধ্যমে হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও স্থানীয়ভাবে কেজিপ্রতি ৫০০ টাকায় বিক্রি হতে পারে। ব্ল্যাক রাইসে রয়েছে ১১টি পুষ্টিগুণ। আশা করা যায়, ব্ল্যাক রাইস চাষাবাদ করে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন কৃষকরা।

ইতোমধ্যে অনেক কৃষক আমার কাছ থেকে ব্ল্যাক রাইসের বীজ চেয়েছেন। তারা ভবিষ্যতে চাষাবাদ করতে আগ্রহী। সম্প্রতি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহে ব্ল্যাক রাইস নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়