দীপক চৌধুরী: হঠাৎ করে পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অনেকেই ‘মাস্তানতন্ত্র’ বলেছেন। কারণ, মানুষের ভোগান্তি ভয়ংকর পর্যায়ে উঠেছিল। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর আকষ্মিকভাবে এমন ধর্মঘট মানুষকে বিস্মিত করেছে। ‘বলা নেই কওয়া নেই’ এমন আকষ্মিতায় বাস স্টেশনে বা লঞ্চঘাটে গিয়ে মারাত্মক বিপদে পড়েন যাত্রীরা। ডিজেলের দাম বেড়েছে কিন্তু গ্যাসের দামতো বাড়েনি? তাহলে যারা গ্যাসের গাড়ি চালান তারা ধর্মঘটে শামিল হলেন কীভাবে? নাকি জনগণের সঙ্গে মশকরা? জনগণের সঙ্গে ফাজলামো? ধর্মঘট পরিবহনওয়ালার করবেন না তা বলছি না। অন্তত ১৫ দিন বা এক সপ্তাহ সময় দিয়ে মানুষকে জানিয়ে তারা ধর্মঘটে নামতে পারতেন তো। নাকি? প্রচণ্ড দুর্ভোগে মানুষকে ফেলে দেওয়া হলো কিন্তু একাবারও চিন্তা করা হলো না? যারা এর পেছনে রয়েছেন তারা কারা এটা সরকার জানে। মানুষকে জিম্মি করার এমন নজির পৃথিবীর আর কোন্ দেশে আছে? পরিবহনের ওপরই যাদের জীবন-যাত্রা নির্ভরশীল তারা এতোটাই বিপদে পড়েছেন যে, ‘ত্রাতা’ হিসেবে কাউকে তারা পাননি। পরিবহন ধর্মঘটের সঙ্গে এদশের মানুষের পরিচয় দীর্ঘদিনের। কিন্তু হুট করে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার এমন সিদ্ধান্ত অনেকটা ব্লাকমেইলিংয়ের মতো। অবশেষে বাসের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয় গতকাল সন্ধ্যায়। অবাক করার মতো বিষয়, রাজধানীর গুলিস্তান থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত আগে যেখানে ১০ টাকা ভাড়া নেওয়া হতো এখন সেখানে ১৫ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। পরিবহন ধর্মঘট তুলে নেওয়ার পর রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীতে বাস চালু হলে আগের চেয়ে ৫০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে বলে জানালেন একাধিক মাঠপর্যায়ের সাংবাদিক। যদিও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে পরিবহন মালিক সমিতির বৈঠকে মহানগরে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কোনো কোনো পরিবহনে নতুন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। মহানগরে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হলেও ৫০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। লঞ্চ ভাড়া ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। আসলে কোনো অন্যায় বা অনিয়ম হলে বা মাস্তানি করার পর আমরা প্রায়ই শুনে থাকি – কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসলে কঠোর ব্যবস্থা তো দূরের কথা ভোতা ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না।
ইচ্ছাতন্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় একশ্রেণির দুর্বৃত্ত নানাসুযোগ নিয়ে অপকর্ম করছে। ইচ্ছা করেই অবিরত বিড়ম্বনা, গুজব, মিথ্যাচার করে চলেছে। দুঃসহ করে তুলেছে জীবন। ওদের রুচির দুর্ভিক্ষ আমাদের দেখতে হচ্ছে। চিন্তার দুর্ভিক্ষ চলছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে দেশে লুটতরাজ চালাবার চেষ্টা চালাচ্ছে। মানুষের বিশ্বাস ও ভালবাসাকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে ষড়যন্ত্র করছে। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার- এই দর্শন বানচাল করার চক্রান্ত করছে। হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার লক্ষ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, দোকান-পাট, বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুর করা হয়েছে। একের পর এক ষড়যন্ত্র করছে ওই চক্রান্তকারীরা। এদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর হই না কেন? যদিও হয়েছি বলা হচ্ছে তবু প্রশ্ন থেকেই যায়--কতটুকু কঠোর হয়েছি? ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকারীদের চিনতে কী এখনো বাকি আছে? জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক জান্তা, স্বৈরতন্ত্রের হোতারা দেশের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন কিন্তু একটিও গণমুখী কাজ তারা করেননি। জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়া তো একশ্রেণির মানুষের প্রিয় নেতা হয়ে উঠেছিলেন। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের দিয়ে রাজনৈতিক দল কুখ্যাত ‘ফ্রিডম পার্টি’ গঠন করান। আর খালেদা জিয়া স্বামী জিয়াউর রহমানের পথ ধরে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই প্রকৃতপক্ষেই নারীজাগরণের কাজটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমাদের সবার সামনে আসেন। তিনি সকলস্তরে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করবার চেষ্টা করছেন। যারা দায়িত্বে আছেন কিছু দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথায় তারা যেনো ইতিহাস ভুলে না যান। অগ্রগতিকে নস্যাৎ করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকা শ্রেণিটা সুযোগ পেয়ে পিঠে ছুরি চালাবে। সুতরাং সাবধান হতেই হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সাম্প্রতিক কয়েকটি কথা ভীষণ ভালো লেগেছে। গুণী ও উচ্চশিক্ষিত এ নেতা বলেছেন, “যেসব ধর্মান্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময় লাখ লাখ মানুষকে ধর্মের নামে হত্যা করেছিল, দুই লাখ মা- বোনকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে ইজ্জত হরণ করেছিল, তারা এখনো সক্রিয়। তারাই এখনো সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ায়, পূজামণ্ডপে আঘাত করে। তারাই এখনো মেয়েদের পড়াশোনা করতে দিতে চায় না, নারীদের অগ্রগতিতে বাধা দেয়। তাদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে।”
সত্যিই আমরাও এটা চাই। ভোতা উপায়ে মোকাবেলা করে ফায়দা হবে না। সত্যি সত্যি কঠোরতা জরুরি। মুখে নয়, কাজে প্রমাণ দিতে হবে।
লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক
আপনার মতামত লিখুন :