শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর, ২০২১, ০২:২৯ দুপুর
আপডেট : ০৭ নভেম্বর, ২০২১, ০২:২৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] সোমেশ্বরী নদী অসহায় মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে!

শাহীন খন্দকার: [২] নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষ কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সোমেশ্বরী নদীতে পাথর কুড়িয়ে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন বলে জানালেন, ছবির মিঞা। তিনি বলেন,সোমেশ্বরী নদীতে এখন নৌকা ও জাহাজ চলে না। এখন নদীর জলে নামলেই অন্নজুটে খেটে খাওয়া মানুষের।

[৩] আবার ভয়-আতঙ্কে কাটে নদীর তীরবর্তী মানুষদের। এই বুঝি পাহাড়ি ঢলে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তাদের স্বর্বস্ব। এ অঞ্চলের গ্রাম, বাজার, বাড়িঘর প্রতি বছর-ই ভাঙ্গছে। নদী ভাঙ্গা মানুষ দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফিরছে! শিবগঞ্জের রমাপ্রসাদ দাস জানালেন, তার বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। তিনি জানান, প্রতিদিন সোমেশ্বরীর নদীতে ৩৫টি ড্রেজার দিয়ে নদীর তলদেশ থেকে পাথর ও বালি উত্তোলন হচ্ছে। এতে যে কোনো সময়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের বিপর্যয় ঘটতে পারে।

[৪] কামাড়খালী বাজারের দেবেশ্বরী মারাক বলেন, সোমেশ্বরী নদী আমাদের স্বর্বস্ব কেড়ে নিলেও রাতারাতি অনেকেই অর্থসম্পদের মালিক বনে গেছেন।

[৫] সোমেশ্বরী নদীর স্বচ্ছ জলে পাথর ও কয়লা সংগ্রহ এ অঞ্চলের কয়েক’শ নারী পুরুষের আয়ের উৎস। ভোর থেকে পরন্ত বেলা পর্যন্ত পাথর কুড়িয়ে স্তুুপ করে নৌকায় কিংবা নদীতে জেগে উঠা উঁচু স্থানে কিংবা চরে। এর পরে মহাজনের কাছে বিক্রি করে ঘরে ফেরেন তারা। আর এভাবেই তারা নিজেদের ভাগ্যের চাকা সচল করেছেন।

[৬] প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগেই ২৫ থেকে -৩০ ফুট লম্বা নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পাথর-কয়লা কুড়ানোর জন্যে। আজিরণ বেওয়া ও আরজ আলী জানালেন, সীমান্তবর্তী দূর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত সোমেশ্বরী নদীর তলদেশ থেকে পাথর তুলে তা নৌকায় করে তীরে নিয়ে আসা হয়। পরে সেগুলো পানিতে পরিস্কার করে বিক্রি করা হয় স্থানীয় পাথর ব্যবসায়িদের কাছে।

[৭] প্রতি ছোট নৌকা পাথর বিক্রি হয় দুই হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকা দরে। পাথর কুড়িয়ে তাদের দৈনিক আয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এ টাকা দিয়েই চলে সংসার আর ছেলে-মেয়ের পড়াশোনাসহ অন্নবস্ত্র বাসস্থানের খরচ। দিনভর পাথর সংগ্রহ আর বোঝাইয়ের পরও তাদের নেই কোনো ক্লান্তির ছাপ।

[৮] পাথর কুড়ানো শ্রমিক হাফজা বলেন, নদী থেকে ছোট-বড় পাথর সংগ্রহ করে নৌকায় ভরে মহাজনের কাছে বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন সাইজের পাথর নদী থেকে সংগ্রহ করে নৌকায় করে বিক্রি করলে দামের কিছুটা তারতম্য রয়েছে। মাঝে মধ্যে মহাজনরাও ঠকিয়ে দেয় আমাদের। কখনও দুই হাজার টাকা দরে আবার এক হাজার বা ১২০০-৮০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

[৯] প্রশ্নের উত্তরে রহিমন বেওয়া জানালেন, গতরখাটিয়ে নৌকায় করে পাথর বিক্রি করেই খাইগো মা! শ্রমজীবী এসব নারীও পুরুষদের কর্মকান্ড চোখে পড়ার মতো হঠাৎ করে দেখলে আগন্তুকদের মনে হবে এরা বুঝি জালে মাছ ধরছে আর নৌকায় তুলছে, কিন্তু না পুরোটাই পাথরকে ঘিরেই কর্ম ব্যস্ততা তাদের।

[১০] সোমেশ্বরীর নদীর চর পারি দিয়ে যতোটুকু নদীর তলদেশে পানি পাওয়া যায় তার মধ্যেই একদিকে পাথর তুলছে আরেক দিকে নৌকাভ্রমণ করছে পর্যটকের দল। পর্যটক দলে থাকা এক শিশুর প্রশ্ন, ‘বাবা, এখানে যারা কাজ করছে, তারা কি সবাই স্টোনম্যান?’

[১১] পাথরের মাঝেই লুকিয়ে আছে ওদের স্বপ্ন। এখানেই নাওয়া-খাওয়া-বিশ্রাম,সন্ধ্যায় কাজ শেষে ঘরে ফিরে যাওয়া তেল লবন চাল সঙ্গে করে। হোসেন, করিম, লোকমানসহ এখানকার শ্রমজীবীদের কাছে জীবন মানেই পাথর। যত বেশি পাথর তুলতে পারবেন, ততো বেশি টাকা, আর একটু ভালো থাকার চেষ্টা প্রতিদিন ঝরবৃস্টিকে অপেক্ষা করে। নিজেরা তেমন পড়াশোনা করতে পারেননি, এই কষ্টার্জিত টাকা দিয়েই পড়াশোনা করাচ্ছেন তাদের সন্তানদের। হয়তো তারা একদিন বড় হবে, ঘুঁচাবে তাদের দুঃখ, লেখাপড়া না করার তৃপ্তি আর একটু ভালোমন্দ খেতে পারার স্বপ্ন তাদের। সম্পাদনা: রাশিদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়