শিরোনাম
◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর, ২০২১, ০১:৩৯ রাত
আপডেট : ০৭ নভেম্বর, ২০২১, ০১:৩৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সাঈদ তারেক: টাইগারদের ‘পোস্টমর্টেম’!

সাঈদ তারেক
যে খেলা আমি খেলি না বা খেলতে পারি না তেমন খেলাধুলার প্রতি উৎসাহ আগ্রহ আমার নিতান্তই কম। অন্যে খেলবে আর আমি তাই দেখে মজা নেবো, এটা আমার কাছে খুব একটা রুচিসম্মত মনে হয় না। তাই বলে ছোটবেলায় খেলাধুলা যে একেবারেই করিনি তা কিন্তু নয়। সমবয়সী খালা-মামাদের সঙ্গে এক্কাদোক্কা ওপেনটি বায়োষ্কোপ গোল্লাছুট কানামাছি ভোঁ ভোঁতে অংশ নিতাম। একটু বড় হলে দাঁড়িয়াবান্ধা হা ডু ডু, হাত-পা কিছুটা শক্ত হলে জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল খেলার অভিজ্ঞতাও আছে। সে আমলে কলকাতায় ইস্ট বেঙ্গল, মোহনবাগান, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার তুমুল প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলার প্রভাব গোটা বাংলায়ই পড়েছিলো। আমরা তখন পর্যন্ত জাতীয় খেলা বলতে হা ডু ডু’র পাশাপাশি ফুটবলকেই বুঝতাম।

ক্রিকেট আমাদের দেশে খুব বেশি দিনের নয়। যদিও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাবিকরা এটি আমদানি করেছিলো কিন্তু সর্বজনবিদিত হতে সময় নিয়েছিলো প্রায় দুইশো বছর। সপ্তদশ শতকের গোড়ার দিকে দক্ষিণ লন্ডনে এই খেলার উদ্ভব। প্রথম দিকে বাচ্চাদের খেলা হলেও পরে বড়রাও মাতে এতে। একসময় ভ‚স্বামী অভিজাত বা লর্ডসদের অবসর বিনোদনের মাধ্যম হয়ে ওঠেছিলো এই খেলা। গ্রীষ্মে পরিবার পরিজন ইয়ার বন্ধুদের নিয়ে লম্বা অবকাশে গেলে চার-পাঁচদিন ধরে তারা এই খেলা খেলে সময় কাটাতো। এর নামই হচ্ছে টেস্ট ম্যাচ। ইংল্যান্ড থেকে পরে ব্রিটিশদের গোলাম দেশগুলোয় চালান হয়। সবার আগে যায় আমেরিকায়। কিন্তু মার্কিনিরা কখনোই এ খেলায় উৎসাহ দেখায়নি। আমাদের এই অঞ্চলে প্রথমদিকে অভিজাত খেলা হিসেবেই পরিগণিত হতো। যতোদুর মনে পড়ে একসময় একশো ওভারে খেলা হতো। পরে নেমে আসে পঞ্চাশে। হালে আরও সংকুচিত করে টি-টোয়েন্টি মানে বিশ ওভারে নামিয়ে আনা হয়েছে। ক’দিন ধরে এই খেলারই বিশ্বকাপ চলছে দুবাইতে।

আমাদের এই অঞ্চলে দাপুটে কিক্রেট টিম বলতে দেখতাম দুটি দলকে- ভারত আর পাকিস্তান। রাজনৈতিকভাবে বৈরী এই দুই দেশের ক্রিকেট টিমও ছিলো একে অপরের চিরপ্রতিদ্বন্দী। একফাঁকে শ্রীলঙ্কাও ওঠে আসে। আমরা এশিয়া থেকে এই তিনটি টিমের কথাই বেশি শুনতে পেতাম। এসব খুব বেশি দিনের কথা নয়। বাংলাদেশ ছিলো মূলত ফুটবলের দেশ। যতো মাতামাতি এই খেলা নিয়ে। তারপরও কিছু তরুণ যুবক ক্রিকেট প্রাকটিস করতেন। একপর্যায়ে কীভাবে যেন তারা বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ফেলে। লন্ডন বিশ্বকাপে আকরাম খান বাহিনীর তাক লাগানো পারফরমেন্সের পর খেলাটা সবার নজরে আসে। একটা আশা জাগে ঠিকমতো পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো এই টিম ভবিষ্যতে ভালো করবে। একসময় ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ ছিলো পশ্চিমা বা সাদাদের হাতে। পরিচালনা ভার ভারতে চলে এলে নিয়ন্ত্রণ কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে পক্ষীয় কিছু দল তৈরির দরকার হয়ে পড়ে। এ সময় থেকেই বাংলাদেশ টিমের কদর বাড়তে থাকে। পরপর কিছু খেলায় জিতিয়ে দিয়ে টেস্ট স্ট্যাটাস এনে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ টিম জাতে ওঠে। এরপর থেকেই মূলত এদের নিয়ে মাতামাতি। বাঙালিরা হুজুগে জাতি বলে একটা বড় সুখ্যাতি আছে। আমরা এমন মাথায় তুললাম যে গর্বে ছেলেগুলো একেকটা ঢোল হয়ে গেলো! একটা খেলা জিতে এলেই জমি, বাড়ি, গাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট এই পুরস্কার সেই পুরস্কার, অমুক কোম্পানির ব্রান্ড অ্যাম্ব্যাসেডর তমুক বিজ্ঞাপনের মডেল! তারপর আকর্ষণীয় বেতনতো আছেই। আমরা একটা আহøাদী নামও দিয়ে দিলাম- টাইগার! এর মধ্যে ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি দলের একচ্ছত্র রাজত্ব কায়েম হলো। দূর হলো পেশাদারিত্ব। দিনে দিনে টাইগারগুলো কাগুজে বাঘে পরিণত হলো। যার প্রমাণ দেখা গেলো এবারের টি-টোয়েন্টিতে।

ফেসবুকে নানা ট্রল হচ্ছে। বাঘের বাচ্চাগুলো সব বিড়ালছানা হয়ে সুড়সুড় করে ঘরে ফিরে আসছে- এ নিয়ে হাসিঠাট্টা মশকরা কম হচ্ছে না। আমি কিন্তু এই ডাব্বা মারার জন্য ছেলেগুলোকে দোষ দিই না। তাদের পক্ষে যতোটা করা সম্ভব ছিলো তাই করেছে। যতোটা বোঝা যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বুকার বা জুয়াড়িরা এখন পর্যন্ত খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না। ফলে রেজাল্ট নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নেই। অন্য খেলায় বাজির ট্রেন্ড দেখে যেমন আগেই ফলাফল ঠিক করে দিতো এ খেলায় তেমনটি করা যাচ্ছে না। আগের বিভিন্ন টুর্নামেন্ট বুকারদের ঠিক করে দেওয়া ফলাফলে হয়তো দুয়েকটা খেলায় জয়ের মুখ দেখা গেছে, কিন্তু আসল সক্ষমতা কতোটুকু তা এই বিশ্বকাপে বোঝা গেলো। আমি ব্যাপারটা এভাবেই দেখতে চাই। প্রথম কথা হলো সব খেলা সবার জন্য নয়। খেলা যেহেতু প্রধানত শরীরভিত্তিক, দৈহিক কাঠামো এখানে একটা বড় ফ্যাক্টর। দৌড়ে কালোদের সঙ্গে কেউ পারে না তাদের দৈহিক গঠনের কারণে। চীনারা, জাপানিরা ক্রিকেট খেলে না তারা অপেক্ষাকৃত খর্বাকৃতির বলে। জিমনাস্টিকে রাশিয়ানরা কুংফু অ্যাক্রোবেটিক্সে চীনারা জুডো কারাতেতে জাপানিরা বেজবল বাস্কেট বলে মার্কিনিরা- তেমনি ক্রিকেটেও উঁচু লম্বা ইউরোপীয় বা সাদারাই ভালো পারফরমেন্স করতে পারে তাদের স্টেমিনা এবং দৈহিক কাঠামোর কারণে। আমাদের উপমহাদেশে পাকিস্তান এবং ভারতের কিছু কিছু অঞ্চলের মানুষের দৈহিক গঠনে অস্ট্রোলয়েডের ছাপ আছে। তারা ইউরোপীয়দের মতো উঁচু লম্বা বা সুঠাম দেহের অধিকারী। দ্রাবিড়িয়ান বংশোদ্ভূত শ্রীলঙ্কানরাও গড় লম্বা। হালে এগিয়ে আসা আফগানিস্তানের খেলোয়াড়রাও ক্রিকেটের জন্য মানানসই দেহের অধিকারী, তাছাড়া তারা লড়াকু জাত। অদম্য সাহসী। সে তুলনায় আমাদের টিমের অধিকাংশ প্লেয়ারকেই মাঠে পিচ্চি পিচ্চি লাগে। এই দক্ষিণ এশীয়ায় অনেক দেশ আছে যারা ক্রিকেটে নেই। নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, কোরিয়া ক্রিকেটে সুবিধা করতে পারে না মূলত তাদের দৈহিক সীমাবদ্ধতার কারণে।

তারপরও আমি বলছি না বাংলাদেশের ছেলেরা ক্রিকেটের জন্য অযোগ্য। ঠিকমতো বাছাই করা গেলে যথাযথ গাইডেন্স এবং প্রশিক্ষণ পেলে তারাও সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। এমনিতেই ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ ভারতে চলে আসার পর থেকে এ খেলায় বুকার বা জুয়াড়িদের রামরাজত্ব কায়েম হয়েছে। তারাই বাজির অবস্থা বুঝে কাউকে জেতায় কাউকে হারায়। ক্রিকেট এখন আর শুধু খেলামাত্র নেই, হয়ে ওঠেছে বাণিজ্য। জুয়াড়িদের টাকা কামানোর হাতিয়ার। তাদের ঠিক করে দেওয়া ফলাফলে হঠাৎ হঠাৎ কোনো খেলায় জিতে মনে করার কারণ নেই আমরা একটা কিছু হয়ে গেছি। আমরা দর্শক সাপোর্টার এবং খেলোয়াড়রা এই ভুলটাই করে থাকি। টাইগার টাইগার বলে তুনুতুনু করতে করতে ছেলেগুলোকে সাত আসমানে তুলে ফেলেছি। কিন্তু এই বিশ্বকাপে বুঝতে পারেনি খেলা জুয়াড়িদের হাতে নেই। অনেকে বলেন, এবারের মতো বাজে পারফরমেন্স তারা আগে কখনো করেনি। পরপর পাঁচটা ম্যাচে হার! আমি অবাক হইনি। কারণ এতোটুকুই তাদের যোগ্যতা। তারপরও মনে করি তাদের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা সম্ভব। এ কাজে সবচেয়ে বড় বাধা দেশের ক্রিকেট বোর্ড। প্রথমত: রাজনীতি তারপর দলীয়করণ। তৃতীয়ত: লুটপাট এবং সর্বশেষ সরকারি ছত্রচ্ছায়ায় একটি চিহ্নিত সিন্ডিকেটের মৌরসীপাট্টা কায়েম। এই চক্রটিই দেশীয় ক্রিকেটের যা কিছু ছিলো ধ্বংস করে দিয়েছে। এখান থেকে ওঠে আসা খুব কঠিন। ধরে নেওয়া যায় পাপন নামের একটি অভিশাপ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কেয়ামত পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওপর সওয়ার হয়ে থাকবে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে জুয়াড়িদের বদৌলতে মাঝে মাঝে কোনো খেলায় জয় পেলেও বাংলাদেশ টিম কখনোই পেশাদারিত্ব অর্জন করতে পারবে না, সত্যিকারের টিম হয়ে গড়ে ওঠতে পারবে না।

বি:দ্র:- ভক্তদের প্রতি অনুরোধ- টাইগার টাইগার বলে আর আদিখ্যেতা দেখাবেন না, আশকারা দেবেন না, বাংলার গর্ব রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে আর বেইজ্জতি করবেন না। Saeed Tarek-র ফেসবুক ওয়ালে লেখাটি পড়ুন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়