মনিরুল ইসলাম: [২] আশুলিয়া থেকে অনেক কষ্ট করে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর এসেছেন নজরুল নামে ভদ্রলোক। সাথে তার পরিবার। যাবেন রামপুরা মহানগর প্রজেক্টে আত্বীয় বাড়ি বেড়াতে। এসে দেখেন গণপরিবহন বন্ধ। কোন বাস- মিনিবাস চলছে না। বাধ্য হয়ে সিএনজিতে আসতে চাইলেন রামপুরা। ভাড়া চাইলো চালক ৪৫০ টাকা। শুত্রুবার। ছুটির দিন। বেড়াতে বের হয়ে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
[৩] অনেক ঘুরাঘুরি করে সিএনজি ভাড়া উচ্চমূল্য হাঁকায় ফিরে গেলেন আবার আশুলিয়ায়।
[৪] তার সাথে কথা বলতে চাইলে ক্ষোভে নজরুল (৫০) জানালেন, কি করে যাবা গন্তব্যে। ভাড়া বেশি। হঠাৎ পরিবহন বন্ধ। কোনো আগাম ঘোষণা নেই। আমাদের সাধারণ মানুষের কথা কেউ ভাবে না। এভাবে পরিবারের লোকজন নিয়ে এসে ভোগান্তিতে পড়তে হবে বুঝিনি।
[৫] এদিকে, কিছু মনে করবেন না। কথা বলার সময়ই নেই। সকাল ১০টায় আগারগাঁওয়ে নিয়োগ পরীক্ষা দিতে যেতে হবে, কিন্তু বাস তো বন্ধ। এখন সিএনজি, মোটরসাইকেল ও রিকশাচালকরা ভাড়া দ্বিগুণ চাইছেন। ২৫ টাকার ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। সময়মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানো নিয়ে চিন্তায় আছি। এই হলো শুত্রুবারের সকালের চিত্র রাজধানীতে।
[৬] শুক্রবার সকাল পৌনে ৯টায় রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে যানবাহনের অপেক্ষায় ছিলেন লালবাগের বাসিন্দা জহির । পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কিছুটা বিরক্ত হন। বলেন কথা কি হবে। আমাদের অসুবিধার কথা কে শুনবে।
[৭] সকাল থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী, চাকরিপ্রার্থী এবং সাধারণ মানুষ বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছাতে রাস্তায় নামেন।
[৮] সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। বাসস্ট্যান্ডগুলোতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভাড়াচালিত মোটরসাইকলে এবং রিকশাচালকরা দাঁড়িয়ে আছেন। যানবাহনের তুলনায় যাত্রী বেশি হওয়ায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি ভাড়া চাইছেন তারা।
[৯] সিএনজিচালক নাসির বেশি ভাড়া চাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, যাত্রীরা বাস ভাড়ার সঙ্গে সিএনজির ভাড়ার তুলনা করছেন। এটা তো হয় না। তার ওপর আজ ধর্মঘট।
[১০] হায়াত মাহমুদ নামে একজন উবার বাইক চালক বলেন, সকাল থেকে ভালো আয় হচ্ছে। আজ ভাড়াও একটু বেশি নেওয়া হচ্ছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীদের প্রথম পছন্দ মোটর বাইক।
[১১] বুধবার (৩ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করেছে সরকার। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) পরিবহন খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে ভাড়া বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
[১২] তবে এ বিষয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ ঘোষণা ছাড়াই শুক্রবার সকাল থেকে চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট।
[১৩] তবে তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।