আনোয়ার হোসেন: [২] এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এঅবস্থায় চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেনা দলটি। দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ না নিলেও নির্বাচনী মাঠে থাকতে ভিন্ন কৌশল নিয়েছে দলটি। দলের অনেক নেতাই স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন।
[৩] বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে। ১ অক্টোবর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না নেওয়ার সিদ্ধার্ন্তটি জোড়ালোভাবে জানিয়ে দেন। কিন্তু তার জেলাতেই বিএনপির নেতাকর্মীরা কেন্দ্রের সিদ্ধার্ন্ত অমান্য করে কৌশলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
[৪] দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি-জামায়াত অংশ না নিলেও ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলায় দল দুটির একাধিক নেতা-কর্মী চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের পরাজিত করতে মাঠে নেমেছেন তাঁরা। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী একাধিক প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে নামায় বিএনপির অবস্থান অনুকূল বলে অনেকে মন্তব্য করছেন।
[৫] রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলার ১১টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বাইরেও রয়েছেন একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. হামিদুর রহমান। তবে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মাস্টার। একই চিত্র অন্য ইউপিগুলোতেও।
[৬] হরিপুর উপজেলার ৬টি ইউপিতে বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থীরা হলেন- গেদুরা ইউপিতে বিএনপির ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি জাহেরুল ইসলাম, জেলা কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম ও ইউনিয়ন কমিটির অন্যতম নেতা ইমরান। আমগাঁও ইউপিতে হরিপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন।
[৭] বকুয়া ইউপিতে বিএনপির উপজেলা কমিটির সদস্য আবুল কাশেম বর্ষা। ডাঙ্গীপাড়া ইউপিতে লড়েছেন বিএনপি নেতা আহসান হাবিব চৌধুরি ও উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। হরিপুর ইউপিতে লড়ছেন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও বিএনপি নেতা বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মংলা। ভাতুরিয়া ইউপিতে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক করিমুল ইসলাম চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একই ইউপিতে বিএনপির পেছনে জামায়াতও নির্বাচনে পিছিয়ে নেই। সমানতালে জামায়াত নেতা রফিজুল ইসলাম ও আব্দুর রাজ্জাক চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছেন।
[৮] অপরদিকে, রানীশংকৈল উপজেলার ৮ ইউপির মধ্যে ৫ টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাকি ৩টি ইউপিতে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বভারের মেয়াদ শেষ না হওয়ায় ওই ইউপিগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। বর্তমানে ৫টি ইউপিতে নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীর অংশগ্রহণে নির্বাচনী পরিবেশ সরগরম হয়ে উঠেছে। বিএনপির রাজনৈতিক জুটি জামায়াত নেতা নেকমরদ ইউপিতে কাজী মাকসুদুর রহমান ও ধর্মগড় ইউনিয়নে জামায়াতের লোকমান আলী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। তবে ধর্মগড় ইউপিতে আওয়ামী লীগের দুজন বিদ্রোহী থাকাতে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে জামায়াত সমর্থিত এই প্রার্থী। এ উপজেলার রাতোর ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শরৎ চন্দ্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নেমেছেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আখতার হোসেন।
[৯] হরিপুরের বকুয়া ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্য ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাসেম। তিনি বলেন দেশে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা একেবারেই শুন্যের কোঠায় । এ অবস্হায় নির্বাচন করলেও আমাদের জয়ী প্রায় নিশ্চিত। এ সুযোগ ছেড়ে দেব কেন ?
[১০ এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন বলেন, ‘আমরা কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেয়নি।’
[১১] জেলা বিএনপি সভাপতি তৈমুর রহমান বলেন স্হায়ীভাবে বিএনপির কেউ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে কিনা, তা জানা নেই। আর নির্বাচন করলেও এটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধার্ন্ত।