শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ০১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৪৭ দুপুর
আপডেট : ০১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৪৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দস্যুদের উৎপাতমুক্ত সুন্দরবন

ডেস্ক রিপোর্ট: দস্যুমুক্ত নিরাপদ স্থান সুন্দরবনে পর্যটকদের ভিড় বছর বছরজুড়েই থাকে। সেখানে অপহরণ-হত্যার ঘটনা এখন আর শোনাই যায় না। জেলেদের কষ্টার্জিত উপার্জনের ভাগও এখন কাউকে দিতে হচ্ছে না। বন্যপ্রাণী, মাওয়ালি, বাওয়ালি ও বনজীবী ছাড়াও পর্যটক নির্বিঘ্নে সুন্দরবনে ভ্রমণ করতে পারছেন। অর্থনৈতিক গতিশীলতায় ব্যাপক প্রাণের সঞ্চার হয়েছে বনে। আর এসব সম্ভব হয়েছে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী পরিকল্পনা থেকে। ৪২৬টি অস্ত্র ও বিপুল গোলাবারুদসহ এখন পর্যন্ত সুন্দবনের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৪ জন সদস্য র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। সুন্দরবন সম্পূর্ণরূপে জলদস্যু মুক্ত হয়েছে। এধারা বজায় রাখতে র‌্যাবের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত আছে। ইত্তেফাক

সুন্দরবন দস্যুমুক্ত দিবসের তিন বছর পূর্তি আজ। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ খ্যাত পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এ বনাঞ্চলটিকে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর দস্যুমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সময় থেকেই এ দিনটি দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে র‌্যাব। প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা, দিকনির্দেশনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও র‌্যাবের কর্মতৎপরতায় দস্যুমুক্ত হয় সুন্দরবন। এই সাফল্য অর্জনে র‌্যাব পেয়েছে দেশবাসীর আকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসা। সুন্দরবনের বিস্তৃতি দেশের পাঁচটি জেলায়। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই বন বাংলাদেশের ঢাল। বুক চিতিয়ে সে ঠেকিয়ে দেয় মহাবিপদ! বঙ্গোপসাগরঘেঁষা উপকূলীয় বহু মানুষের জীবন-জীবিকা এই বন ঘিরে। একসময় জলদস্যুর হানা দিয়েছিল এসব মানুষের কাছে জমের মতো। র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় সেই বন এখন দস্যুমুক্ত, যা বন ঘিরে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।

২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তৎকালীন র‌্যাব ডিজিকে প্রধান সমন্বয়কারী করে টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে গোড়াপত্তন ঘটে সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার। প্রথম দিকে এ কার্যক্রমে ধীর গতি থাকলেও ২০১৫ সালে বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার পর সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করার কার্যক্রম জোরালোভাবে শুরু হয়। ড. বেনজীর আহমেদ খুলনা ও কক্সবাজারে দুই দফা মিটিং করে অপারেশন শুরু করা হয়। তখন থেকেই র‌্যাবে বিভিন্ন ইউনিটের জোরালো অভিযানে কোনঠাসা হয়ে পড়ে দস্যুরা। ওই সময় ক্রসফায়ারে শতাধিক বনদুস্য নিহত হন, গ্রেফতার হয় প্রায় দেড় হাজার দস্যু। এক বছরের মধ্যে দস্যুমুক্ত করা হয় সুন্দরবন। এক পর্যায়ে ফেরারি জীবনের অবসান ঘটিয়ে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয় দস্যুরা। প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণার পর থেকেই র‌্যাব এ সাফল্য ধরে রেখেছে। একই সঙ্গে পুলিশের মনিটরিং কার্যক্রমও অব্যাহত আছে। আত্মসমর্পনকারী দস্যুরা যে পেশায় যেতে চেয়েছে, তাদের সেই পেশায় পুনর্বাসন করা হয়েছে। আত্মসমর্পণকারীরা যেন স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে বা পুনরায় বিপথে পা না বাড়ায় সেজন্য সরকারের পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা করাসহ নজরদারি কার্যক্রম চলমান রেখেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সুন্দরবনের দুর্গম এলাকা দুবলারচরে ও মুন্সীগঞ্জে র‌্যাবের দুটি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সেসব স্থানে নিয়মিত সব ধরনের টহল চালু রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী হেলিকপ্টারেও টহল দিচ্ছে র‌্যাব। র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।

র‌্যাবের দৃঢ়তা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। গত তিন বছরে তেমন কোন ঘটনা সুন্দরবনে ঘটেনি। এ কারণে সুন্দরবনে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে। করোনার মধ্যেও পর্যটকদের ভিড় ছিল সুন্দরবনে। অনেকে স্বপরিবারে ও পিকনিকে জাহাজ কিংবা লঞ্চে সুন্দরবনে গিয়ে দুই/তিন রাত থাকছেন। এখন আর কারোর মধ্যে নেই কোনো আতঙ্ক।

প্রধানমন্ত্রী ও এক্সিম ব্যাংকের টাকা দিয়ে আত্মসমর্পনকারী দস্যুদের আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। সরকার প্রত্যেককে ১ লাখ টাকার অনুদান সহায়তা দিয়েছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকেও আর্থিক অনুদানসহ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া প্রত্যেককে একটি করে মোবাইল ফোন দিয়েছে, যাতে ওই ফোন দিয়ে তারা নিয়মিত র‌্যাবের সাথে যোগাযোগ করে। আত্মসমর্পনকারীদের মধ্যে ঈদের সময় মুসলমানদের ও পূজার সময় হিন্দুদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করছে র‌্যাব। সম্প্রতি আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের কার কি প্রয়োজন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ আত্মসমর্পণকারী দস্যুদের ১০২টি ঘর, জিনিসপত্রসহ ৯০টি মুদি দোকান, ১২টি জাল মাছ ধরার নৌকা, ৮টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ২২৮টি গবাদিপশু তাদের সহায়তার জন্য দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত দিবসের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ রামপাল উপজেলা কমপ্লেক্স মাঠে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাতি মো. শামসুল হক টুকু, পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদসহ স্থানীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ। সভাপতিত্ব করবেন র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন।

আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার বাস্তবায়ন হয়েছে। সুন্দরবন এখন দস্যুমুক্ত নিরাপদ স্থান। সকলে নিরাপদে সুন্দরবন ভ্রমণে যেতে পারছেন। দর্শণার্থীদের ভিড় আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, সুন্দরবনে র‌্যাবের পাশাপাশি পুলিশসহ মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যেসব দস্যু আত্মসমর্পন করেছে তাদের ঈদ-পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়।

র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, সুন্দরবনে কোন দস্যু মাথা চাড়া দেওয়ার চেষ্টা করলেই মুহূর্তের মধ্যে সেখানে র‌্যাব উপস্থিত হয়ে যায়। র‌্যাব সার্বক্ষণিক সব মনিটরিং করছে। সুন্দরবন দস্যুমুক্ত নিরাপদ স্থান হওয়ায় দর্শণার্থীদের ভিড় বাড়ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়