শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ০২:৪৩ রাত
আপডেট : ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ০২:৪৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: গ্লোবাল ট্যালেন্ট কম্পিটিটিভ ইনডেক্সে তলানিতে কেন বাংলাদেশ?

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
‘প্রাথমিক স্কুলে আমার ক্লাসমেট ছিলো হাতেম আলী ও ইদ্রিস। হাতেম আলী ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত ক্লাসে প্রথম ছিলো আর ইদ্রিস ছিলো দ্বিতীয় অর্থাৎ রোল দুই। ক্লাস ফাইভের পর তারা হাইস্কুলে চলে যায় এবং যথারীতি আগের মতো সেখানেও ফার্স্ট প্রথম দ্বিতীয় ছিলো। ক্লাস এইটের পর ইদ্রিসের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় আর হাতেম আলীর বন্ধ হয় ক্লাস টেন থেকে। ক্লাসে কেবল রোল নম্বর ১ এবং ২ ছিলো তাও নয়। প্রকৃতার্থে ব্রিলিয়ান্ট ছিলো। সেই হাতেম আলী ও ইদ্রিসের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে অর্থনৈতিক অভাবের কারণে।’ রশীদ মোহাম্মদ মামুনুর নামে আমার এক ফেসবুক বন্ধু এ রকম একটি পোস্ট দিয়েছিলো কিছুদিন আগে। লেখাটা আমার মনে দাগ কেটেছে। একবার ভাবুনতো এই একই রকম অভিজ্ঞতা কি আমাদের অধিকাংশের জীবনে ঘটেনি? আমি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ি তখন ‘নাগার্সি বাড়ি’ বলে খ্যাত একটি ছোট পাড়া ছিলো। তাদের পেশা হলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাদ্য বাজানো। সেই পাড়ার একটি ছেলের কথা এখনো মনে পড়ে। সে ছিলো খুবই মেধাবী। ওই স্কুল ত্যাগের পরে তাকে আর কোনোদিন দেখিনি। শুনেছি সেও তাদের পৈতৃক পেশায় যোগ দিয়েছে। হাইস্কুলে গিয়েও একটি ছেলে পেয়েছিলাম। সে ক্লাসের প্রথম ছিলো না কিন্তু তাকে সাংঘাতিক মেধাবী মনে হতো। সে স্কুলেও পড়তো একই সঙ্গে ছোট একটি মুদি দোকানে কাজও করতো। বিশ^বিদ্যালয়ে এসেও মেধার অপচয় ঘটতে দেখেছি। কিন্তু সেটা অর্থনৈতিক কারণে যতোটা না তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক কারণে।

এমনও দেখেছি যে গ্রাম থেকে খুবই ভালো রেজাল্ট করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই খ্যাতিমান বিভাগে ভর্তি হয়। দেখতে এবং পড়াশোনায় খুবই চৌকস ছিলো। কিন্তু তখন এরশাদের ছাত্র সংগঠনে কর্মী হয়। তারপরের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। সম্ভবত অনার্স পাস হয়নি হলেও ফলাফল খুবই খারাপ। বেশ কয়েক বছর আগে তাকে তিন নেতার মাজারের সামনে শুয়ে থাকতে দেখেছি। আমার ধারণা এ রকম উদাহরণ বাংলাদেশের প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী দিতে পারবে। হ্যাঁ, এভাবেই প্রতিবছর কেউ অর্থাভাবে কেউ রাজনীতির চোরাগুপ্তার শিকার হয়ে অসংখ্য মেধাবীর মেধার মৃত্যু ঘটছে কিন্তু কেউ খেয়াল করে দেখছে না।

রাষ্ট্র যারা চালায় এবং যাদের মাধ্যমে চালায় সেই প্রশাসনের লোকজনদের দায়িত্ব হলো মেধার মৃত্যু ঠেকানো। তারা ঠেকাবে কী উল্টো মেধার মৃত্যু ত্বরান্বিত করে। রাষ্ট্রের উচিত এই মেধাবীদের দায়িত্ব নেওয়া। স্কুলের শিক্ষকদের মাধ্যমে এই মেধাবীদের চিহ্নিত করে অর্থের কারণে যাতে কারও মেধার মৃত্যু না ঘটে তা নিশ্চিত করা। উচিত হলো রাষ্ট্র তাদের দায়িত্ব নিয়ে নেবে যা হবে ৎবহবধিনষব! ভালো করতে থাকলে এই দায়িত্ব চলবে আর না হলে বন্ধ হয়ে যাবে। এই সাহায্যটা ঋণও হতে পারে। শিক্ষার্থী যখন স্বাবলম্বী হবে কিস্তিতে সেই ঋণ পরিশোধ করবে যেন ভবিষ্যতে এই ঋণ অন্য কাউকে দেওয়া যায়। রাষ্ট্র যারা চালায় তাদের উচিত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার এমন পরিবেশ নিশ্চিত করা যাতে পরিবেশের কারণে কারও মেধা হত্যা না হয়। অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখি রাজনীতির নামে শিক্ষার্থীদের ওপর জোরাজুরি, টর্চার সেল ইত্যাদি থাকতে। এর মধ্যে অনেকের আবার আর্থিক কারণেও পড়াশোনা ব্যাহত হয়। তাদের জন্য বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এসব করবে কী? আমরাতো বরং উল্টো জিনিস করি। এমনি এমনি কী আর বাংলাদেশ গ্লোবাল ট্যালেন্ট কম্পিটিটিভ ইনডেক্সে দক্ষিণ এশিয়ারও তলানিতে। লেখক : শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়