শিরোনাম
◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর, ২০২১, ০১:৫৬ রাত
আপডেট : ২৭ অক্টোবর, ২০২১, ০১:৫৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তদের হাতে মিয়ানমারের সিম ও শক্তিশালী ওয়াকিটকি

নিউজ ডেস্ক: কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ সংঘটনে মোবাইল নেটওয়ার্কের পরিবর্তে ওয়াকিটকি ব্যবহার করছে রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তরা। এসব কারণে অপরাধ হলেও অপরাধীদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ ও ছয় ছাত্র-শিক্ষক হত্যার পর রোহিঙ্গাদের অপরাধের কৌশল ও ধরন দেখে বিস্মিত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রশ্ন উঠেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এত কঠোর নজরদারির মধ্যেও রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তরা কীভাবে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে? ইত্তেফাক

রোহিঙ্গাদের অপরাধের কৌশল সম্পর্কে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রথমত অপরাধ সংঘটনে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্কের সিম ব্যবহার করছে। সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের কয়েকটি মোবাইল ফোন অপারেটরের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে অপরাধীরা মিয়ানমারের সেসব সিম ব্যবহার করছে। আবার ক্যাম্পে অপরাধকাণ্ডে রোহিঙ্গা অপরাধীরা ব্যবহার করছে নিজস্ব ওয়াকিটকি। মোবাইলের পরিবর্তে নির্দিষ্ট দূরত্বের জন্য অপরাধীরা শক্তিশালী ওয়াকিটকি ব্যবহার করার ফলে অনেক সময় অপরাধীদের পরিকল্পনা ও হামলার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অগোচরে থাকছে।

রোহিঙ্গা নেতা হামিদ উল্লাহ জানান, অসংখ্য রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তের হাতে ওয়াকিটকি রয়েছে। যে কোনো অপরাধের আগে যোগাযোগ রক্ষায় এসব ওয়াকিটকির ব্যবহার করে তারা। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মোবাইল ফোনের সিগন্যাল অনেক সময় ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায় না। সেসব এলাকায় ওয়াকিটকি-ই যোগাযোগের মুখ্য মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এসব ওয়াকিটকি ও মিয়ানমারের মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ক্যাম্পে অপরাধীদের সংযোগ অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করেন রোহিঙ্গা এ নেতা।

একটি সূত্র দাবি করেছে, সর্বশেষ রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ ও ছয় ছাত্র-শিক্ষক খুনের ঘটনায় ওয়াকিটকির মাধ্যমে নিজেদের মাঝে যোগাযোগ রক্ষা করেছে হত্যাকারীরা। এ কারণে ঘটনার পর অপরাধী শনাক্তে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্যবহৃত নেটওয়ার্ক ট্র্যাকিংয়ের আওতায় আনা হলেও কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। তবে কারা এসব ওয়াকিটকি অপরাধীদের মাঝে সরবরাহ করছে তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে বলে জানিয়েছে ক্যাম্প সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, কক্সবাজার র‍্যাব-১৫-এর একটি দলের হাতে গত ৪ জুলাই কক্সবাজার লিংক রোড এলাকা থেকে আটটি ওয়াকিটকিসহ দুই রোহিঙ্গা গ্রেফতার হয়। এরা এসব ওয়াকিটকি ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছিল বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছিল। এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযানে বেশ কিছু ওয়াকিটকি উদ্ধার হয়েছে বলে ক্যাম্পে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানিয়েছে। এসব যোগাযোগমাধ্যমের কারণে রোহিঙ্গা অপরাধীদের অপরাধ ও অবস্থান নিশ্চিত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে বলে মনে করেন ওয়াকিবহাল মহল।

আশ্রয় পাবার চার বছরে নিজেরা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়া থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসা, চুরি, ডাকাতি, খুন, অপহরণ, মানব পাচার এবং ধর্ষণসহ ১২ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ। জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে গেল ৪৯ মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘর্ষের ঘটনায় ২৩৪ জন নিহত হয়েছে। মামলা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩০১টি। এতে আসামি হয়েছে ২ হাজার ৯৪৫ রোহিঙ্গা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোহিঙ্গাদের অনেক নেতা জানিয়েছেন, বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অবস্থা এমন যে, দিনে বাংলাদেশ সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করলেও রাতে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় পুরো ক্যাম্প। ক্যাম্প সূত্রমতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কথিত ‘আরসা’, ‘আল ইয়াকিন’ ছাড়াও ১৪টি অপরাধী দল সক্রিয় রয়েছে। এসব অপরাধী দলের নেতৃত্বে চলে মাদক ব্যবসা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তারে সশস্ত্র মহড়া, অপহরণ, মানব পাচার ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ। তাদের ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না সাধারণ রোহিঙ্গারা।

ক্যাম্পে রোহিঙ্গা অপরাধীদের ওয়াকিটকি ব্যবহার বিষয়ে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন-১৪) অধিনায়ক (এসপি) মো. নাইমুল হক বলেন, অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে বাংলাদেশি নেটওয়ার্কের পরিবর্তে ভিন্ন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে থাকে। এ কারণে তাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া কষ্টসাধ্য।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, দুর্বৃত্তরা অপরাধকর্মকাণ্ড ঘটানোর ক্ষেত্রে ওয়াকিটকি ও মিয়ানমারের নেটওয়ার্কে এমপিটি সিম ব্যবহার করছে বলে জানা যাচ্ছে। এসব কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়ে কাজ চলছে। এরই মধ্যে ক্যাম্পে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থাকে এ নিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সামনে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পে কর্মরত সব সংস্থার সমন্বয় বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়