মাহফুজুর রহমান: ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার ১৩৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিজিটাল হাজিরার জন্য বসানো বায়োমেট্রিক মেশিন নষ্ট হওয়ার পথে। প্রতিটা বিদ্যালয়ের বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার সময়ে নিম্নমানের হওয়ায় এবং দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার ফলে মেশিন এখন নষ্ট হতে চলেছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৬২০টি। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্লিপ প্রকল্প থেকে যন্ত্রটি কেনা বাবদ ব্যয় নির্বাহ করা হবে এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্বে যন্ত্রটি কিনে নেবে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তর কর্তৃক বিভিন্ন পত্রের মাধ্যমে একাধিক নির্দেশনা দেয়া হয় মাঠপর্যায়ে।
এ কার্যক্রম মনিটর করার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিভাগীয় উপ-পরিচালক আহ্বায়ক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সদস্য ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান, আমাদের উপজেলাতে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে পূর্ণ মেশিন সেট আপ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে দেয়া বিলপত্রে ডিভাইস, ডোমেইন, হোস্টিং, সিম ও বিভিন্ন ইস্যুতে অর্ধেক টাকাই নয়ছয় ব্যয় দেখানো হয়েছে। অথচ বিবরণীর অনেক কিছুই এখনও বিদ্যালয়গুলি বুঝে পায়নি। ইন্টারনেট বাবদ বাৎসরিক চার্জও নেয়া হয়েছে বিদ্যালয় থেকে। অথচ ইন্টারনেট সংযোগই দেয়া হয়নি।
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর একাধিক প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, উপজেলার সব বিদ্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনা হয়েছে। অধিকাংশ বিদ্যালয়ের হাজিরা মেশিন নষ্ট হওয়ার পথে।
হরিণাকুন্ডু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান বলেন, করোনায় দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ব্যবহার না করায় নষ্ট হয়েছে কিনা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে বলা যাবে। তবে নষ্ট হয়ে গেলে হাজার হাজার টাকার ক্ষতি হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৯০৭টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের হাজিরার জন্য বায়োমেট্রিক ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপন করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় হাজিরা মেশিনগুলো কি অবস্থায় আছে তা বিদ্যালয়ে না গিয়ে বলা যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, বায়োমেট্রিক ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনা হয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকায়। ঝিনাইদহের ৬টি উপজেলার ৯০৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্লিপ প্রকল্পের টাকা দিয়ে এ মেশিন কেনা হয়েছে।