শিরোনাম
◈ পঞ্চগড় এক্স‌প্রেস ট্রেনের ব‌গি চার ঘণ্টা পর উদ্ধার, ট্রেন চলাচল স্বাভা‌বিক ◈ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা ◈ সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকার টু শব্দ করার সাহস পাচ্ছে না: বিএনপি ◈ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে সোমালিয় পুলিশ ও বহুজাতিক নৌবাহিনী ◈ জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ডিবিতে অভিযোগ করলেন জবি ছাত্রী ◈ ঈদের পর কাওরান বাজার যাবে গাবতলীতে: মেয়র আতিক ◈ আবদুল্লাহ জাহাজে থাকা কয়লায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেই: এস আর শিপিং ◈ পাপেট সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত সব নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ বলবে যুক্তরাষ্ট্র: জয়  ◈ চট্টগ্রামের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হতে তিন দিন লাগতে পারে: রেল সচিব ◈ তামিম ও রিশাদ ঝড়ে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ২৬ অক্টোবর, ২০২১, ০১:২৮ রাত
আপডেট : ২৬ অক্টোবর, ২০২১, ০১:২৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ফয়জুল লতিফ চৌধুরী: দূর থেকে দেখা প্রিয় মানুষ নাঈমুল ইসলাম খান

ফয়জুল লতিফ চৌধুরী
শৈশবের কথা বলিতেছি। আমাদের বাড়িতে বাংলাদেশ অবজার্ভার পত্রিকা আসিত। প্রতিদিন বৈকালে এক অনতিবয়স্ক মৌলভী সাহেব লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরিয়া সাইকেল চালাইয়া পত্রিকা বিলি করিতে আসিতেন। মাতামহের গৃহ অদূরেই। তিনি রাখিতেন দৈনিক আজাদ পত্রিকা।

দৈনিক ইত্তেফাকসহ অন্যান্য পত্রিকার সহিত পরিচয় হইয়াছিল ১৯৬২ সালের ২৮ এপ্রিল। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক প্রয়াত হইয়াছেন আগের দিন। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের জন্য ইহা ছিল বড় দুঃখের খবর। হকারের জন্য অপেক্ষা না করিয়া পরবর্তী দিবসের প্রাতে পিতা রেলস্টেশনে গমন করিলেন পত্রিকা আনিতে। দ্রতযান এক্সপ্রেস পূর্বাহ্ন সাড়ে দশটা-এগোরাটার দিকে ঢাকা হইতে ময়মনসিংহ আসিত। প্ল্যাটফর্মে একখানি বুক স্টল ছিল। সেইস্থান হইতে পিতা সকল বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা ক্রয় করিলেন। গৃহে অনেকগুলি পত্রিকা আসিল। অনুমান করি, সেই সব পত্রিকার মধ্যে দৈনিক পাকিস্তান, ইত্তেফাক, সংবাদ, পয়গাম, মর্নিং নিউজ ইত্যাদি পত্রিকা ছিল। মোহাম্মদ মোদাব্বের খ্যাত দৈনিক মিল্লাত ১৯৬২ নাগাদ বন্ধ হইয়া গিয়া না থাকিলে অনুমান করি তাহাও সেই দিন এক নজর দেখিয়া থাকিব।

বয়স বাড়িলে স্কুলের উচ্চ ক্লাসে উঠিয়া বাংলাদেশ অবজার্ভার ঘড়ি ধরিয়া দশ মিনিট হইলেও পাঠ করিতে হইত, যাহাতে ইংরাজিটা কিঞ্চিৎ শিক্ষা করা যায়। ১৯৭১ এ বাংলাদেশ স্বাধীন হইল। বাংলাদেশ অবজার্ভারের সহিত একটি বাংলা পত্রিকাও রাখা শুরু হইল। কখনো ইত্তেফাক, কখনো সংবাদ। কিছুদিন দৈনিক গণকণ্ঠ ও জনপদ রাখা হইল। কিছুদিন রাখা হইল নবপ্রকাশিত দৈনিক বঙ্গবার্তা। দুঃখের বিষয়, মওলানা ভাসানীর আশীর্বাদপুষ্ট ও ফয়েজ আহমেদের সম্পাদনায় প্রকাশিত এই দৈনিক দীর্ঘায়ু লাভ করে নাই। নিয়মিত-অনিয়মিতভাবে দৈনিক ইত্তেফাক ও সংবাদপাঠের অভ্যাস গড়িয়া উঠিল। ছোটদের সাহিত্যের পাতা চাঁদের হাট-এ লিখিতে শুরু করিয়াছি। অতএব শুক্রবার প্রাতে রেলস্টেশনে গিয়া দৈনিক ‘পূর্বদেশ’ একখানা লইয়া আসি। ১৯৭৫-এ দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক বাংলা বাদে সকল পত্রিকা বন্ধ করিয়া দেওয়া হইল। এই সময়টাতে দৈনিক বাংলা বেশি পড়া হইল।

স্কুলের গ অতিক্রম করিয়া কলেজে ভর্তি হইবার পরে দৈনিক পত্রিকার আগ্রহী পাঠকে পরিণত হইলাম। লক্ষ্য করিলাম, সমসাময়িক বিষয় লইয়া এনায়েতুল্লাহ খানের সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকায় যে রূপ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, দৈনিক পত্রিকাগুলি সেইরূপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে না। ইত্তেফাক ও সংবাদ-এর উপসম্পাদকীয় রচনাগুলি যেন দেশ ও সমাজের অনেক সমস্যা এড়াইয়া চলিবার অলিখিত নীতি অনুসরণ করিত। এইভাবেই বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগৎ একমনে চেনা পথ ধরিয়া হাঁটিতেছিল, যতোদিন না ১৯৯১-এর সেপ্টেম্বরে ‘আজকের কাগজ’ পত্রিকাটি প্রকাশিত হইল।

‘আজকের কাগজ’ বাংলাদেশে দৈনিক সংবাদপত্রের ধারণা পরিবর্তন করিয়া দিল। ইহাতে বিষয়বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটিল কেবল তাহাই নহে, রচনার দৃষ্টিভঙ্গিতে ও সাজসজ্জায় ‘আজকের কাগজ’ বিমোহিত করিল। অনুভ‚ত হইল বাংলাদেশের সংবাদপত্র এক শতাব্দী পরে নতুন এক জগতে প্রবেশ করিয়াছে। ইহা আধুনিক। ইহা পাঠক সংবেদী। ইহা চৌকস। দৈনিক পত্রিকা দূরের জিনিস হইতে রাতারাতি আপনজন হইয়া উঠিল। যিনি এই বিপ্লব ঘটাইলেন,তাহার নাম নাঈমুল ইসলাম খান।

নাঈমুল ইসলাম খান দূর হইতে দেখা আমার প্রিয় ব্যক্তি। তাহার সহিত সাম্প্রতিককালে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাইয়াছে, কিন্তু ঘনিষ্ঠতা হয় নাই। জীবনের একটা পর্যায় পার হইয়া গেলে মানুষ মানুষের অন্তরঙ্গ হইয়া উঠিতে পারে না। সম্পর্কগুলি সৌজন্যের নির্মোকে সুসজ্জিত হইয়া থাকে বটে, কিন্তু তাহাতে দূরত্বের একটি আবহ প্রচ্ছন্ন থাকিয়া যায়। তবে ইহাতে সামাজিকতার ক্ষতিবৃদ্ধি হয় না, কেবল অনাবশ্যক যোগাযোগের ছুতা খুঁজিয়া পাওয়া যায় না।

‘মানবজমিন’ পত্রিকাটি আমি নিয়মিত পাঠ করি। ইহার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী যৌবনে রিপোর্টার ছিলেন। সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী জানিতেন পত্রিকা-পাঠক কী পাঠ করিতে চাহেন। সেই দৃষ্টিকোণ হইতে তিনি পত্রিকা সাজাইতেন। নাঈমুল ইসলাম খানের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ব্যতিক্রমী। বলা যায় হড়ৎসধঃরাব- তিনি ভাবিতেন একটি আধুনিককালের দৈনিক পত্রিকা কীরূপ হওয়া উচিত। এই ভাবনার ওপর ভিত্তি করিয়া তিনি পত্রিকার পরিকল্পনা করিতেন। তিনিই মান নির্ধারণ করিয়া দিতেন। সবাই তাহাকে অনুসরণের চেষ্টা করিত।

অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের সদৃশ পত্রিকাও একটি ভোগ্যপণ্য। পার্থক্য হইল প্রতিদিন দিবাভাগে ইহার ‘প্রোডাক্ট ডিজাইন’ করিতে হয়, সন্ধ্যায় সকল রসদপত্র কারখানায় (ছাপাখানায়) পাঠাইতে হয়, রাতভর ইহার প্রোডাকশন চলে, ভোরের মধ্যে বিপণন সমাধা করিতে হয়। অপরাহ্ন নাগাদ ইহা মেয়াদোত্তীর্ণ হইয়া যায়। এমন আর কোনো পণ্য নাই যাহার ডিজাইন প্রতিদিন নতুন করিয়া করিতে হয়। যাহার গুণাগুণ ক্রেতার চোখে প্রতিদিন নতুন করিয়া পরীক্ষিত হইয়া থাকে। পত্রিকার ভোক্তা গৎবাঁধা বিষয়ের পরিবর্তে নতুন নতুন বিষয় আকাক্সক্ষা করে। নাঈমুল ইসলাম খান এই বিষয়টি সম্যক অনুধাবন করিতে পারিয়াছিলেন। তিনি উপলব্ধি করিয়াছিলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী কুড়ি বৎসরে বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ব্যাপক উত্থান ঘটিয়াছে। ইহারা ভোগবাদী। ইহারা বৈচিত্র্যের অনুগত। ইহারা ক্রয়ক্ষমতায় সমৃদ্ধ। সেইহেতু দৈনিক পত্রিকারও দায় ঠেকিয়াছে প্রতিদিন সূর্যোদয়ে দৃশ্যমান অভিনবত্ব লইয়া প্রাতঃরাশের টেবিলে পৌঁছাইবার। নাঈমুল ইসলাম খানের সৃজনশীল মনন এই দায় মিটাইতে প্রভ‚ত সহায়তা করিয়াছে।

অতঃপর দৃষ্টির অলক্ষ্যে নাঈমুল ইসলাম খান ‘আজকের কাগজ’ ত্যাগ করিলেন। অচিরেই তাহার উদ্যোগে প্রকাশিত হইল ‘দৈনিক ভোরের কাগজ’। কোন প্রদোষে নাঈমুল ইসলাম খান ভোরের কাগজ ত্যাগ করিলেন স্মরণ হয় না। ১৯৯৩ সনে আমি যেই দিন শাহবাগে ভোরের কাগজ অফিসে গমন করিয়াছিলাম, ততোদিনে মতিউর রহমান ইহার সম্পাদক হইয়াছেন বলিয়া স্মরণ হয়।
১৯৯৮ সনে ‘দৈনিক প্রথম আলো’ প্রকাশিত হইল। ‘দৈনিক ভোরের কাগজ’ পশ্চাতে ফেলিয়া মতিউর রহমান প্রথম আলোর কাÐারী হইলেন। এই বিষয়ে অধিক বলিবার আবশ্যকতা নাই। কেবল এইটুকু বলিতে চাহি, মতিউর রহমান প্রথম আলোকে কয়েক বৎসরের মধ্যেই জনপ্রিয়তার বিজয়রথে তুলিয়া দিয়াছিলেন। এই কালপরিধিতে ‘ব্রডশীট’ আকারের পত্রিকা কুড়ি পৃষ্ঠায় বাহির হইবে এইরূপ একটি চল দাঁড়াইয়া গেল, মূল্য হইবে আট টাকা। এই নবসৃষ্ট ঐতিহ্য তুচ্ছ করিয়া নাঈমুল ইসলাম খান ২০০৫ আদ্যিকালের আট পৃষ্ঠার পত্রিকাতে প্রত্যাবর্তন করিলেন। ভোরের কাগজের পর দীর্ঘ ব্যবধানে তিনি প্রকাশ করিলেন আট পাতার দৈনিক পত্রিকা ‘আমাদের সময়’। ইহা পাঠ করিয়া পাঠকসাধারণের সহসা মনে হইল, কুড়ি পৃষ্ঠার পরিবর্তে আট পৃষ্ঠার দৈনিক খোরাকই তাহার জন্য যথেষ্ট। খবরের প্রতিবেদনগুলিকে ঠাসিয়া স্বল্পদৈর্ঘ্য করা হইল। সকল প্রকার মেদ বর্জন করা হইল। দুই কি তিন বৎসরের মধ্যে সকলকে বিস্মিত করিয়া ‘আমাদের সময়’ বাংলাদেশের দ্বিতীয় জনপ্রিয় দৈনিকে পরিণত হইল। সকল জাতীয় দৈনিকের মূল্য ছিল অভিন্ন আট টাকা। ইহার বিপরীতে হকাররা রাস্তাঘাটে অনায়াসে দুই টাকায় ‘আমাদের সময়’ বিক্রি করিতে লাগিল। নাঈমুল ইসলাম খান সম্যক জানিতেন, অনেকেই ভোরের কাগজ কি প্রথম আলো ত্যাগ করিয়া সহসা নতুন একটি পত্রিকার প্রতি ঝুঁকিবে না, কিন্তু বিরাটসংখ্যক পাঠক দুই টাকার বিনিময়ে ‘আমাদের সময়’কে দ্বিতীয় পত্রিকা হিসাবে গ্রহণ করিবে। কেবল তাহাই নহে, যাহারা সীমিত আয়ের কারণে কোনো দৈনিক পত্রিকা ক্রয়ে সমর্থ হয় না, তাহাদেরও অনেকে দুই টাকা দিয়া একখানা ‘আমাদের সময়’ সংগ্রহ করিবে, নতুন ক্রেতা-পাঠক সৃষ্টি হইবে। তাহাই ঘটিয়াছিল। বাঙালির চারিত্র্য উপলব্ধির অসাধারণ ক্ষমতা লইয়া জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন নাঈমুল ইসলাম।
শুনিয়াছি, ঐ মাত্র আট পৃষ্ঠার দৈনিকের জন্য তিনি একুনে পঁয়ষট্টি জন সংবাদ সংগ্রহকারীর (রিপোর্টার) বিশালাকার দল গঠন করিয়াছিলেন। নাঈমুল ইসলাম খান জানিতেন, অধিকাংশ পাঠক দুই-চারিটির বেশি খবর পাঠ করিতে নারাজ। তাহাদের কথা মনে করিয়া প্রতিদিনই কয়েকটি চমকপ্রদ বা অপ্রত্যাশিত খবর ছাপিতেন, যাহা আর কোনো পত্রিকায় লভ্য ছিল না। একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে যে তুলনামূলক রণকৌশল রপ্ত করিতে হয়, তাহা ছিল তাহার অনায়াসসাধ্য।

কয়েক বৎসর আগে হঠাৎ করিয়া একদিন তিনি জাতীয় জাদুঘরে আগমন করিলেন। আমি তখন মহা পরিচালকের দায়িত্বে। তাঁহার হস্তে বিদেশি একটি পত্রিকা ‘ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন’। ঘটনা কী? এমন কিছু নহে। তিনি এই আন্তর্জাতিক পত্রিকাটি ঢাকায় মুদ্রণ করিয়া বাংলাদেশে বাজারজাত করিয়াছেন। আমার বিশ্বাস, নাঈমুল ইসলাম খান যদি পশ্চিমবঙ্গের ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ ঢাকায় মুদ্রণ করিয়া বাংলাদেশে বাজারজাত করিতেন, তবে ইহাকে বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকে পরিণত করিয়া ছাড়িতেন। জাতির সৌভাগ্য, এই উদ্যোগ তিনি গ্রহণ করেন নাই!

কয়েক বৎসর হইল কী ঘটিয়াছে বলিতে পারি না ‘আমাদের সময়’ তাহার হস্তচ্যুত হইয়া গিয়াছে। এই রহস্যভেদের চেষ্টা আমি করি নাই। সম্প্রতিকালে নাঈমুল ইসলাম খান ‘আমাদের নতুন সময়’ প্রকাশ করিতেছেন। ইতোমধ্যে দৈনিকপত্রের বিষয়ে আমার আকৈশোর যে আগ্রহ ছিল, তাহা অবসিত হইয়াছে। ফলে নিয়মিত ‘আমাদের নতুন সময়’ পড়া হইয়া ওঠে না। জীবনে একটি সময় আসে, যখন বইপত্র পড়িবার জিনিস আর থাকে না, উহা দেখিবার জিনিসে পর্যবসিত হয়। সংবাদপত্র ইহার ব্যতিক্রম কিছু নহে। আশি বা নব্বইয়ের দশকে কলিকাতার সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকা ঢাকা শহরে সর্বত্র লভ্য ছিল। এমনকি হকারকে বলিলে সে নিয়ম করিয়া প্রতি সপ্তাহে গৃহে পৌঁছাইয়া দিত। এখন খুঁজিয়া-পাতিয়া ‘দেশ’ সংগ্রহ করিতে হয়। কিন্তু শেষাবধি দেখা হয় পাঠ করা আর হইয়া উঠে না। ঘরের কোণে অপঠিত ‘দেশ’এর সম্ভার গড়িয়া ওঠে মাত্র। ‘আমাদের নতুন সময়’ ইহার ব্যতিক্রম হইবে কেন? তথাপি মাঝেমধ্যে পত্রিকাটি হাতে লইয়া দেখি: যে শিরোনামে চোখ আটকাইয়া যায়, তাহা পাঠ করি। নাঈমুল ইসলাম খানের নামে কোনো প্রতিবেদন দৃষ্টিগোচর হইলে উহা সাগ্রহে মনোযোগ সহকারে পাঠ করি।

আমি স্বীয় হৃৎপির ওপর হস্ত রাখিয়া হলফ করিয়া বলিতে পারিব না ‘আমাদের নতুন সময়’ আমাকে মুগ্ধ করে, যেইরূপ ‘আজকের কাগজ’ কিংবা ‘ভোরের কাগজ’ মুগ্ধ করিত, কিংবা যেইরূপ ‘আমাদের সময়’ অভিভ‚ত করিত। ঘটনাক্রমে তেজগাঁওয়ে স্থাপিত ‘আমাদের নতুন সময়’ অফিসে গমনের সুযোগ ঘটিয়াছে। অফিসের পরিকল্পনায় নাঈমুল ইসলাম খানের স্বপ্নের প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করিয়া ভালো লাগিয়াছে।

এক যুগ হইল টেলিভিশনে তাহার উপস্থিতি দর্শকের নিকট কাক্সিক্ষত হইয়া উঠিয়াছে। তিনি চিন্তায় পরিণামদর্শী, ভাষণে অকপট। তাহার বিশ্লেষণের যুক্তিপ্রাচুর্য মানুষ গ্রহণ করে। তাহার বাগ্মিতার যে গুণ প্রত্যক্ষ হয়, তাহা প্রশংসার্হ। তাহার মুখে সমালোচনা বিষাক্ত হইয়া উঠিতে দেখি নাই। জীবন ও পরিপার্শ্ব সম্পর্কে এক প্রকার নিরুদ্বেগ মনোভঙ্গি দেখিয়াছি।
শুনিয়াছি, নানা কাজে তিনি উদয়াস্ত ব্যস্ত থাকেন। ইহার মধ্যেই শত স্বপ্ন বিকশিত হইতেছে। তাহার উদ্যমের কোনো ঘাটতি নাই। তাহার অধ্যবসায়ে কোনো ভাটা নাই। শুনিতে পাই, রসদের অভাব কখনো কখনো প্রকট রূপ ধারণ করে। ইহারই মধ্যে তিনি তাহার কাজ লইয়া হাসিমুখে সন্তুষ্ট রহিয়াছেন, ইহাই বড় কথা।
লেখক : সাবেক মহাপরিচালক, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়