এম আমির হোসেন: এ সমাজ অনুভ‚তি-সর্বস্ব। সেই অনুভ‚তিও ‘সিলেকটিভ’। পদে পদে বিদ্যমান হাজার অন্যায়-অসঙ্গতির ওপর নয়, নিজেদের বঞ্চনাকারীর ওপরও নয়, বরং যে অনুভ‚তি কেবল সংখ্যালঘুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার সময়ই সক্রিয় হয় সেটাই হলো সংখ্যাগুরুর ‘অনুভ‚তি’! পক্ষান্তরে সংখ্যালঘুর কোনো অনুভ‚তি নেই, কোনো অনুভ‚তি থাকতে নেই, কেবল ভোঁতা, শুধু ‘অনু-ভোঁতা’! যত্রতত্র অনুভ‚তির এই বংশবিস্তার রোধকল্পে ‘পরিবার পরিকল্পনা’র মতো নতুন কোনো মন্ত্রণালয় কি করা যায়? সংখ্যাগুরুর অনুভ‚তি এতোটাই সংবেদনশীল যে এর সংবেদশীলতা হ্রাসকল্পে হতে পারে নতুন গবেষণাও। এ সমাজ অবিকশিত। অধিকাংশ মানুষ রাগ, উচ্ছ¡াস আর আবেগের জন্মগত তাড়না দিয়ে চলে, যুক্তি, সহনশীলতা বা প্রজ্ঞার মতো অর্জিত বোধ দিয়ে নয়। অর্জিত-বোধ যা আছে তাও খুব বড় নয়, জন্মগত ক্ষুদ্রতাকে জয় করার মতো নয়। ক্ষুদ্রের আবেগ, ক্ষুদ্রের স্বার্থ, ক্ষুদ্রের তৃপ্তিই তাদের সব!
আধুনিক শিক্ষাপ্রাপ্ত প্রজন্ম এ দেশে কেবল দু’একটি। হয়তো বাবা, নতুবা দাদা কিংবা দাদার বাবা ছিলো অশিক্ষিত, গ্রামের কৃষক, মাঝি বা জেলে। চর-দখল, জমি-দখল কিংবা তুচ্ছ ঘটনায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হতো তারা। অন্যদের দ্বারা যতোটা নির্যাতিত হতো, নিজেরা নিজেদের নির্যাতন করতো তার চেয়ে বেশি। তাদের নির্যাতন মানে ছোট জাতের কদর্যতার প্রকাশ, কলহ, লাঠালাঠি, চুলোচুলি, রক্তারক্তি, দুর্বল প্রতিবেশীর ভিটেমাটি-আমগাছ দখল ইত্যাদি ইত্যাদি, বড় জাতের মতো বড় দখল, বড় উপনিবেশ স্থাপন, বড় আবিষ্কারের প্যাটেন্ট দখল, এমনকি বড় পাপও নয়। তাদের ক্ষুদ্রতা এমন যে বড় পাপ করে ইতিহাসে বড়-পাপী হিসেবে স্থান পাওয়ার যোগ্যও নয় তারা। চার-পাঁচটি প্রজন্ম আধুনিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে না গেলে কোনো জাতি কখনো জাতে ওঠে না।
মন বলে, আমাদের আরও পাঁচ-ছয় দশক লেগে যাবে বিকশিত হতে, সভ্য পৃথিবীর অংশ হতে। তাই অপেক্ষা! এ দেশে শ্রবণ প্রতিবন্ধীরাই এখন সুরের বোদ্ধা, বিকলাঙ্গরা কুস্তিগির। বুদ্ধি প্রতিবন্ধীরা আজ সনদপ্রাপ্ত বুদ্ধিজীবী। বড়ই বিচিত্র এই মূর্খকুঞ্জ! বড়ই বিচিত্র ‘অনুভ‚তির এই প্রসূতি বিভাগ’! হায়! লেখক : চিকিৎসক
আপনার মতামত লিখুন :