মোরশেদ শফিউল হাসান
পাকিস্তান আমলেও ১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় দুস্কৃতকারীদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে ঢাকায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আমীর হোসেন চৌধুরী এবং নটরডেম কলেজের অধ্যাপক ফাদার নোভাক নিহত হন। এ সময় যে সর্বদলীয় দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয় তার নেতৃত্বে ছিলেন হামিদুল হক চৌধুরী, আতাউর রহমান খান, শেখ মুজিবুর রহমান, মাহমুদ আলী, অলি আহাদ, শাহ আজিজুর রহমান, আলীম আল রাজী, আলী আকসাদ, তফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া), জহুর হোসেন চৌধুরী ও মাহবুবুল হক। (তাঁদের মধ্যে চারজন অবশ্য ১৯৭১-এ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেন।) আতাউর রহমান খান, শেখ মুজিবুর রহমান, মাহমুদ আলী ও অলি আহাদের মতো রাজনৈতিক নেতারা তখন খোলা ট্রাকে চড়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মাইক্রোফোনযোগে লোকজনকে দাঙ্গা প্রতিরোধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার আহŸান জানান। এ সময় পুরানো ঢাকায় দাঙ্গাবিরোধী প্রচারকালে শেখ মুজিব একবার দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা আক্রান্তও হয়েছিলেন।
কেবল ‘মর্নিং নিউজ’ ও নবপ্রকাশিত ‘পয়গাম’ ছাড়া ঢাকার সবক’টি দৈনিক পত্রিকা ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’ শিরোনামে একযোগে একই সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে দাঙ্গাকারীদের হাত থেকে বিপন্ন পরিবারগুলোকে উদ্ধার এবং তাদের আশ্রয় ও পুনর্বাসনের ব্যাপারে- সরকারি বাধা ও অন্যান্য নানা প্রতিক‚লতার মধ্যেও- ছাত্র ও যুব সমাজ, রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক মহল (‘সুশীল সমাজ’ ধারণাটি তখনো এদেশে চালু হয়নি) সাহসী ও কার্যকর ভ‚মিকা পালন করে। এসবই ঐতিহাসিক সত্য, কেউ কেউ জানেন, অনেকেই হয়তো জানেন না। প্রশ্ন হলো, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে আজ ছাত্র ও যুব সমাজ, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক মহল, প্রচার মাধ্যম, তথাকথিত নাগরিক সমাজ কাউকে সেই সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধী ভ‚মিকায় দেখা যাচ্ছে না কেন? এ প্রশ্নের উত্তরও আমরা বোধহয় জানি বা অনুমান করতে পারি। তবু প্রশ্নটা এখানে রাখলাম। Morshed Shafiul Hasan-র ফেসবুক ওয়ালে লেখাটি পড়ুন।
আপনার মতামত লিখুন :