মতিনুজ্জামান মিটু: [২] পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জে একটি মিষ্টি আলু প্রোসেসিং কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ অর্গানিক প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুহাম্মদ আব্দুস ছালাম বলেন, এ কারখানাটি স্থাপন করেছেন। এখানে মিষ্টি আলুর চিপস, পাউডার এবং পেস্ট উৎপাদন ও রপ্তানি হবে। সিংগাপুর, কোরিয়া এবং জাপানের কয়েকজন বায়ার ইতোমধ্যে কারখানাটি এবং ওই এলাকার মাটি পরিদর্শন করেছেন।
[৩] কারখানাটি প্রতিষ্ঠা পেলে, বছরে প্রায় ২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ২০০ কোটি টাকা মূল্যের মিষ্টি আলুর তৈরী বিভিন্ন প্রকার খাদ্যপণ্য রপ্তানি হবে। এ কারখানাটি প্রতিষ্ঠা পেলে উত্তরবঙ্গের কৃষিতে অনেক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন পঞ্চগড়বাসী।
[৪] মুহাম্মদ আব্দুস ছালাম বলেন, শুধু উন্নত এবং ধনী দেশেই নয়, অনেক গরীব দেশেও জনপ্রিয় খাদ্য মিষ্টি আলু। এ দেশের দৈনন্দিন কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা সহজেই মিষ্টি আলু দিয়ে পূরণ করা সম্ভব। মিষ্টি আলুতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস প্রভৃতি।
[৫] এ দেশের মানুষের দুর্ভাগ্য যে, শ্রেষ্ঠ এবং পুষ্টিতে ভরপুর মিষ্টি আলুকে গরীব এবং মুর্খদের খাদ্য বলে অবজ্ঞা করা হয় অথচ অবশ্যই এটি ধনী এবং জ্ঞানিগণের খাদ্য। আর এ কারণেই গোটা দুনিয়ায় মিষ্টি আলুকে সুপার ফুড বা অলৌকিক খাদ্য বলা হয়।
[৬] ভাত শুধুমাত্র খাদ্য তবে অবশ্যই নিরাপদ পুষ্টিকর খাদ্য নয়। ধান আবাদ করতে কি পরিমাণ পানি, রাসায়নিক সার এবং জীবন ধ্বংসকারী কিটনাশক ব্যবহার করা হয় তা সবার জানা। এরপর আবার ধান থেকে চাল করতে কত্ত প্রোসেসিং! শুধু এখানেই শেষ নয়, চালকে আবার মিনিকেট বানাতে গিয়ে অটোরাইসমিলের কত্তইনা তেলেসমাতি। আরও আছে, মিনিকেট চালকে আবার প্রিমিয়াম মিনিকেট করতে গিয়ে কত্তইনা ডিজিটাল কলাকৌশল!
[৭] প্রধানমন্ত্রী বার বার নিরাপদ পুষ্টিকর খাদ্যের কথা বলছেন। দেশে বিদ্যমান প্রায় ৬ লাখ হেক্টর চরাঞ্চল এবং বেলেদোঁআশ মাটিতে সহজেই প্রায় দেড় কোটি টন মিষ্টি আলু উৎপাদন করে গোটা দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা খুব সহজেই মেটানো সম্ভব। এ ফসলটি আবাদ করতে সামান্য পানি এবং জৈবসার লাগে।
[৮] এ দেশের নেতা নেত্রী আমলা অফিসারগণ প্রতি বছর ফুড হ্যাবিট ডাইভার্সিফিকেশনের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করে ইউরোপ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। এ যাবৎ সরকারী টাকা এবং মূল্যবান সময় নষ্ট করে যারা ফুড হ্যাবিট ডাইভার্সিফিকেশনের প্রোগ্রামে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন, তারা দেশে ফিরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর দেশ এবং জাতিকে কি তথ্য বা নির্দেশনা দিয়েছেন জানি না, তবে তারা সম্ভবত নিজেদের পরিবারেই ফুড হ্যাবিট চেইঞ্জ করতে পারেননি।
[৯] আব্দুস ছালাম কয়েক বছর আগে জাপান থেকে বেগুনী (মুরাসাকি) এবং কমলা (ওকিনাওয়া) রংয়ের ২টি মিষ্টি আলুর জাত নিয়ে এসে কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমানের সহযোগিতায় পঞ্চগড় জেলায় চাষ শুরু করেন। গত বছর প্রায় ২০ একর জমিতে এ ২ জাতের মিষ্টি আলু চাষ করা হয়েছিল এবং কৃষি মন্ত্রী ক্ষেত পরিদর্শন করে খুব সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
[১০] কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমানের সহযোগিতায় এ বছরও বিভিন্ন জেলায় প্রায় ২০০ একর জমিতে মিষ্টি আলুর এ জাত ২টি চাষ শুরু হয়েছে।
[১১] এ ২ জাতের মিষ্টি আলু এন্থোকায়ানিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ, যা ক্যান্সারসহ অনেক রোগ প্রতিরোধ করে। এ আলুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স মাত্র ৪৬ এবং ডায়াবেটিসের রোগীগণ নির্ভয়ে পেট ভরে এ আলু খেতে পারবেন। এ আলুতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে। আর পেট ঠিক তো দুনিয়া ঠিক। মিষ্টি আলুর বহু উপকারের কযেকটি হলো; বেগুনী (মুরাসাকি) এবং কমলা (ওকিনাওয়া) রংয়ের ২ জাতের মিষ্টি আলু খেলে অনেক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরা থাকে, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
[১২] এসব জাতের মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে এ্যন্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যেমন- ভিটামিন এ বি সি ডি ই
এবং কে থাকায় অনেক রোগ-ব্যাধি প্রতিরোধ করে এবং শরীর সুস্থ রাখে। এ্যান্টি-অক্সিডেন্টস এ সমৃদ্ধ এ মিষ্টি আলুতে ক্যারটেনয়ডস নামক একটি উপাদান থাকে, যা মানবদেহে কোষের ক্ষয় রোধ করে। এ ২ জাতের মিষ্টি আলুতে থাকা ভিটামিন ই এবং সি ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে। এসব জাতের মিষ্টি আলুতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এন্থোকায়ানিন যে কোন ক্যান্সারের কোষ মেরে ফেলে এবং অন্যান্য কোষ ভালো রাখে। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও
আপনার মতামত লিখুন :