আবু হাসাদ: [২] পুঠিয়ায় কার্তিকের শুরু থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত চিনি বিক্রি বেড়ে যায়। এ ৪ মাস অন্য সময়ের চেয়ে চিনির চাহিদাও বাড়ে কয়েক গুণ বেশি। এর ক্রেতা খেজুর গুড়ের গাছিয়ারা। চিনির এই চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন এলাকায় রয়েছেন একাধিক ডিলার। আর শীত মৌসুমে অস্থায়ীভাবে আরও কয়েকটি সাব ডিলারের আর্বিভাব ঘটে।
[৩] সাইদুর রহমান নামের স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এই এলাকার খেজুর গুড়ের সুনাম রয়েছে দেশ-বিদেশে। কিছু অসাধু গুড় তৈরির কারিগররা বেশি লাভের আশায় খেজুরের রসে চিনি মিশ্রণ করছেন। এরপর তারা ভেজাল গুড় তৈরি করে বাজারজাত করেন। এতে করে সাধারণ ক্রেতারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। পাশাপাশি ক্রেতাদের স্বাস্থ্য ঝুকির আশঙ্কা থাকে।
[৪] জানা গেছে, দেশে বেসরকারি একাধিক চিনি আমদানি ও প্রস্তুতকারক রয়েছেন। আর পুঠিয়াতে ওই কোম্পানির পরিবেশক (ডিলার) রয়েছেন ৩ জন। আর তাদের সাব ডিলার হিসাবে রয়েছেন ৫ জন ব্যবসায়ী। শীত মৌসুম আসলেই তিন মাসের জন্য অস্থায়ী ভাবে নতুন করে আরও ১০ জন সাবডিলার চিনির ব্যবসা করেন।
[৫] তৈয়বুর আলী নামে বানেশ্বর বাজারের একজন সাবডিলার বলেন, বছরের ৯ মাস এই উপজেলা জুড়ে দৈনিক প্রায় ১৬ টন চিনির চাহিদা থাকে। আর শীত মৌসুমের তিন মাস সেই চাহিদা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় দৈনিক প্রায় ৮০ টনে।
[৬] কমল সরকার নামে অপর একজন ডিলার বলেন, এই অঞ্চলে শীত মৌসুমে চিনির চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। যার কারণে দেশের অনেক চিনি তৈরির কারখানার মালিকরা চুক্তি মোতাবেক অস্থায়ী ডিলারও দেন। আমরা স্থায়ী ভাবে তিনজন চিনির ডিলার আছি। আর আমরা চিনি গুলো কয়েকজন সাব ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকি। তবে শীত মৌসুমে কেনো এতো চিনির চাহিদা বাড়ে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি পাইকারি বিক্রি করি। খুচরা পাটিরা এতো চিনি কি করেন তা বলতে পারবেন না বলে জানান।
[৭] নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিনির মৌসুমি সাব ডিলার বলেন, এখন খেজুরের গুড় বাজারে আসছে। আর চিনির চেয়ে এখন খেজুর গুড়ের দাম দ্বিগুণ। তাই এই এলাকার প্রতিটি খেজুর গুড় তৈরির কারিগররা নিয়মিত চিনি কিনেন। পরে কারিগররা খেজুরের রসের সঙ্গে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ কেজি চিনি মিশ্রণ করেন।
[৮] সোমবার ঝলমলিয়া বাজারে খেজুরের গুড় বিক্রি করতে আসা আমজাদ আলী নামের একজন বলেন, এবার শীত শুরুর আগেই বেশি লাভের আশায় অনেক গাছিরা খেজুরের রস আহরণের পুরো প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করেছেন। তবে শীত না পড়ায় এখনো গাছ থেকে তেমন রস বের হচ্ছে না। তাই গাছিয়ারা এই সামান্য রসের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি মিশিয়ে খেজুরের গুড় তৈরি করেছেন। আবার অনেকেই গত বছরের পুরোনো খেজুরের ‘র’ বা লালিতে রং আর চিনির মিশ্রণে নতুন পাটালি গুড় তৈরি করছেন।
[৯] তিনি আরও বলেন, গুড়ের রং ভালো হলে বাহির থেকে আসা পাইকাররা বেশি দামে কিনতে আগ্রহী হয়। তাই গুড়ের রং তৈরি করতে একটিু বেশি পরিমাণে সোডা ও হাইড্রোজ দিতে হয়।
[১০] উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, খেজুরের গুড়ে চিনি মেশানো বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি তদন্ত করতে বাজার গুলোতে মনিটরিং করা হবে। সম্পাদনা: হ্যাপি
আপনার মতামত লিখুন :