শাহিদুল ইসলাম: [২] কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার পৌরসভার বড়আলমপুর ওয়ার্ডের একটি গ্রামের নাম বিনাইপাড়। এই গ্রামের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ এক বিচিত্র পেশার সাথে জড়িত, আর সেই বিচিত্র পেশাটি হল মাছ ধরার “জাল বুনন শিল্প”। এই গ্রামটিতে প্রায় হাজার খানেক পরিবারের বসবাস হলেও গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত গ্রামটির বেশির ভাগ পরিবার দারিদ্র সিমার মধ্যে।
[৩] বিনাইপাড় গ্রামের জাল বুননের ইতিহাস কবে থেকে তা সঠিক বলা না গেলেও প্রায় একশতবছর আগে থেকে মাছ ধরার জালের জন্য একনামে পরিচিত বিনাইপার গ্রামটিতে এখন আর হাতে বোনা জাল তৈরি হচ্ছেনা। তবে তারপরও এলাকার প্রতিটি বাড়িতেই কেউনা কেউ জাল তৈরি বা বিক্রয়ের সাথে যুক্ত।
[৪] জালের জন্য বিখ্যাত এই গ্রামে ২০০৫ সালে কোরিয়া থেকে বাংলাদেশে আসেন জাল ব্যাবসায়ী মিষ্টার সং নামে এক ব্যাক্তি। গুনেমানে ভাল এবং প্রশিদ্ধ বিনাইপাড় গ্রামের হাতে বোনা জালের খবর শুনেই মুলত তিনি এই গ্রামে আসেন।এখানে এসে এই গ্রামের জাল ব্যাবসায়ী মো. শাহজাহান মিয়ার সাথে পরিচয় হলে তাদের এই জাল হাতে না বুনে মেশিনে তৈরির পরামর্শ এবং পাশাপাশি সহায়তার আশ্বাস দেন। আর তার পরই পাল্টে যায় শত বছরের হাতে বোনা জলের ইতিহাস আর পর্যায়ক্রমে এই শিল্পটি চলে যায় পুরোপুরি প্রযুক্তির দখলে।
[৫] স্বামীহারা মিনুয়ারা বেগম (৬৫) বিয়ের পর এখানে এসেই শাশুড়ির কাছে জাল বোনার হাতেখড়ি নেন এবং সেই থেকে এই কাজই করে আসছিলেন। এখন মেশিন চলে আসায় আর হাতে জাল না বুনলেও মেশিনের তৈরি জালের টুকরোগুলি একত্রিত করে পূর্নঙ্গ জালে রুপান্তরিত করার কাজটি হাতে করে দেন। প্রতিটি জাল জোড়ানোর মজুরি হিসাবে আকার ভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকায় দিনে পরিবারের সবাই মিলে ৩-৪টি তৈরি করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন।
[৬] একই গ্রামের জাল ব্যাবসায়ী কালা মিয়া জানান, হাতে বোনা জালের স্থয়িত্ব বেশীদিন থাকে তবে তা ব্যায়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ, অন্যদিকে নেটিং মেশিনে তৈরি করতে সময় কম এবং খরচও কম পড়ে। তিনি আরো জানান আমার পূর্ব পুরুষ থেকেই এই পেশার সাথে জড়িত। আমি এই কাজ করে সন্তানদের লেখাপড়া,নতুন বাড়ি করা এবং কিছিু চাষের জমিও কিনতে পেরেছি।
[৭] শাহজাহান ফিশিং নেট ফ্যাক্টরির মালিক মো. শাহজাহান মিয়া জানান, আমার এই কারখানা সহ এই গ্রামে আরো একটি কারখানা আছে। এখানকার জাল পুরো বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
[৮] এ ব্যাপারে দেবিদ্বারের প্রবীন সাংবাদিক এবং স্থানীয় ব্যাক্তিত্ব এবিএম আতিকুর রহমান বাশার বলেন, যদিও এই শিল্পটি আমাদের মা-বোনদের হস্তশিল্প হিসাবে দেশে ছাড়িয়ে বিদেশেও সুনাম কুড়িয়ে আমাদের দেবিদ্বারকে পরিচিত করে তুলেছিল। তবে বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং তা সরকারী সহায়তা এবং রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও আরো বেশী প্রচার হলে এই এলাকাটি একটি ছোটখাট শিল্পনগরীতে পরিনত হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
আপনার মতামত লিখুন :