মাসুদ মিয়া: [২] দেশের শেয়ারবাজার এক বছরের বেশি সময় ধরে উত্থানে থাকলেও ব্যাংক খাতে দর সামান্য বেড়েছে। ব্যাংক খাতের ৩২ কোম্পানির মধ্যে ৩ কোম্পানি ফেসভেলুর নিচে। এ নিয়ে হতাশার মধ্যে রয়েছেন শেয়ারবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আর টানা একমাস ধরে সংশোধনে রয়েছে ব্যাংক খাত।
[৩] এ বিষয়ে বিনিয়োগকারী এহতেশামুজ্জামান বলেন, চাঙ্গা বাজারে ব্যাংক খাতের শেয়ারের দও বাড়ছে না। অধিকাংশ ব্যাংক মুনাফা করেছে তারপরও ব্যাংকের শেয়ারের দর তুলনা মূলক ভাবে বাড়ছে না বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই হতাশাজনক। গত এক বছরে আমরা সাধারন বিনিয়োগকারীরা দেখলাম ব্যাংকের ঘোষিত লভ্যাংশ অনেক আকর্ষণীয় এবং ব্যাংকের শেয়ার প্রতি ইপিএস অনেক ভাল, তার পর ব্যাংকের শেয়ারের দর সেই হারে বাড়ছে না।
[৪] এহতেশামুজ্জামান আরও বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিৎ মন্দ অর্থাৎ দুর্বল মৌলভিত্তিক কোম্পানির শেয়ারের দাম যাতে না বাড়ে সেদিকে নজর রাখা। দুর্বল কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের কখনো ভালো লভ্যাংশ দেয় না।
[৫] এদিকে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শেয়ারবাজারে বড় মূলধনি কিছু কোম্পানি ছাড়া সিংহভাগ কোম্পানির দরপতন হচ্ছে। এর বাইরে নয় ব্যাংক খাতও। তবে এই খাতে দরপতনের হার তুলনামূলক কম। যেকোনো একটি ভালো দিনেই কোম্পানিগুলো যেটুকু দর হারিয়েছে, তার সবটুকু ফিরে পেতে পারে। ব্যাংক খাতে কেবল লোকসানি একটি কোম্পানির শেয়ারদর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।
[৬] আগের দুই মাসে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর কমেছে ২২ শতাংশ। এটির দাম আরও বেশি কমেছিল, তবে চলতি সপ্তাহে কিছুটা দর ফিরে পেয়েছে। বাকি ৩১টি কোম্পানির মধ্যে ৯ শতাংশের বেশি কমেছে তিনটি কোম্পানির দর। একটির দর মাস শেষে অপরিবর্তিত আছে একটির, সাতটির দর বেড়েছে। চারটির দর কমেছে এক থেকে দুই শতাংশের মধ্যে।
[৭] আটটি কোম্পানির শেয়ার দর কমার হার তিন থেকে পাঁচ শতাংশের মধ্যে। ৮টি কোম্পানির শেয়ার দর ৫ শতাংশের বেশি থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এই সময়ে মুনাফায় থাকা ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর হারানো ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৯.৮৪ শতাংশ।
[৮] দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর কমেছে আরেকটি ব্যাংকের ৯.৪০ শতাংশ, আর তৃতীয় সর্বোচ্চ কমেছে ৯.২৫ শতাংশ। আরও একটি ব্যাংকের শেয়ারদর আপাতদৃষ্টিতে সাড়ে ৯ শতাংশ কমলেও সেটি ৮ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে এবং সেই লভ্যাংশ সমন্বয় হয়েছে। অন্যদিকে প্রধান খাতগুলোর মধ্যে বিমা, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, প্রকৌশল এবং বস্ত্র খাতে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ এমনকি এর চেয়ে বেশি হারে দর সংশোধন হয়েছে বহু কোম্পানির। বিমা খাতের ৫১টি কোম্পানির মধ্যে গত এক মাসে দর বেড়েছে কেবল দুটির, প্রকৌশল খাতের ৪২ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে আটটির, বস্ত্র খাতের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৩টির। কমেছে বাকিগুলোর।
[৯] এ বিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিনিয়োগাকারীরা ফান্ডামেন্টাল কোম্পানির দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। আসলে দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে এক সময় ভালো মুনাফা করলেও এখন দর সংশোধনের সময় দেখা গেছে, তারাই সবচেয়ে বেশি লোকসানে আছে। এ থেকে অভিজ্ঞতা বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও শিক্ষা নিয়েছে বলে মনে হয়। ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বেশি কমেছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের দর এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারে উত্থানের মধ্যে ব্যাংক খাতের একমাত্র লোকসানি কোম্পানিটি আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ১০০ শতাংশের বেশি।
[১০] গত বছরের জুলাইয়ের শেষে কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ২ টাকা ৮০ পয়সা। সেটি এবার বেড়ে হয় সর্বোচ্চ ৭ টাকা ৮০ পয়সা। গত ২৯ জুলাইও শেয়ার দর ছিল ৪ টাকা ৮০ পয়সা। সেখান থেকে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে ২ সেপ্টেম্বর দাম দাঁড়ায় ৭ টাকা ৪০ পয়সা।
[১১] অথচ তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কখনও মুনাফার মুখ না দেখে কোম্পানিটি চলতি বছরও লোকসানের বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি, এমনকি লোকসান কমাতেও পারেনি। তার পরেও শেয়ার দর কেন এভাবে বাড়ছে, এমন প্রশ্নের মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর সংশোধন শুরু হতে না হতেই লাফিয়ে লাফিয়ে কমতে থাকে। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও
আপনার মতামত লিখুন :