দীপক চৌধুরী: এদেশে কিছু ষড়যন্ত্রকারী সবসময়ই ছিল। এরা কখন যে কী করে বসে তা বলা ও বোঝা মুশকিল। অভিজ্ঞতা বলে দেয় যে, কুমিল্লায় যারা হিন্দু মন্দিরে হামলা চালিয়েছে তারা কিন্তু একটি মহলের আশীর্বাদপুষ্ট ক্রীড়নক। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে অনন্য নজিরটি স্থাপন করেছেন- তারা এটা মেনে নিতে পারছে না। দুর্গাপূজা সারাদেশে এক উৎসবে পরিণত হয়েছে। অথচ কুমিল্লার ঘটনা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ষড়যন্ত্রকারীদের এমন সাহস হলো কীভাবে?
সকালবেলা আমার পরিচিত হিন্দু সম্প্রদায়ের বয়স্ক কয়েকজন মানুষ উত্তেজনার সঙ্গে জানতে চাইলেন, ‘কোনো ভবিষ্যৎ কী আমাদের আছে?’
‘কেনো?’‘ওমা আমরা দেখছি, আপনি কোনো খবরও রাখেন না!’
‘মানে? কিসের খবর?’ তাদের দিকে আমি অবাক হয়ে তাকাই।
‘কেনো, কুমিল্লার খবর? মন্দিরে হামলার খবর?’
‘অ সেই কথা?’
আমার এমন উত্তরে বা জবাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের আমার ঘনিষ্টজনেরা খানিকটা আহত চোখে তাকালেন। অর্থাৎ তারা আশা করছিলেন আমি কঠিন ও উত্তেজনাপূর্ণ কথা বলবো। নেতিবাচক বিশ্লেষণ করবো।
আমি বললাম, এদেশে নয় সারা বিশে^ই সংখ্যালঘুরা কমবেশি চাপে থাকে। তবে এ উপমহাদেশে বেশি আর কী। যেমন বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ আরো সম্প্রদায় আছে। তারা নানাভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। এরপরই ধর্মীয় ইস্যু আসে। মূলত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা উদ্দেশ্য। যারা অপকর্ম করে তাদের কয়েকজন হয়তো ধরা পড়ে। কিন্তু যারা মূল ষড়যন্ত্রকারী ও নীলনকশাকারী তারা ধরা পড়ে না। কুমিল্লার ঘটনায় কারা জড়িত দেখি, ধরা পড়ুক, এরপরে বলা যাবে। তদন্ত হোক, যারা দায়ী যে ধর্মের বা বর্ণের হোক বিচার করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে।
‘তা সবই বুঝলাম। এজেন্যে দুর্গোৎসবের আয়োজনে এগুলো হবে?’ তারা মনমরা হয়ে মন্তব্য করছিলেন।
এমন প্রশ্নের কী জবাব দেবো? বললাম, প্রধানমন্ত্রী এই সেদিনও কী কী বলেছেন তা কী শুনেছিলেন আপনার?’
হুঁ শুনেছি, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী সকল নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি এখন সার্বজনীন উৎসব। অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য।’ কথাগুলো শেষ কর হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা এবার তৃপ্তির ঢোঁক গিলে বলেন, “শেখের বেটির কথা সত্যই।”
শেখ হাসিনার সরকার সংখ্যালঘুবান্ধব সরকার, এটাই ষড়যন্ত্রকারীদের অন্তর্জালার কারণ! যিনি এদেশের মহান স্থপতি, যাঁর ডাকে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এদেশে হত্যা করা হলো। খুনিরাও বাঙালিই ছিল। তারা হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুকে। শুধু তাই নয়, তাঁর মেয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় জাতির পিতার ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এতোবড় দুঃসাহস ওদের। এটাই বাস্তবতা। সুতরাং যারা ষড়যন্ত্রকারী তাদের চক্রান্তের শেষ নেই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘কুমিল্লার ঘটনায় যারাই জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে, কেউ ছাড় পাবে না। কুমিল্লার ঘটনা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাজ। যারা হিন্দুদের মন্দিরে হামলা চালায়, তারা দলীয় পরিচয়ের হলেও ছাড় দেওয়া হবে না। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যারা নষ্ট করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’- এ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশে আমরা সব ধর্মীয় উৎসব একসঙ্গে পালন করি। বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার উন্নয়ন করে যাচ্ছে।” বুধবার বিকেলে কুমিল্লায় মন্দিরে হামলার পর ঢাকায় র্যাব-পুলিশের নজরদারী বেড়েছে মনে হলো। শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশে। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যেও সাহস বেড়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ও রমনা কালী মন্দিরে গৃহীত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাদি পরিদর্শন শেষে সন্তোষ প্রকাশ করে র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, কোনও দুষ্কৃতকারী বা উস্কানিদাতা যদি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে র্যাব কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। র্যাব মহাপরিচালকের পরিদর্শন ও দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারিতে এ সময় উপস্থিত সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষজন আশ^স্ত হন। র্যাবের গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তুষ্টি জ্ঞাপন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ র্যাব মহাপরিচালককে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। আস্থা সমৃদ্ধ হয়।
লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক
আপনার মতামত লিখুন :