চিররঞ্জন সরকার: কিছু ঘটনা, কিছু খবর কানে আসে, আর মনটা বিষাদে ছেয়ে যায়। কিছু ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। বিশেষত শিক্ষিত-সচেতন মানুষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ! বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে নারী-পুরুষের সম্পর্ককে আমাদের সমাজে (তা হোক প্রাতিষ্ঠানিক, অফিসিয়াল কিংবা পারিবারিক) এখনো কলঙ্ক, অভিযোগ আর সন্দেহের বাইরে থেকে দেখার মানসিকতা খুব তৈরি হয়নি। তেমন সম্পর্ককে আমরাও (নারী-পুরুষ উভয়ে) এগিয়ে নিতে পারি না! এটা একটা বিস্ময়। মানুষে মানুষে সম্পর্ক হবে, সেই সম্পর্ক গভীর, ঘনিষ্ঠ হতেই পারে। হয়ও। না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। কিন্তু একজন ছেলে ও মেয়ের মধ্যে বিরাজমান সম্পর্ক কি যৌনতা, অভিযোগ, আপত্তির ঊর্ধ্বে উঠতে পারে? ওঠে? সুস্থ-স্বাভাবিক কিন্তু নিবিড় ও গভীর সম্পর্ক বজায় থাকে?
কেউ সন্দেহ করে না, কোনো অভিযোগ নেই-এমন নর-নারীর সম্পর্ক কী আমাদের সমাজে আছে? এমন সম্পর্ক কি অসম্ভব? আবার ভাবী, নিজেকে ছাড়া, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ নিয়ে অন্য কারোর ব্যাপারে কী গ্যারান্টি দেওয়া যায়? নিজেরটাই কী যায়? বিশেষ করে যৌন হয়রানি ইস্যুতে? ‘পুরুষ মানুষ খালু হয় না,’ ‘পুরুষ, কুকুর আর সাপকে বিশ্বাস করা যায় না’-এসব প্রবাদ তো আর এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি! তাই বলে নারী-পুরুষ নিষ্কাম সম্পর্ক কি হয় না? হতে পারে না? সব সম্পর্কই কি এই একটি বিন্দুতে গিয়েই শেষ হবে? এর বাইরে কি কোনো সম্পর্ক হয় না, হতে পারে না? তবে কি নারী-পুরুষ পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও মর্যাদার সম্পর্ক নির্মাণ করা যাবে না? আমাদের দেশে একজন নারী ও একজন নরের সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থাকে না।
একজন নারী অপর নারীর সঙ্গে, একজন নর অপর নরের সঙ্গে কিন্তু অনেক অনেক ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বাঁধনে জড়িয়ে যায়। যুগ যুগ ধরে তা টিকেও থাকে। কিন্তু একজন নর ও একজন নারীর সম্পর্কের ক্ষেত্রেই কেন জানি নানা সমস্যা দেখা দেয়! যদিও অনেক ক্ষেত্রে ছেলেরা মেয়েদের সঙ্গে ‘শুদ্ধ বন্ধুতা’ দিয়েই সম্পর্ক শুরু করে। ভালোলাগা, আনন্দ পাওয়া, অনেক সময় প্রয়োজন মেটানোরও ব্যাপার থাকে। তারপর একপর্যায়ে মেলামেশা ঘনিষ্ঠতা যতো এগোয়, ‘হাসিটুকু, কথাটুকু, নয়নের দৃষ্টিটুকুতে আর সম্পর্ক সীমাবদ্ধ থাকে না। ‘সমগ্রমানব’-কেই পাওয়ার জন্য আকুলতা তৈরি হয়। তৈরি হয় নির্ভরতা, আসক্তি আরও অনেক কিছু। ছেলেরা চান্স নেয়, অনেক ধরনের বø্যাকমেইল (ইমোশনালসহ) করে, নানা ফিকিরে যৌনতা চরিতার্থ করতে চায়, একজনের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক আছে, সেটা জানিয়ে ও প্রদর্শন করে আত্মসুখ লাভ করে, সবই সত্যি। কিন্তু মেয়েরাও কি সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবসময় ‘সৎ’ থাকে? ‘সীমা’ তারাও লঙ্ঘন করে না? ‘প্রতিশোধ’ নেয় না? সমাজে নর-নারীর সম্পর্কগুলোকে কি তবে বিশ্বাস করা যাবে না? সকল সন্দেহের ঊর্ধ্বে বিশ্বাস ও আস্থাপূর্ণ নারী-পুরুষের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক একটাও থাকবে না? chiroronjon Sarkar-র ফেসবুক ওয়ালে লেখাটি পড়–ন।
আপনার মতামত লিখুন :