সুজন কৈরী: [২] ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান উইকম ডটকম ও থলে ডটকমের ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- প্রতিষ্ঠান দুটির হেড অব অপারেশনস নজরুল ইসলাম, হিসাব রক্ষক সোহেল হোসেন, ডিজিটাল কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ অনিক, সেলস এক্সিকিউটিভ মুন্না পারভেজ ও সুপার ভাইজার মাসুম হাসান।
[৩] সংস্থাটি বলছে, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে সাশ্রয়ী দামে টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল ও ইলেক্ট্রনিক পণ্য বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা হয়েছে।
[৪] চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করবে বলে গ্রাহকরা দুই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পণ্যের অর্ডার দেয়। কিন্তু অর্ডার এবং গ্রাহকদের টাকা নিয়ে পণ্য না দিয়ে প্রতারণা শুরু করে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা। এভাবে গ্রাহকদের প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
[৫] সোমবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, ডিএমপির ক্যান্টনমেন্ট থানায় খায়রুল আলম মীর নামে এক ব্যক্তি থলে ডটকম ও উইকম ডটকমের বিরুদ্ধ মামলা করেছেন। ওই মামলায় প্রতিষ্ঠান দুটির শীর্ষ ৬ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটির অফিস তল্লাশি করে অফিস ভাড়ার চুক্তিপত্র, গন্তব্য লজিস্টিকস সার্ভিস লিমিটেড এজেন্ট সংক্রান্ত চুক্তিপত্র, জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এগ্রিমেন্ট সংক্রান্তে চুক্তিপত্রসহ বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, গ্রাহকদের কাছ থেকে চেক গ্রহণের তথ্য, সিপিইউ, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, ফটোকপি মেশিন, রেজিস্টার দুটি, টাকা গণনার মেশিন জব্দ করা হয়েছে।
[৬] ইমাম হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠান দুটি কম দামে টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল, ইলেক্ট্রিক ফ্যান বিক্রির বিজ্ঞাপন ফেসবুক ও অনলাইনে প্রচার করে। বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে সাধারণ মানুষ তাদের কাছ থেকে পণ্য কিনতে আগ্রহ দেখায়। তারা অর্ডার দেওয়ার একমাসের মধ্যে পণ্য দেবে বলে ক্রেতাদের আশ্বাস দেয় প্রতিষ্ঠানগুলো। গ্রাহকদের বলা হয়, টাকা পরিশোধ করলে ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করা হবে। প্রতিষ্ঠানের এমন প্রস্তাবে রাজি হয়ে বিভিন্ন তারিখে চেকের মাধ্যমে ও নগদ প্রায় আড়াই কোটি টাকা দেন ভুক্তভোগীরা। প্রতিষ্ঠানগুলো টাকা পাওয়ার পর ৫০ দিন অতিবাহিত হলেও ভিকটিমদের কোনো পণ্য সরবরাহ না করে অপেক্ষা করতে বলে। পরে ভুক্তভোগীরা তাদের অফিসে গেলে ভিকটিমদের বিভিন্ন অঙ্কের টাকার চেক দেয়। ওই চেক নিয়ে ব্যাংকে টাকা উত্তোলন করতে গেলে অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই বলে জানায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটি এভাবে হাজার হাজার লোকের কোটি কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে।
[৭] এদিকে টাকা নিয়ে পণ্য ডেলিভারি না দেওয়া ও টাকা ফেরত না দেওয়া ৬০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের তালিকা করেছে সিআইডি। এগুলোর মধ্যে ৩০ থেকে ৩২টি প্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারীদের যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
[৮] সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সিআইডিও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করছে। কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দিনের পর দিন পণ্য ডেলিভারি করছে না। কয়েকজন ভুক্তভোগী এজন্য থানায় অভিযোগ করেছেন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে ও সিআইডির অনুসন্ধানে ৬০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে। ৬০টির মধ্যে ৩০ থেকে ৩২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নজরদারিতে রয়েছে।
[৯] এ ৬০টি প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত গ্রাহকদের কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, কত টাকা হাতিয়েছে এটা হিসাব না করে বলা যাবে না।
[১০] তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক নারী যারা ঘরে থাকে তারাও ফেসবুকভিত্তিক ই-কমার্স ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সেগুলো নিয়ে সমস্যা নয়। মূল সমস্যা হলো, কিছু নামধারী প্রতিষ্ঠান অনুমোদন না নিয়ে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। আমরা শুধু তাদের নজরদারিতে রেখেছি। এ ধরনের প্রতারণা যারা করবে সিআইডি তাদের আইনের আওতায় আনবে।
আপনার মতামত লিখুন :