সোহেল রহমান : [২] করোনাজনিত কারণে সমাপ্ত অর্থবছরে সরকারের পুঞ্জিভূত সার্বিক ঋণস্থিতি বেড়েছে। চলতি বছরের গত জুন শেষে সরকারের মোট ঋণস্থিতি (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক) দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। এটি মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-এর ৩৮ শতাংশ।
[৩] এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বা ২০২০ সালের জুন শেষে সরকারের সার্বিক ঋণস্থিতি ছিল ১০ লাখ ৬ হাজার ২০২ কোটি টাকা। এটি ছিল ৩৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সরকারের ঋণস্থিতি বেড়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৫ হাজার কোটি টাকা। জিডিপি’র হিসাবে ঋণস্থিতি বেড়েছে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
[৪] অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, গত ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে সরকারের মোট পুঞ্জিভূত ঋণের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি হচ্ছে ৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের স্থিতি হচ্ছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে (২০১৯-২০) অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পুঞ্জিভূত স্থিতি ছিল যথাক্রমে ৬ লাখ ৩১ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা এবং ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা।
[৫] অর্থ বিভাগের মতে, করোনা জনিত কারণে সরকারের ঋণ বেড়ে যাওয়ায় সার্বিক ঋণ স্থিতি বেড়েছে। তবে এটি এখনো ঝুঁকিসীমার অনেক নিচে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর টেকসই ঋণ কাঠামো (ডেট সাসটেইনেবল ফ্রেমওয়ার্ক-ডিএসএফ)-এর মানদন্ড অনুযায়ী, জিডিপি’র ৭০ শতাংশ ঋণকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
[৬] অর্থ বিভাগ বলছে, সার্বিকভাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি-তে পুঞ্জিভূত ঋণস্থিতি আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) তুলনায় বাড়লেও বৈদেশিক ঋণের হার কমেছে। গত অর্থবছরে জিডিপি-তে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণস্থিতির হার হচ্ছে যথাক্রমে ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে এ হার ছিল যথাক্রমে ২৩ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং ১৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
[৭] অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নে স্টেক-হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান মধ্য মেয়াদী ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল আরও আধুনিকায়ন করা হবে এবং আঙ্কটাড-এর কারিগরি সহায়তায় অর্থ বিভাগে ডেট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল এনালাইসিস সিস্টেম নামে একটি কাস্টমাইজ ডাটাবেজ স্থাপন করা হবে। এছাড়া সরকারের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ঋণ পরিস্থিতি আলোচনা ও বিশ্লেষণ, ঋণ গ্রহণের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা এবং এ-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণে আগামীতে একটি ‘ঋণ সম্মেলন’-এর আয়োজন করা হবে।
[৮] সরকারের পুঞ্জিভূত ঋণস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত অভ্যন্তরীণের ঋণের মধ্যে ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথা সঞ্চয়পত্র খাত থেকেই সরকার ঋণ নিয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ খাতে সরকারের মোট ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা (২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ঋণস্থিতি ছিল ৩ লাখ ৩ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা)।
[৯] অন্যদিকে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকারের মোট গৃহীত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ২৫২ কোটি টাকা (২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ঋণস্থিতি ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার ২৯১ কোটি টাকা)। ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে গৃহীত ঋণের মধ্যে ট্রেজারি বন্ড ও স্পেশাল ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা, ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ৫১ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা এবং ‘সুকুক’-এর মাধ্যমে ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। এছাড়া অন্যান্য খাত খেকে মোট গৃহীত ঋণের স্থিতি হচ্ছে ৪৪ হাজার ৩১ কোটি টাকা।
[১০] ঋণস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত সরকারের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা (২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ঋণস্থিতি ছিল ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা)। এর মধ্যে বহুপক্ষীয় ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৬৩ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা এবং দ্বি-পাক্ষিক ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও