হাসান তাকী: [২] তিনদিন আগে দ্বিতীয় সন্তানের মা হয়েছিলেন মাহমুদা। আরেক ছেলের বয়স ৩। সংসারে সুখ ছিলো না শ্বশুরপক্ষের যৌতুকের দাবির কারণে। স্বামীও নির্যাতন করতেন।
[৩] বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় মাহমুদা তাঁর ভাই ফয়সল মিয়াকে ফোন করেন। কথা বলা অবস্থায় হঠাৎ মাহমুদা চিৎকার করে ফোন ছেড়ে দেন। ফয়সল পুনরায় বোনকে ফোন দিলে তা বন্ধ পান। ঘণ্টাখানেক পরেই এক আত্মীয় মুঠোফোনে জানান, মাহমুদা আর বেঁচে নেই। তিনি শ্বশুরবাড়িতে মারা গেছেন।
[৪] হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দৌস মোহাম্মদ বলেন, লাশের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার ভাদিকারা গ্রামের আবুল বাছির মিয়ার মেয়ে মাহমুদা আক্তার। চার বছর আগে হবিগঞ্জ শহরের অনন্তপুর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মাকসুদ মিয়ার (৩০) সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকে যৌতুক নিয়ে মাহমুদাকে নির্যাতন করতেন স্বামীসহ তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। যে কারণে সম্প্রতি বাবার বাড়িতে চলে যান মাহমুদা। পরে সালিস বৈঠক করে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে আসেন।
এদিকে পুনরায় মাহমুদার সংসারে এলেও আগের মতোই নির্যাতন চলে তাঁর ওপর। নিজের জীবনের শঙ্কা প্রকাশ করে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় মাহমুদা তাঁর ভাই ফয়সল মিয়াকে ফোন করেন। ভাই-বোনের কথা বলা অবস্থায় হঠাৎ মাহমুদা চিৎকার করে ফোন ছেড়ে দেন। পরে ফয়সল পুনরায় বোনকে ফোন দিলে তা বন্ধ পান। এ নিয়ে পুরো পরিবারে আতঙ্ক তৈরি হয়। এর ঘণ্টাখানেক পরেই এক আত্মীয় মুঠোফোনে জানান, মাহমুদা আর বেঁচে নেই। তিনি শ্বশুরবাড়িতে মারা গেছেন। সূত্র : প্রথম আলো
খবর পেয়ে রাতেই মাহমুদার বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ছুটে আসেন হবিগঞ্জ শহরে মাহমুদার শ্বশুরবাড়িতে। এখানে এসে জানতে পারেন, তাঁর লাশ হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, তাঁকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।
নিহতের ভাই ফয়সল মিয়া দাবি করেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় তাঁর বোন তাঁকে মুঠোফোনে জানান, শ্বশুরবাড়ির লোকজন মাহমুদাকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করছেন। তিনি তাঁর জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন ভাইয়ের কাছে। তাঁর সঙ্গে কথা বলা অবস্থায় হঠাৎ চিৎকার করেন মাহমুদা। সঙ্গে সঙ্গে সংযোগ কেটে যায়। তিনি দাবি করেন, তাঁর বোনকে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন হত্যা করেছেন।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দৌস মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, লাশের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে কী করে মাহমুদার মৃত্যু ঘটেছে, পুলিশ তা তদন্ত করছে। তিনি আরও বলেন, এই গৃহবধূ গত সোমবার এক নবজাতকের জন্ম দিয়েছেন। শিশুটি মায়ের সান্নিধ্য পাওয়ার আগেই মায়ের মৃত্যু ঘটেছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :