খালিদ আহমেদ: [২] আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে ২৩ তম বিশেষ বিসিএসে (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের জন্য সহকারী সার্জন হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে সুমনা সরকারকে।
[৩] চিকিৎসক সুমনা সরকার অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ২৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। সুমনা সরকারের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক অমল কৃষ্ণ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে জটিলতার অভিযোগে পিএসসি সুমনার মৌখিক পরীক্ষা নেয়নি।
[৪] তবে সুমনা সরকার হাল ছাড়েননি। আইনি লড়াইয়ে জিতেছেন তিনি। দীর্ঘ ১৮ বছর পর আদালতের রায় অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সুমনা সরকারের পরীক্ষা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সুমনা যে ছেলেকে পেটে নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন, সেই ছেলে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
[৫] সুমনা সরকারের এই সাফল্য দেখে যেতে পারেননি চিকিৎসক বাবা অমল কৃষ্ণ সরকার। তিনি ২০১৮ সালে মারা গেছেন।
[৬] ২০০০ সালে পিএসসির নেওয়া ২৩তম বিসিএস (বিশেষ) পরীক্ষায় স্বাস্থ্য ক্যাডারের প্রার্থী ছিলেন সুমনা। ওই বছরের মার্চে প্রিলিমিনারি এবং এপ্রিলে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০০৩ সালের জুনে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে জটিলতার অভিযোগে চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা থেকে বাদ পড়েন তিনি।
[৭] সুমনার শ্বশুরবাড়ি চট্টগ্রামে। সুমনা সরকার বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন ২০০৯ সালে। ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর মামলার রায় হয়। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল করে পিএসসি।
[৮] আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে দেন। পরে গত বছরের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি হলে পিএসসিকে অসমাপ্ত মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
[৯] চলতি বছরের ১ জুন সুমনা সরকার পিএসসির চেয়ারম্যান বরাবর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। ৩০ জুন পিএসসি সচিবালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) নুর আহমদের সই করা চিঠিতে সুমনাকে জানানো হয়েছে, রায় বাস্তবায়নে সুমনার মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নেয় কমিশন। মৌখিক পরীক্ষার পরই সুমনাকে নিয়োগের সুপারিশ করেছে পিএসসি।
[১০] এসএসসি, এইচএসসির পর প্রথমবারেই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সুমনা। বৃত্তির টাকায় পড়াশোনা শেষ করেছেন।
[১১] সুমনা সরকার বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি মাথা নত করিনি। পিএসসির বর্তমান সিদ্ধান্তে আমি সন্তুষ্ট। আশা করব আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ জ্যেষ্ঠতা মেনে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :