ডেস্ক রিপোর্ট: সংবিধান মেনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই। তবে আইন প্রণয়ন করলেই হবে না, আইনটি হতে হবে জনস্বার্থে- দলীয় বা কোটারি স্বার্থে নয়- এবং এটি প্রয়োগও হতে হবে জনগণের স্বার্থে, যাতে কয়েকজন সৎ, নির্ভীক ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পান।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশন নিয়োগ ‘আইন ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শিরোনামে অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান সভাপতিত্ব করেন। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় আলোচনায় ব্যারিস্টার আমির-উর ইসলাম, বিচারপতি এম এ মতিন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল, ড. শাহদীন মালিক, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুর্শিদ, মানবাধিকারকর্মী এবং নারীনেত্রী শিরিন হক, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ড. আব্দুল আলিম, আর্টিকেল নাইনটিনের ফারুক ফয়সাল প্রমুখ অংশ নেন।
বৈঠকে সুজন-এর পক্ষ থেকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২১’ নামে একটি আইনের খসড়া উপস্থাপন করা হয়।
খসড়ায় নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের লক্ষ্যে প্রাক্তন একজন জ্যেষ্ঠতম প্রধান বিচারপতিকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, কমিশনে নিয়োগ দেয়ার জন্য ধারা ৪ এর অধীন যোগ্যতা ও গুণাবলিসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে প্যানেল তৈরির লক্ষ্যে ধারা ৪ এর অধীন যোগ্যতা ও গুণাবলিসম্পন্ন ব্যক্তিদের অনুসন্ধান করিবে। একইসঙ্গে কমিশনে নিয়োগ দেয়ার লক্ষ্যে নাগরিকদের নিকট হইতে নাম আহ্বান করিবে।
প্রাপ্ত নামগুলো থেকে কমিটি যাচাই-বাছাই করে ন্যূনতম ৫ জন নারীসহ ২০ জনের একটি প্রাথমিক তালিকা ও তাদের যোগ্যতা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন গণবিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করার কথা খসড়ায় বলা হয়। এরপর প্রাথমিক তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের সম্পর্কে অনুসন্ধান কমিটি গণশুনানির আয়োজন ও তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে সর্বসম্মতভাবে ন্যূনতম ২ জন নারীসহ ৭ জনের একটি প্যানেল প্রস্তুত করে রাষ্ট্রপতিকে জমা দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। অনুসন্ধান কমিটির কর্তৃক প্রকাশিত ও প্রেরিত প্যানেল হতে রাষ্ট্রপতি তালিকা প্রাপ্তির ৭ দিন পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন পদে নিয়োগ প্রদান করার কথা বলা হয়েছে খসড়ায়।
আলোচনায় এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমাদের সংবিধানের ধারাগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইনটি নিয়ে কাজ করতে হবে। এর আগেও ২০১১ সালে আমরা একটি খসড়া প্রস্তাব করেছিলাম, দুঃখজনক হলেও এটি নিয়ে পরবর্তীতে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। আমাদের এমন একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করা উচিত যেটি দূরদর্শী হবে, শুধু বর্তমান প্রেক্ষাপটে নয়।
ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম বলেন, সংবিধানের অন্য দেশের প্র্যাকটিসগুলো কীভাবে হচ্ছে, আমরা সে বিষয়ে আবারো চিন্তা করতে পারি।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, অনুসন্ধান কমিটিতে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি উল্লেখ না করে আপিল বিভাগ কর্তৃক মনোনীত একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বা বিচারপতি বলা যায়। কমিশনের কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে প্রথম চারজন নিয়োগ দিয়ে এক বছর পর আরেকজন কমিশনার নিয়োগ দেয়ার বিধান রাখা যেতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমানে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গঠিত সার্চ কমিটির ব্যাপারে বলবো, এটির মাধ্যমে জনগণকে ধোঁকা দেয়ার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে।
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু নির্বাচন করা এবং সে নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। সেই লক্ষ্যে এ ধরনের একটি আইন হলে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে আমি মনে করি। তবে এটাও সত্য যে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে না পারলে কোনো কমিশন দিয়েই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবো না।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, অবশ্যই একটি ভালো নিয়োগ আইন আমাদের দরকার। কিন্তু এই সরকার ব্যবস্থাই সুষ্ঠু নির্বাচন করা অসম্ভব। গত ১৩ বছর ধরে পুলিশ ও প্রশাসনকে যেভাবে সাজানো হয়েছে এতে কোনো শক্তিশালী কমিশনের পক্ষেও ফাংশন করা সম্ভব হবে না। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইন করার পাশাপাশি সরকার ব্যবস্থা নিয়েও কথা বলতে হবে।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমাদের ধাপে ধাপে এগুতে হবে। এখন নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলাপ হচ্ছে এরপর নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আলাপটাই ধাপে ধাপে করতে হবে।