সুজন কৈরী: [২] ফাতেমা। বয়স আনুমানিক ২০ বছর। বাবাকে হারিয়েছে ছোটবেলায়। লঞ্চ ডুবিতে বাবা মারা যাওয়ার পর কোথাও ঠাঁই না পেয়ে জীবন কেটেছে পথে-ঘাটে। কখনো কাজ করেছে মানুষের বাসায়। একসময় পরিচয়ের সূত্রে এক গার্মেন্টস কর্মীকে বিয়ে করে সংসার পাতে। কিছুদিন যেতে না যেতেই শুরু হয় স্বামীর নির্যাতন। নির্যাতনে ফাতেমার গর্ভে থাকা কন্যা সন্তান নষ্ট হয়ে যায়।
[৩] এরপর জীবনে আবারও নেমে আসে দুর্ভোগ। গত বছর করোনাকালে স্বামী তাকে ছেড়ে গিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে সংসার গড়ে। ফাতেমা তখন আবারও সন্তান সম্ভবা। নিজের কথা, অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করে শুরু করে সংগ্রামী জীবন।
[৪] সিদ্ধান্ত নেয় রিকশা চালানোর। প্রথমে কেউ দিতে রাজি না হলেও তার অনুনয় বিনয়ে মহাজন তাকে রিকশা চালানোর জন্য দেয়। দৈনিক ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা জমা দিতে হয়। এভাবেই শুরু হয় রিকশার প্যাডেলে তার সংগ্রামী জীবনের নতুন অধ্যায়। সন্তান পেটে নিয়েও তাকে রিকশার প্যাডেল চাপতে হয়েছে। কিন্তু আবারও মৃত ছেলের জন্ম দেয় ফাতেমা।
[৫] মানসিকভাবে ভীষণ ভেঙ্গে পড়ে সে। তার কষ্ট সইতে না পেরে তার বোন নিজের মেয়েকে দিয়ে দেয় তাকে। এই মেয়েই এখন তার সব। মেয়ের জন্যই নতুন করে যুদ্ধ শুরু করেছে ফাতেমা। পথে পথে রিকশা চালিয়ে জীবন ধারণের চেষ্টা করছে। এখন তার একটি রিকশা চাই।
[৬] বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা পরম মমতায় পাশে দাঁড়িয়েছেন ফাতেমার। তিনি জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী এই নারীর হাতে তুলে দিয়েছেন ব্যাটারিচালিত একটি নতুন রিকশা।
সোমবার রাজধানীর রমনায় পুনাকের কেন্দ্রয় কার্যালয়ে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে ফাতেমার হাতে তুলে দেন নতুন রিকশা। পাশাপাশি দিয়েছেন উপহার সামগ্রী।
উপহার পেয়ে আবেগাপ্লুত ফাতেমা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পুনাক সভানেত্রী তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, আজ থেকে তুমি আমার মেয়ে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তখন ফাতেমা বলে, জীবনে কখনো এত আদর কেউ করেনি। আজ আমি ভালোবাসা পেয়েছি, নতুন মা পেয়েছি।
[৭] উপহার সামগ্রীর মধ্যে ছিলো- ফাতেমা ও তার মেয়ের জন্য পোশাক, হিজাব, রেইনকোট, চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণ ইত্যাদি।
[৮] পুনাকের বর্তমান সভানেত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এভাবেই অসহায় দুস্থ মানুষের জীবনে আশার আলো ফুটিয়ে তোলার জন্য অহর্নিশ কাজ করছেন।