আয়াছ রনি: [২] কক্সবাজার জেলায় ৬টি স্থানে প্রতিবছরের মতো পর্যটন ও শীত মৌসুমের শুরু থেকে কক্সবাজারের নাজিরারটেক, মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ, টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ, শাপলাপুর, সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়াসহ জেলার বিভিন্ন শুঁটকি মহালে শুঁটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে।
[৩] উপকূলীয় বেড়িবাঁধের উপর ও বিশেষ উপায়ে তৈরি বাঁশের মাচায় সূর্যের তাপে কাচা মাছ শুকিয়ে শুঁটকিতে পরিণত করা হয়।
সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন শুঁটকি মহালে দেখা যায়, শুঁটকি মহালে শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ মাছ পরিষ্কার করছে, কেউ মাচায় শুটকি করার জন্য মাছ তুলছেন। কথা বলার সময় নেই শুটকি শ্রমিকদের।
[৪] শুঁটকি মহালের ব্যবসায়ী মো.সুমন জানান, শীত ও পর্যটন মৌসুম শুরুর আগে থেকে শুঁটকি মহালে শুটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে, বছরের অধিকাংশ সময় বিরুপ আবহাওয়া থাকায় ও করোনাকালীন উৎপাদন বন্ধ ছিলো। এখন আবার পুরোদমে শুরু হয়েছে শুটকি উৎপাদন। এবছরও রূপচাদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা পোপা, টেকচাঁদা, হাঙ্গর, ফাইস্যা, নাইল্যামাছসহ ২০-২৫ প্রজাতির মাছ শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে ।
বর্ষাকাল ছাড়া বছরের নয়মাস এখানে শুঁটকি উৎপাদন চলে। তবে, সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলে উৎপাদনে একটু ভাটা পড়ে।
[৫] নাজিরারটেক শুঁটকি ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আতিক উল্লাহ জানান, প্রায় ১শ একর এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা এ শুঁটকি মহালে রয়েছে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক আড়ত। দেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকি মহাল হলো এই নাজিরারটেক। এখানে ব্যবসায়ীও আছেন প্রায় দুই হাজার। এ মহাল থেকে সবমিলে প্রতিদিন প্রায় দুইশ টন বিভিন্ন জাতের শুঁটকি উৎপাদন করা হচ্ছে। প্রতি মৌসুমে উৎপাদন হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন শুঁটকি। যার বাজারমূল্য প্রায় দুইশ কোটি টাকা। জেলার ৬ টি স্থান মিলে প্রতি মৌসুমে শুটকি উৎপাদন হয় আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন যার বাজার মূল্য দেড় হাজার কোটি টাকা। এসব শুঁটকি মহলে উৎপাদন কাজে নিয়োজিত আছেন প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক।
[৬] জেলার শুটকি মহল গুলো থেকে দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫ মেট্রিক টন শুটকি দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাকে করে ব্যবসায়ীরা নিয়ে যায়।
[৭] তিনি বলেন, প্রতিবছর সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব দেওয়া হলেও শুঁটকি মহালে সুযোগ-সুবিধা তেমন নেই বললেই চলে। বিশেষ করে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে শুঁটকির উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছ।
[৮] জেলা মৎস্য কর্মকতা এসএম খালেকুজ্জামান বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে আহরণ করা বিশেষ করে ছোট আকৃতির মাছগুলো দিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। কক্সবাজারে উৎপাদিত শুটকি দিয়ে সমগ্র দেশের মানুষের চাহিদা মিটানো হচ্ছে। এমনকি শুঁটকির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
[৯] কীটনাশক ব্যবহারের কথা স্বীকার করে এই মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, এ প্রবণতা শুটকি উৎপাদনে দিন দিন কমে আসছে। নিরাপদ শুঁটকি উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করতে কয়েকটি এনজিও সংস্থার সহযোগিতায় আমরা ইতোমধ্যে জেলার শুটকি ব্যবসায়ী এবং উৎপাদনকারীদের নিয়ে আমরা উদ্বুদ্ধকরণ সভা করে যাচ্ছি।
আপনার মতামত লিখুন :