ইমরুল শাহেদ: ‘আম্মাজান’ খ্যাত বিশিষ্ট অভিনেত্রী শবনমকে এই ছবিটির পর আর পর্দায় তাকে দেখা যাচ্ছে না। করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর ফিরে আসা শবনমের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমাকে কাজে লাগাবার মতো পরিচালক কোথায়, লেখক কোথায়? আমি কাজ করতে চাই। কিন্তু আমার উপযোগী চরিত্রতো লাগবে। সেজন্য একজন পরিচালকও লাগবে যিনি আমাকে কাজে লাগাতে পারবেন। একজন মহিলা প্রযোজক এসছিলেন আমাকে একটি ছবিতে নেওয়ার জন্য। তিনি আমাকে গল্প শোনালেন। আমি চরিত্রটি আরও রি-শাফল করতে বললাম। তাকে বললাম আমি ভারত যাচ্ছি। এক মাস পর ফিরে ফিরব। ফিরে গল্প শুনব। ফিরে এসে তার সঙ্গে আবার বসলাম। তাতে কোনো লাভ হলো না। তিনি গল্প একটুও পরিবর্তন করেননি। কিভাবে ছবি করব? কাজী হায়াৎ নির্মাণ করেছেন আম্মাজান। এমনকি তিনিও আমাকে আম্মাজানের মতো চরিত্র দিতে পারছেন না।
কথা প্রসঙ্গে তিনি পাকিস্তানে আটকে পড়ার অভিজ্ঞতা ও বিমানবন্দরের ঘটনা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, খুবই ভালো হয়েছে। পাকিস্তানে এখন অনেক চ্যানেল হয়েছে। তারা আমাকে অনেক সম্মানের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার নিয়ে খুব ভালো ভালো অনুষ্ঠান তৈরি করেছে। ওদের সম্মানীও ভালো। আমার চাহিদা অনুযায়ী তারা সম্মানী দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সেখানে অবস্থানকালে যতটুকু জেনেছি ঐ সময়ের বেশিরভাগ শিল্পী বেঁচে নেই। প্রতিবার যখন আমি যাই জেবার (পাকিস্তানের বিখ্যাত অভিনেত্রী) সঙ্গে দেখা করি। এবারও দেখা হয়েছে। অবশ্য তিনি অসুস্থ ছিলেন। সম্প্রতি উনার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। দেখা হয়েছে জেবার স্বামী অভিনেতা মোহাম্মদ আলীর সঙ্গেও। নায়ক নাদিমের সঙ্গে দেখা হয়েছে। উনি নতুন একটি ছবির শুটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন। সিনেমার বাইরে আমি, জেবা, শামিম আরা দীবা, মোহাম্মদ আলী, ওয়াহিদ মুরাদ, নাদিম ভালো বন্ধু ছিলাম। পাকিস্তানে অবস্থানকালে তিনি অন্ধভক্ত শাহজিয়া মল্লিকের বাসায় ছিলেন। তিনি বলেন, শাহজিয়া আগে ভক্ত হলেও এখন ছোটবোনের মতো হয়ে গেছে। আমি যখন একা থাকি, তখন ভাবি একজন শিল্পীর জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে ভক্তদের ভালোবাসা। যেটা আমি সব সময়ই পেয়েছি।
ফেরার পথে ঢাকা বিমানবন্দরে তাকে করোনা টিকার কাগজের জন্য আটক করেছিলেন। পরে তাকে চিনতে পেরে বিষয়টি সম্মানজনকভাবে মীমাংসা হয়ে যায়। তাকে সম্মানের বিমানবন্দর ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি ভুলবশত করাচি বিমানবন্দরে কাগজটা হারিয়ে ফেলেছেন। উর্দু চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়া নিয়ে তিনি বলেন, আমি তো ভাতে-মাছে বাঙালি। আমি যখন এ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয় জীবন শুরু করি তখন এদেশে ছিলো উর্দু সিনেমার একচ্ছত্র আধিপত্য। প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানে। শামিম আরা, জেবা, রানী, দীবা এরা পাকিস্তান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও তারা সমান জনপ্রিয় ছিলেন। আমার মতো নবীন, তার উপর বাঙালি মেয়েÑ ওনাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দীর্ঘ বছর উর্দু ছবির জনপ্রিয় নায়িকা হতে পেরেছিলাম। এটা সম্ভব হয়েছিলো আমার অধ্যবসায়, কাজের প্রতি শ্রদ্ধা এবং গুণি পরিচালকদের পৃষ্ঠপোষকতায়।