নিউজ ডেস্ক: ভারত থেকে গরু আমদানি গত কয়েক বছর যাবত বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এখন তার পরিবর্তে আমদানি হচ্ছে মাংস। মাংস আমদানি বেড়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে দেশীয় গরুর খামারগুলো। খামারিদের অভিযোগ, আমদানি করা মাংসের দাম কম হওয়ায় দেশীয় খামারি ও গরু ব্যবসায়ীরা মাংসের বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। এ অবস্থায় দেশীয় গরুর খামার রক্ষার স্বার্থে বিদেশ থেকে মাংস আমদানি বন্ধের দাবি উঠেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় জানায়, এখন প্রতি মাসে প্রায় ১ হাজার মেট্রিক টন মাংস আমদানি হচ্ছে। আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির কারণে মাংসের আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। ফলে গত কয়েক মাস ধরে মাংস আমদানি কিছুটা কমেছে বলে আমদানিকারকরা দাবি করেছেন।
দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রচুর খামার গড়ে উঠেছে। নতুন করে অনেকেই এই ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছেন। ফলে দেশীয় উত্পাদন দিয়ে দেশের মাংসের চাহিদা মিটিয়ে আরো উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। ভারত থেকে গবাদি পশু আমদানি বন্ধ থাকলেও প্রতি মাসে প্রচুর মাংস আমদানি হচ্ছে। আমদানি করা মাংস অনেক কম দামে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, হোটেলে সরবরাহ দিচ্ছে আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। অতি মুনাফার সুযোগ থাকায় এরই মধ্যে অনেকেই নতুন করে মাংস আমদানিতে যুক্ত হচ্ছেন।
দেশে মাংস আমদানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশীয় খামারিরা। এই খাতে নতুন করে বিনিয়োগে অনেকেই ঝুঁকি মনে করছেন। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা জানান, সরকারিভাবে মাংস আমদানিতে নিরুত্সাহিত করা হচ্ছে। মাংস আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এর বাইরে ৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত রয়েছে।
জানতে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল হক বলেন, ডিউটি বাড়িয়ে মাংস আমদানি নিরুত্সাহিত করা হচ্ছে। গত দুই মাস আমদানি কিছুটা কমেছে। বছরে ১০ শতাংশ হারে মাংসের চাহিদা বাড়ছে। অনেক শিক্ষিত লোক গরুর খামারে বিনিয়োগ করছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়াও দুই-তিনটি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে মাংস আমদানি হচ্ছে। আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা জানান, ডিউটি বাড়িয়ে দেওয়ায় আমদানি খরচ বেশি পড়ছে। তাই মাংস আমদানি কমে গেছে।
মাংস আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন হালাল মিট ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, ‘গত পহেলা জুন থেকে ডিউটি বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৩৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। ফলে প্রতি কেজিতে ১৫০ টাকা ডিউটি দিতে হচ্ছে। এতে মাংসের আমদানি খরচ পড়ছে কেজি প্রায় সাড়ে ৪০০ টাকা। আমদানি কমে যাওয়ায় দেশীয় বাজারে মাংসের দাম বেড়ে গেছে। দেশের ৫০/৬০ জন মাংস আমদানি ব্যবসায় যুক্ত রয়েছে।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মালিক মোহাম্মদ ওমর বলেন, মাংস আমদানির কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে উত্পাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সরকারিভাবে দেশীয় খামারিরা কোনো ভর্তুকি পায় না। অথচ ভারত ডেইরি খাতে সরকারিভাবে বছরে ১৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকে। ফলে তারা কম দামে মাংস বিক্রি করতে পারছে। দেশীয় ডেইরি খামারি রক্ষার স্বার্থে মাংস আমদানি বন্ধ করা প্রয়োজন।
বর্তমানে প্রাণিসম্পদ কার্যালয় কন্টেইনার থেকে মাংসের নমুনা সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরিতে পাঠায়। সেখানে তিনটি বিষয় যাচাই করা হয়। সেগুলো হচ্ছে গরুর বা মহিষের মাংস কি না, শূকরের কোনো উপকরণ আছে কি না ও জনস্বাস্থ্যে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া রয়েছে কি না।
জানতে চাইলে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরির প্রধান প্রফেসর ড. হিমেল বড়ুয়া বলেন, প্রতিদিন গড়ে দুই-তিনটি মাংসের নমুনা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় আমাদের কাছে মান যাচাইয়ের জন্য পাঠায়। কোন বিষয় পরীক্ষা করে দেখতে হবে তারা চিঠিতে উল্লেখ করে দেয়। এই পর্যন্ত যে মাংস পরীক্ষা করা হয়েছে তাতে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতিকর কোনো উপকরণ পাওয়া যায়নি। সূত্র: ইত্তেফাক