নুর উদ্দিন: [২] যেদিকে চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। এক পাহাড়ের সঙ্গে যেন আরেক পাহাড়ের আলিঙ্গন। চারদিকে সবুজের সমারোহ। বিকেল বেলা পাখিদের কলরব ও বাতাসের মনমাতানো শব্দে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। ছোট ছোট টিলা আর পাহাড়ে সাজানো বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্তিযুদ্ধের ৫নং সাব-সেক্টর সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাঁশতলা।
[৩] মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধার সমাধি বাঁশতলায়। সমাধির কাছেই স্মৃতিসৌধ। বাঁশতলার তিন দিকে মেঘালয়ের পাহাড় থাকায় দেখতে অসাধারণ লাগে স্মৃতিসৌধ। এখানে মৌলা নদীর ওপর স্লুইসগেট ও টিলার ওপর জুমগাঁও। বাঁশতলা দেশপ্রেমী ও রুচিশীল প্রকৃতি প্রেমিদের মন কেড়েছে।
[৪] প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব ঐতিহাসিক বাঁশতলা পর্যটন এলাকা হিসেবে সর্ব মহলে পরিচিত পেয়েছে। কিছুদিন আগে বাঁশতলার ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে অনেকে অবগত ছিলেননা। বাঁশতলায় সরকারি ভাবে মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয়।
[৫] ডাউক থেকে সুনামগঞ্জ এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ সীমান্তবর্তী অঞ্চল নিয়ে গঠিত মুক্তিযুদ্ধের পাঁচ নম্বর সেক্টর। ভারতের গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বাঁশতলা দেশের একমাত্র ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিত।
[৬] স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে এদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু ১১টি সেক্টরের মধ্যে ১০টি সেক্টরই ছিল ভারতের অভ্যন্তরে। আর দেশের মধ্যে একটি সেক্টরই ছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যার নাম ঐতিহাসিক বাঁশতলা। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঁশতলা ও আশপাশ এলাকার যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদেরকে সমাহিত করা হয় বাঁশতলার নির্জন এ স্থানে। জাতীয় পতাকার আদলে রাঙ্গানো হয়েছে পাঁচ নম্বর সেক্টরের শহীদদের কবর। এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন কর্ণেল মীর শওকত আলী।
[৭] ভারতীয় সীমানার কোল ঘেষে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাহাড়ের উপর ঝুমগাঁও। এখানে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী পরিবারের বসবাস। তাদের সাজানো-গোছানো ঘর-বাড়ির পরিবেশ অত্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
[৮] ভারত সীমান্তে পাহাড়ী ঝর্ণা চোখে পড়ার মত। সীমান্তের মৌলা নদীর উপর স্লুইসগেট দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এখানে ঠান্ডা ও শীতল স্বচ্ছ পানিতে সাঁতার কাটলে সহজেই দেহের ক্লান্তি দূর করে। স্লুইসগেটে পানির মনোহারি শব্দে গোটা এলাকা যেন মূখরিত হয়ে আছে। স্লুইসগেট ছাড়িয়ে কিছুটা সামনে গেলেই দেখা মিলবে মুক্তিযুদ্ধের ৫নং সাব-সেক্টর। এখানে কিছুটা ত্রিভুজ আকৃতির শহীদ মিনারের বেধিতে বসলে প্রাকৃতিক ঠান্ডা বাতাস মন ছুয়ে যাওয়ার মত। এখানকার আশপাশের পরিবেশ খুবই মনোরম। সবুজ পাহাড় আর নীল আকাশের মিতালি দেখে মনে হবে যেন আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায়।
[৯] সরকারী অর্থায়নে স্মৃতিসৌধ এলাকায় পর্যটকদের জন্যে নির্মাণ করা হয়েছে একটি রেষ্ট হাউজ, হকনগর কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা। স্মৃতি সৌধের পাশে রয়েছে আদিবাসী পাহাড়। এখানে রয়েছে গারোদের বসবাস। পাহাড়ে উঠে প্রকৃতির প্রকৃত চেহারা অবলোকন করতে প্রতিদিন হাজারো প্রকৃতি প্রেমীরা এসে জড়ো হয়। ঝুমগাঁও এলাকায় বসবাস করে আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের পরিবার। তারা নিজ হাতে তৈরী করে নিজেদের ব্যবহার্য যাবতীয় আসবাব পত্র। গারো পাহাড়ে রয়েছে মিশনারী স্কুল, উপাসনালয় ও পাহাড়ের চুড়ায় উঠার জন্যে সরকারী অর্থায়নে নির্মিত করা হয় একটি সিড়ি।