নিউজ ডেস্ক: দেশে প্রতিবছর গড়ে দেড় লাখ মাদকদ্রব্যের নমুনার রাসায়নিক পরীক্ষা করা হয়। অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা এসব মাদকের ৯৫ শতাংশ মাদক দ্রব্য বলে প্রমাণিত হচ্ছে। ৫ শতাংশের কম আলামত মাদক দ্রব্য নয় বলে প্রমাণিত হয়। আর প্রায় ১০ শতাংশ মাদকদ্রব্যের মধ্যে মাদকের উপাদান কম বা ভেজাল পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি ভেজাল পাওয়া যায় ইয়াবা ও হেরোইনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষতিকর মাদকে ভেজাল হিসেবে যেসব উপাদান মেশানো হয়, সেগুলো আরো বেশি ক্ষতিকর। এসব ভেজাল উপাদান শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির পাশাপাশি মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। অ্যামফিটামিন আর ক্যাফেইনের ইয়াবার সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, চকের গুঁড়া, ট্যালকম পাউডার, গ্লুকোজ, প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, স্টিয়ারিক এসিড, ভ্যানিলা পাউডার এবং প্যারাফিন মেশানো হচ্ছে। হেরোইনের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে সার, সোডা, চিনি, স্যাকারিন, নাপাসহ সাদা ট্যাবলেটের গুঁড়া। তবে দুই সংস্থার পরীক্ষাগারে মাদক শনাক্তের হারের সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। কালের কণ্ঠ
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস-ফরেনসিক কেমিক্যাল ল্যাব) নাজমুল করিম খান বলেন, প্রায়ই পরীক্ষায় নেগেটিভ বা নকল পাওয়া যায়। এটা ৫ শতাংেশর মতো। মূলত ভুল তথ্যসহ বিভিন্ন কারণে নকল মাদক জব্দ করা হতে পারে। আবার কারবারিরা প্রতারণাও করে। ভেজালও পাওয়া যাচ্ছে। এতে অনেক ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যায়। টেস্টে হারটা চলে আসে।
ডিএনসির কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রধান পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘আমরা যতগুলো মাদকের চালানের নমুনা পরীক্ষা করি, তার মধ্যে ৫০ শতাংশ ইয়াবা। এর মধ্যে ইয়াবায় ভেজাল সবচেয়ে বেশি। অনেক কিছুর মিশ্রণে বানানো হচ্ছে নকল ইয়াবা। এগুলো সেবন করলে মাদকসেবীরা সেভাবে উদ্দীপনা বোধ করে না। তখন তারা একাধিক ইয়াবা সেবন করে। ক্ষতিকর মাদক এমনিতেই বিপজ্জনক। এসব মাদক আরো বেশি বিপদ বাড়াচ্ছে।’
দুই সংস্থার পরীক্ষাগারে আলাদাভাবে মাদকদ্রব্যের পরীক্ষা ও আলামতের তথ্য সংরক্ষিত নেই বলে জানান দায়িত্বশীল এই দুই কর্মকর্তা। ২০১৫ সাল থেকে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব বা রাসায়নিক পরীক্ষাগারে মাদকের আলামত পরীক্ষা করা হচ্ছে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯০ অনুযায়ী, ডিএনসির পরীক্ষাগার ছাড়া অন্য কোথাও মাদকদ্রব্য পরীক্ষার বিধান ছিল না। তবে বিশেষ আদেশে এসব পরীক্ষা চলছিল। ২০১৮ সালে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পুলিশকেও মাদকদ্রব্য পরীক্ষার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ঢাকার মহাখালী ছাড়াও চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে দুটি পরীক্ষাগার আছে সিআইডির।
সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষাগারের তথ্য মতে, ২০১৫ সালে ৩৫ হাজার ৯৭টি, ২০১৬ সালে ৪১ হাজার ৪৩৪টি, ২০১৭ সালে এক লাখ দুই হাজার ৪৯৬টি, ২০১৮ সালে এক লাখ ৪৯ হাজার ২৭৬টি, ২০১৯ সালে এক লাখ ৬১ হাজার ৩৫৩টি এবং ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে ৬৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। আলামতের মধ্যে হেরোইন, গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, ইনজেকশন, বিদেশি ও চোলাই মদ ছিল। তবে কতগুলো পরীক্ষায় মাদক প্রমাণিত হয়নি সে তথ্য পরীক্ষাগারে সংরক্ষিত নেই।
বিষয়টি নিয়ে নাজমুল করিম খান বলেন, আলাদা করে তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। তবে প্রায়ই বড় চালান মেলে। গত মাসে রাজশাহীতে ২২টি হেরোইন আলামত পরীক্ষার সব নেগেটিভ আসে। পরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পরীক্ষায় দেখা গেছে চারটি পজিটিভ, অর্থাৎ ভেজালের মধ্যে হেরোইন ছিল। আর ১৮টি নেগেটিভ। কোনো হেরোইন ছিল না।
ডিএনসির পরীক্ষাগারের তথ্য মতে, ২০১৬ সালে সেখানে ৫০ হাজার ৮০৬টি আলামত পরীক্ষায় দুটি নেগেটিভ আসে। ২০১৭ সালে ৬৮ হাজার ৭২৪টি আলামত পরীক্ষায় একটিতে পাওয়া যায়নি মাদক। ২০১৮ সালে ৫১ হাজার ৪৪৫টি, ২০১৯ সালে ৩৭ হাজার ৩২২টি, ২০২০ সালে ১৫ হাজার ৯৩০টি এবং ২০২১ সালের আট মাসে ৯ হাজার ১০২টি আলামত পরীক্ষায় সবটিতে মাদক মিলেছে। পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘কতগুলো কী মাদক, তা আলাদা করে রাখা হয় না। তবে ১০ শতাংশের বেশি ইয়াবায় ভেজাল দেওয়ার প্রমাণ মিলছে। এখন আইসসহ নতুন মাদকও পাচ্ছি আমরা।’