আবু হাসাদ: [২] রাজশাহীর পুঠিয়ায় ঠিকাদারের কাছে দুই বছরের জন্য খেলার মাঠ ভাড়া দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। মাঠটি গোপনে মোটা অংকের ভাড়ায় মৌখিক চুক্তিও করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন খেলার মাঠ বন্ধ থাকায় স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
[৩] বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টম্বর) সকালে উপজেলার ধোকড়াকুল হাই স্কুলে গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের ঠিকাদার পুরো স্কুল মাঠটি ড্রাম ও বাঁশ দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। আর ভেতরে রড়, ইট-পাথর বালি মজুদ রেখেছেন। তার মধ্যে ঠিকাদারের ৩০-৩৫ জন শ্রমিক বিভিন্ন কাজ করছেন। সেখানে জুয়েল রানা নামের একজন শ্রমিকের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকে পুঠিয়া-বাগমারা ভবানীগঞ্জ পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়ক ও বিভিন্ন স্থানে কালভাট নির্মাণ কাজ হচ্ছে। এই কাজ শেষ হতে আরো এক বছরের বেশি সময় লাগবে। তাই ঠিকাদারের সকল কাজের মাল-ছামানা রাখতে এই স্কুল মাঠ ভাড়া নেয়া হয়েছে।
[৪] স্থানীয় আমজাদ হোসেন নামে একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, এই এলাকার আশেপাশের ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলা করার মতো একটি মাত্র মাঠ। সেটাও স্কুল কর্তৃপক্ষ ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন। যার কারণে এখানে দীর্ঘদিন থেকে খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে। আর কতদিন বন্ধ থাকবে তাও আমাদের জানা নেই।
[৫] নাম প্রকাশ না করা শর্তে হাই স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, পুঠিয়া-তাহেরপুর সড়ক নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে মৌখিক ভাবে মাঠটি দুই বছরের জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে। যার প্রতি মাসের ভাড়া ৫০ হাজার টাকা। তবে প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকজন খাতা-কলমে কত টাকা চুক্তি করেছেন তা আমাদের জানায়নি।
[৬] ধোকড়াকুল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাস্মদ আলী বলেন, মাঠটি মুলত হাই স্কুলের। তবে ক্লাসের পর ফাঁকা সময়ে প্রাথমিকের ছেলে-মেয়েরা এই মাঠে খেলাধুলা করে। কিন্তু এখন পুরো মাঠে সড়ক নির্মাণের বিভিন্ন উপকরণ রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের স্কুলে আসা যাওয়ার ১২ ফিট রাস্তার বেশীর ভাগ অংশ ঠিকাদারের লোকজন দখলে রেখেছে। আর কতদিন এখানে নির্মাণ সামগ্রী থাকবে সেটা আমার জানা নেই।
[৭] হাই স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, স্কুল মাঠ কিভাবে এবং কত টাকায় ভাড়া দেয়া হয়েছে তা শুধু প্রধান শিক্ষক জানেন। আপনার বিস্তারিত কিছু জানার থাকলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
[৮] তবে ধোকড়াকুল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্কুল মাঠটি ভাড়া দেয়া হয়েছে এটা সঠিক। তবে কত টাকায় এবং কতদিনের জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে তা এই মুহুর্তে আপনাকে বলতে চাচ্ছি না।
[৯] এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা আক্তার জাহান বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ ছিল। সে সময় ঠিকাদারের লোকজন হয়তো স্কুল মাঠ ব্যবহার করেছেন এতে কোনো বাধা ছিল না। এখন স্কুলে পাঠদান শুরু হয়েছে। আর দীর্ঘদিনের জন্য স্কুল মাঠ ভাড়া দেয়ার কোনো অপসন নেই। যদি তা হয় তবে এর সকল দায়দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। এ বিষয়ে আগামি দুই এক দিনের মধ্যে ওই স্কুল মাঠ তদন্তে লোক পাঠানো হবে। তাদের প্রতিবেদনের উপর যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :