বণিক বার্তা: কভিডজনিত কারণে বিশ্বজুড়েই প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি সরবরাহ চেইন। বিঘ্নিত হচ্ছে পণ্য পরিবহন। সরবরাহে বিলম্বের কারণে বেড়েছে দামও। তবে যুক্তরাজ্যে এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। কভিড ও ব্রেক্সিটের কারণে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ চালক সংকট। হাজার হাজার পেট্রল ও গ্যাস স্টেশন জ্বালানিশূন্য হয়ে পড়েছে। বাকিগুলোও শূন্য হওয়ার পথে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জ্বালানি সরবরাহে সেনাবাহিনী ব্যবহারের কথাও ভাবছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সরকার।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ বহুজাতিক জ্বালানি তেল ও গ্যাস কোম্পানি বিপি স্বীকার করেছে, তার এক-তৃতীয়াংশ পেট্রল স্টেশনগুলোতে প্রধান দুই গ্রেডের জ্বালানি শেষ হয়ে গেছে।
যুক্তরাজ্যজুড়ে প্রায় ৫ হাজার ৫০০টি স্টেশনের প্রতিনিধিত্ব করা পেট্রল রিটেইলারস অ্যাসোসিয়েশন (পিআরএ) জানিয়েছে, তাদের ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ সদস্য জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। এছাড়া শিগগিরই বাকিগুলোও জ্বালানিশূন্য হয়ে পড়বে বলেও জানিয়েছে পিআরএ।
এ পরিস্থিতি দ্বিতীয় অসন্তোষের শীতের (উইন্টার অব ডিসকনটেন্ট) দিকে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে ১৯৭৮-৭৯ সালে দেশজুড়ে সরকারি-বেসরকারি কর্মীরা হরতালের ডাক দিলে থমকে যায় ব্রিটিশ অর্থনীতির চাকা। এ সংকটই ‘অসন্তোষের শীত’ নামে পরিচিত। বর্তমানে আবার এ পরিস্থিতির কারণে সংশ্লিষ্টরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ক্রিসমাসের কেনাকাটার মৌসুমে দেশজুড়ে দোকানগুলো ফাঁকা হয়ে যেতে পারে।
চলমান সংকটকে আরো গভীর হতে বাধা দেয়ার লক্ষ্যে দেশটির বাণিজ্য সচিব কোয়াসি কোয়াটাং, পরিবহন সচিব গ্রান্ট শ্যাপস ও স্বরাষ্ট্র সচিব প্রীতি প্যাটেসসহ মন্ত্রীরা রোববার দুপুরে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে তারা সেনাবাহিনী ব্যবহারে ‘অপারেশন এস্কালিন’সহ বিকল্প বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
এরই মধ্যে শত শত সৈন্য দিয়ে ৮০টি ট্যাংকারের একটি রিজার্ভ বহর সরবরাহের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। যদিও এ পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হতে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। গত সপ্তাহে অপারেশন এস্কালিনকে একটি বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। যদিও সরকারি সূত্রগুলো এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় জ্বালানি সংস্থাগুলোকে সাময়িকভাবে প্রতিযোগিতা আইন থেকেও বাদ দেয়া হচ্ছে। কোয়াসি বলেন, সরবরাহ চেইনে কিছু সমস্যার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে শোধনাগার ও টার্মিনালগুলোতে এখনো প্রচুর পরিমাণে জ্বালানি মজুদ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অপারেশন এস্কালিন ও অন্য প্রস্তাবগুলো গতকাল বিকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করার কথা। সে সময় আয়োজিত সভায় মন্ত্রীরাও মানুষের আচরণ প্রভাবিত করার চেষ্টা এবং আতঙ্কে অধিক কেনাকাটা বন্ধে তাৎক্ষণিক সমাধান নিয়ে আলোচনা করারও কথা ছিল।
মন্ত্রীরা মনে করেন, জনসাধারণ স্বাভাবিকভাবে কেনাকাটা করলে জ্বালানি ঘাটতির প্রকৃত মাত্রা কম হতো। ট্রাকচালকের ঘাটতি সামান্য কিছু প্রভাব ফেললেও সেটা সামাল দেয়া যেত। যদিও সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রকাশিত প্রতিবেদন ও ছবিতে জ্বালানি স্টেশনগুলোর বাইরে দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। পিআরএ জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে জ্বালানির চাহিদা গত সপ্তাহের তুলনায় ৫০০ শতাংশ বেড়েছে।
সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, তীব্র এ সংকট আরো কিছুদিন অব্যাহত থাকবে। তবে মানুষের আতঙ্কিত হয়ে কেনাকাটা বন্ধ না হলে এমন পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ সংকট ব্রিটিশ খুচরা বিক্রেতাদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়াম জানিয়েছে, ক্রিসমাস সামনে রেখে সরবরাহ চেইনের সমস্যা সমাধানের জন্য অভিবাসন নিয়ম শিথিল করার পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। এছাড়া এ পদক্ষেপ নিতেও অনেক দেরি হয়ে গেছে।
গ্রুপটির খাদ্য ও টেকসই নীতির পরিচালক অ্যান্ড্রু অপি বিবিসিকে বলেন, উৎসব মৌসুমে ক্রেতারা খুব কম বিকল্প, কম পণ্য এবং সম্ভবত ফাঁকা দোকান দেখতে পাবেন। এ পরিস্থিতি হতাশাজনক। কারণ এটি সহজেই এড়ানো যেত।
লেবার পার্টির ছায়া পরিবহন সচিব জিম ম্যাকমাহন দাবি করেন, ট্রাকচালকদের পরীক্ষা সহজতর করা, চালকদের জন্য প্রায় পাঁচ হাজার অতিরিক্ত ভিসা এবং পোলট্রি শ্রমিকদের জন্য আরো পাঁচ হাজার ভিসা দেয়ার উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় মন্ত্রীরা যদি আরো উদ্যোগ না নেন, তাহলে দোকানের তাকগুলো খালি থাকবে, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ সরবরাহ হবে না এবং ক্রিসমাসের মৌসুম ধ্বংস হয়ে যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :