শিরোনাম
◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৫৫ রাত
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৬:২৩ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: শিরোনাম তোমার জন্মদিনে

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতার পরিবারের প্রথম সন্তান হিসেবে তোমার জন্ম। তোমাকে তোমার বাবা আদর করে ডাকতেন, হাসু বলে। তুমি যখন একটু একটু বড় হচ্ছিলে মধুমতি তীর থেকে অধির তোমার অঙ্গ জড়িয়ে দিতো, সে কারণেই বোধহয় তুমি মধুমতিাকে এতো ভালোবাসতে। নদীর তীরে তোমাকে প্রায়ই হাঁটতে দেখা যেতো, তেমন একটি ছবি এখনো অনেকের মতো আমার ফেসবুকে আছে। তুমি টুঙ্গিপাড়াকে ভীষণ ভালোবাসতে। তারপর একদিন তুমি টুঙ্গিপাড়া ছেড়ে ঢাকায় শৈশবকাল পরিবারের সঙ্গে কাটাতে এসেছিলে। তখন তোমার পিতা কখনো থাকেন জেলে, কখনো থাকেন আন্দোলনসংগ্রামে দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে জনসভা করে বেড়ান। খুব বেশি তার সময় ছিলো না তোমাদের দেওয়ার। তারপরও তোমাদের ভালোবাসতেন পরম আদর দিয়ে। তুমি কামাল, জামাল ও রেহানা পিঠাপিঠি বড় হচ্ছিলে। বড় বোন হিসেবে তুমি তাদের খুবই আপন করে নিয়েছিলে। তোমাদের মা তোমাদের যেমন দেখেছেন, স্বামী এবং তার রাজনীতিকেও নির্বিঘ্নে করেছেন। তোমাদের পড়ালেখার দায়িত্ব মা তোমাদের মা-ই একমাত্র কাধে তুলে নিয়েছিলেন।

১৯৬২ সালের আগে তোমাদের কোনো স্থায়ী নিবাস ছিলো না, কখনো ঢাকায়, আবার কখনো টুঙ্গিপাড়ায় ফিড়ে যেতে হয়েছিলো। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি হওয়ার পর তোমরা ঢাকায় স্থিত হয়েছিলে। তবে ঢাকায় চলার মতো অর্থ তোমাদের আসতো টুঙ্গিপাড়া থেকে, অনেকটা দিতেন শেখ লুৎফর রহমান, আর বাকিটা মায়ের জমি-জামা থেকে। কিন্তু সংসারে তোমাদের লেখাপড়া সামাজিকতা, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ৬০ দশকের বাস্তবতা থেকে মোটেও আলাদা ছিলো না। তুমি কলেজে পড়াকালেই রাজনীতিতে গভীরভাবে যুক্ত হয়ে পরেছিলে। বেশ জনপ্রিয় ছিলে তুমি, সে কারণে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তোমাকে ভিপি পদে নির্বাচিত করেছিলো। এরপর অবশ্য তোমার পিতা জেলে বসেই তোমার ভবিষ্যৎ পরিবারে কথা ভেবেই ড.ওয়াজেদ মিয়া সঙ্গে তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করেন। ৬৯ সালের গণঅভ্যুথানে পিতাকে কারাগার থেকে মুুক্ত করে আনার জন্য ছাত্রগণ আন্দোলনে তুমিও অংশ নিয়ে ছিলে। রাজনীতি এই বহমানতা তোমার জীবনেও নীরবে চলছিলো।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিতা পাকিস্তানের কারাগারে তুমি মায়ের সঙ্গে রেহানা ও রাসেলসহ ধানমন্ডিতে কারাবন্দি ছিলে তখন তোমার কোলজুড়ে এসেছিলো সজীব ওয়াজেদ জয়। স্বাধীনতার পর পিতা নতুন রাষ্ট্র নির্মাণে ব্যস্ত, তিনি কখনো ভাবেননি তুমি বা তোমাদের ভাই-বোনদের কাউকে তার রাজনীতির উত্তরাধিকার হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। রাজনীতির পথ তার কাছে ছিলো একেবারেই রাষ্ট্র ও জগণের কল্যাণের বিষয়। কিন্তু এমন নেতাকে ৭৫ সালের সপরিবারে ঘাতকরা যখন ৩২ নম্বর বাড়িতে হত্যা করেছিলো, তখন তুমি ও রেহেনা দেশে ছিলে না। তোমরাই শুধু ভাগ্যক্রমে বেচে গেলে না, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ফিরে আসার প্রকৃত উত্তারাধিকারকে জীবিত পেয়েছিলো।

৮১ সালে তোমার ফিরে আসা যেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পুনর্জীবনের যাত্রা শুরু হলো। সেই থেকে তুমি স্থান করে নিলে বঙ্গবন্ধুর অনুউপস্থির জায়গাটিতে। ধীরে ধীরে তোমারও কদম পড়তে থাকে বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া কাদা-মাটির এই বাংলাদেশের পথে ঘাটে। তুমিও ছুটে চলেছিলে এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে। জনগণ তোমার মাঝেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি যেন দেখতে পাচ্ছিলো, তবে তোমার পথ ছিলো ভীষণভাবে কর্দমায় ভরা, পিচ্ছিল, পদে পদে কাটায় কাটায় ভরা। শত্রুরা তোমাকে তাড়িয়ে বেড়াতে থাকে, ১৫ আগস্টে তাদের বন্দুকের গুলিটি তোমার পেছনে তাড়া করছিলো। তার পরেও তুমি থেমে ছিলে না, ভয় পেয়ে থেমে ছিলে না।

১৯৯৬ সাল থেকে তুমি জনগণের ভোটে র্নিবাচিত হয়ে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত কর্মসাধনে আত্মোনিয়োগ করলে। পাঁচ বছর তুমি দেশটাকে অনেককিছু দিতে পেরেছো। জনগণেই তোমাকে অস্থায় নিয়ে ছিলো। ২০০১ সালের নির্বাচনেও তোমাকেই আবার বিজয়ী হিসেবে দেখতে চেয়েছিলো কিন্তু দেশে-বিদেশে ষড়যন্তকারীরা অনেক কিছু ওলট-পালট করে দিয়েছিলো। দেশটাকে তারা ৭১-৭৫ সালের মতো এবং তাদের অনুসারীদের দিয়ে ৫ বছরে একেবারে উল্টো দিকে নিয়ে যাওয়ার তৎপরতায় ছিলো। বাংলাদেশ তখন জঙ্গিবাদী ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিচিতি পেয়েছিলো। ২০০১-২০০৬ সময়ের চাদিকেই হত্যা, বোমাবাজি, অসাম্প্রদায়িক শক্তি বিনষ্ট করা তোমাকেসহ নেতা কর্মীদের একপলকের মধ্যে উড়িয়ে দেওয়ার গ্রেনেডবাজি করেছিলো ২১ আগস্ট। তুমি প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলে। তোমার প্রাণে বেঁচে থাকাটা বাংলাদেশের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। সেটি তুমি ৯৬-২০০১ প্রমাণ দিয়েছিলে, আবার ২০০৬ সালের পর থেকে তোমার নেতৃতে সূচিত আন্দোলন, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিরুঙ্কুষ বিজয়, ২০০৯ সালে সরকার গঠন পরবর্তীকাল থেকে একের পর এক তুমি অবিশ্বস্য কর্মসূচি নিয়ে তুমি দেশে ও বিদেশে প্রমাণ করতে শুরু করেছো। তুমি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করেছো।

১৯৭১ সালের যুদ্ধরাপরাধীদের বিচার, যা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি, তা তুমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে সম্পন্ন করেছো। তুমি অন্ধকারে আছন্ন বাংলাদেশকে বিদ্যুতায়িত করার মাধ্যমে শুধু আলোকিতই করোনি, দেশের অর্থনীতি, সমাজ ও মানুষের জীবনকে বদলে দিয়েছো। তুমি এনালগ বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করেছো। ৫০০শ ডলার বাৎসরিক আয়ের দেশকে এখন দুই হাজার তিনশ (২৩০০) ডলারে উন্নীত করেছো, স্বল্প আয়ের দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে মর্যাদা এনে দিয়েছো। দেশে আজ আর দুর্ভিক্ষের কথা কেউ বলে না। স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান, ঢাকায় মেট্টোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চলতে যাচ্ছে, চট্টগ্রামে কর্ণফুলি টানেল আর কিছু দিন পরেই দেখা যাবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ছোট-বড় মেগা প্রকল্প তোমার মাথায় দেশের জন্য বাস্তবে রূপ দিতে ঘুরে বেড়াচ্ছো। আশ্রয়হীনদের তুমি এতো সাশ্রয়ে আধা-পাকা বাড়ি দেওয়ার প্রকল্পে এই বৈশি^ক মহামাড়িতেও বাস্তবায়ন করে চলেছো। তোমার কর্মে আর কয়টির নাম আমি বলবো। এই তালিকাটি বিশাল, কারণ ১২ বছরে তুমি বাংলাদেশকে মেগাপ্রকল্পের বিশালতায় চড়িয়েছো। এখন আমাদের কেবলই বড় বড় বাস্তবতায় মানুষকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে হচ্ছে। বাংলাদেশ সত্যি এখন ‘এসডিজির’ বাস্তবায়নে সক্ষমতা অর্জনে প্রমাণ দিয়েছো, এবারে তোমার জন্মদিনে জাতিসংঘ যে পুরস্কারটি দিয়েছে সেটি তোমার প্রাপ্য, তুমি সেটি দিয়েছো বাংলাদেশের জনগণকে। আমরা তোমার জন্মদিনে প্রাণঢালা অভিনন্দনসহ তোমাকে আরও দীর্ঘদিনের জন্য পেতে চাই। তুমি বেঁচে থাকো বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য, পৃথিবীর হতদরিদ্র, নিপীড়িত শোষিত ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। লেখক: শিক্ষাবিদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়