শরীফ শাওন: [২] বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি বই পড়ছিলাম, সেখানে ন্যাপ এর সহ সভাপতি আব্দুল জলিলের স্ত্রী ক্ষমতাকেন্দ্রিকতা সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছিলেন।
[৩] বর্তমান উন্নয়নকে একপেশে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এ উন্নয়ন উপরের দিকে খাড়াখাড়ি উঠে যাচ্ছে, এতে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। সর্বোপরি বৈষম্য সৃষ্টি করছে, যতো উন্নয়ন ততো বৈষম্য হচ্ছে।পাকিস্তান আমলে আমরা আঞ্চলিক বৈষম্যের কথা জানতাম, যার কারণে দেশ ভাগ হলো। তখনো শ্রেণি বৈষম্য ছিলো, আজকে তা কতো বেড়েছে, কতো মানুষ কর্মহীন হয়েছে, মহামারি গেলেই আমরা সেটা উপলব্ধি করতে পারবো। তিনি বলেন, সূর্যমুখী সাংবাদিকতা বিপজ্জনক ঘটনা। বর্তমানের উন্নয়ন দুর্নীতি সৃষ্টি করছে। কীভাবে দুর্নীতি এবং সূর্যমুখী প্রথা আসছে তা নিয়ে ভাবতে হবে।
[৪] বরেণ্য সাংবাদিক আতাউস সামাদের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি আতাউস সামাদকে ছাত্র হিসেবে পেয়েছি, তার বিবর্তন দেখেছি। তার গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে ছিলো শেখ মুজিবুর রহমানের চিঠি মওলানা ভাসানীর কাছে পৌঁছে দেয়া। এরকম ঘটনা একজন সাংবাদিকের জীবনে কম আসে। এ কাজ অন্য কেউ করতে পারতেন না।
[৫] এছাড়াও তিনি গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের যুদ্ধ এবং এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সবাই পদত্যাগ করেছেন, বিবিসিতে তার এই সংবাদে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন ত্বরান্বিত করে।
[৬] স্বাধীনতা একদিকে মালিক অন্যদিকে রাষ্ট্র হরণ করছে, এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, সংবাদ এখন মালিকের কাছে চলে যায়, অনেক সম্পাদকের কাজ মালিকদের পাবলিক রিলেশন অফিসার হিসেবে কাজ করা। একারণেই আতাউস সামাদ সাংবাদিকদের ঐক্য তৈরি করতে কাজ করেছেন।
[৭] অনুষ্ঠানে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ. অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, শওকত মাহমুদ, নাঈমুল ইসলাম খান, ইলিয়াস খান, শামসুল হক জাহিদ, মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ, মোস্তফা কামাল মজুমদার, নুরুল আমিন রোকন, কাদের গনি চৌধুরী, একেএম মহসীন, মুন্নী সাহা, কবি হেলাল হাফিজ, কবি হাসান হাফিজ, প্রমুখ ত্যাগী ও নির্ভীক সাংবাদিক আতাউস সামাদের কর্মময় অবদান সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেন।
[৮] বক্তারা বলেন, আতাউস সামাদ ক্লাসে ও বাইরে সর্বত্র ছিলেন শিক্ষক। অতুলনীয় কর্মনিষ্ঠা, দক্ষতা, প্রজ্ঞা ও পরিশ্রমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি। আপোসহীন সাংবাদিক, সত্যের প্রতীক। তিনি নির্ভরযোগ্য সংবাদ পরিবেশন করতেন। কর্মব্যস্ততা তিনি পছন্দ করতেন।
[৯] অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ২০২১ সালের আতাউস সামাদ স্মৃতি পুরস্কার তুলে দেন রয়টার্সের ফটোসাংবাদিক এবিএম রফিকুর রহমানের হাতে। ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম বারের মতো এ পুরস্কার প্রবর্তন করা হলো।
[১০] রফিকুর রহমান রয়টার্স থেকে ‘জার্নালিস্ট অব দ্যা ইয়ার টু থাউজ্যান্ড সেভেন’ সম্মাননায় ভূষিত হন। সারা বছরের কাজের গুরুত্ব ও মর্যাদা বিবেচনায় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ক্যামেরাম্যানকে প্রতিবছর এই সম্মাননা দেয়া হয়। বাংলাদেশের ফটো সাংবাদিক হিসেবে তিনিই প্রথম এ স্বীকৃতি পেয়েছেন। তিনি দীর্ঘ ৫১ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছেন। ১৯৮১ সালে তিনি রয়টার্সের বাংলাদেশ ব্যুরোতে যোগ দেন। সম্পাদনা: হাসান হাফিজ
আপনার মতামত লিখুন :