প্রতিনিধি, বগুড়া: [২] বাউল মেহেদী আরও বলেন, গ্রামের মন্ডলরা (মাতব্বর) আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। নাস্তিক বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে। তারা গ্রামের মসজিদের ইমামের পরামর্শে আমাকে জোর করে ঘর থেকে বের করে মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছেন। শরীরে জ্বর থাকা অবস্থায় গোসল করানোর পর কলেমা শাহাদত পাঠ করান।
[৩] তিনি বলেন, মন্ডলরা অপরাধ থেকে বাঁচতে আমার বাবাকে হুমকি দিয়ে মিথ্যাচার করাচ্ছেন। অথচ, আমি মুসলমান, পূজা করি না, তাহাজ্জুদ ফজর ও রহমতের নামাজ পড়ি। জিকির করি। তাদের ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয়ে আছি।’
[৪] বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অজ্ঞাত স্থান থেকে ফোনে এসব কথা বলেন।
[৫] শিবগঞ্জ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, কিশোর বাউল নিরাপদে তার ওস্তাদের কাছে আছে। এখনও এলাকায় পুলিশ মোতায়েন আছে। অন্য দুই মাতব্বরকে গ্রেপ্তারে এলাকায় অভিযান চলছে। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের জুড়ি মাঝপাড়া গ্রামের বেল্লাল হোসেনের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। একমাত্র ছেলে বাউল শিল্পী মেহেদী হাসান।
[৬] মেহেদী হাসান জানান, সংসারে অভাবের কারণে দাদা আলম মন্ডলের বাড়িতে থাকেন। ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পেরেছেন। ছোটবেলা থেকে বাউল গানের আসক্ত ছিলেন। তাই বাউল গান শেখার জন্য ওস্তাদ মতিয়ার রহমান মতিন বাউল ও হারমনি মাস্টার খলিলুর রহমানের সঙ্গে চলাফেরা শুরু করেন। তাদের অনুসরণ করে বড় চুল রাখেন এবং সাদা রঙের গামছা, ফতুয়া ও লুঙ্গি পরিধান করেন। দুই ওস্তাদের সঙ্গে থেকে মুক্তা সরকার, কাজল দেওয়ান, লতিফ সরকার, আমজাদ সরকার ও শাহ আবদুল করিমের অন্তত ১০০ বাউল মুর্শিদি গান মুখস্থ করেন।
[৭] ওস্তাদদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে গান থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তিনি জানান, তার সাদা পোশাকে চলাফেরা ও বিভিন্ন এলাকার অনুষ্ঠানে বাউল মুর্শিদি গান পরিবেশন করায় গ্রামের মন্ডল (মাতব্বর) শাফিউল ইসলাম খোকন, শিক্ষক মেজবাউল ইসলাম, তারেক রহমান, ফজলু মিয়া, আবু তাহের, মসজিদের ইমাম মোখলেসুর রহমান প্রমুখ ষড়যন্ত্র শুরু করেন। মন্ডলরা তাকে এবং ওস্তাদদের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করতেন। প্রতিবাদ করলে মন্ডলরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
[৮] মেহেদী হাসান জানান, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে তিনি ঘরে জিকির-আসগার করছিলেন। এ সময় অতর্কিতে ঘরে ঢুকে মন্ডলরা তাকে টেনে বের করেন। এরপর জুড়ি মাঝপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মোখলেসুর রহমানের কাছে ফোনে নেয়া পরামর্শে মেশিন দিয়ে তার মাথা ন্যাড়া করে দেন। এরপর শরীরে জ্বর থাকা অবস্থায় তাকে গোসল করিয়ে কলেমা শাহাদত পাঠ করতে বাধ্য করেন। তিনি বলেন, ফজলু মিয়া নামে এক আসামি বিছানার বালিশের নিচ থেকে দেড় হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যান। যাওয়ার আগে মন্ডলরা বাউল গান বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। অন্যথায় তাকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। বাধ্য হয়ে তিনি বাড়ি ছেড়ে ওস্তাদ মতিন বাউলের আশ্রয়ে চলে যান। এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ থানায় পাঁচ মাতবরের বিরুদ্ধে মামলা করেন মেহেদী হাসান। ২১ সেপ্টেম্বর রাতে পুলিশ মাতবর শাফিউল ইসলাম খোকন, শিক্ষক মেজবাউল ইসলাম ও তারেক রহমানকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন তাদের আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে ঘটনার পর থেকে বাউল মেহেদী হাসানের বাবা বেল্লাল হোসেন প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং সাংবাদিকদের বলছেন, তার ছেলে বাউল গানের নামে ঘরে মূর্তি পূজা করতেন। তাই তিনি নিজে তার ছেলের মাথা ন্যাড়া ও তাকে কালেমা পড়িয়েছেন। এতে গ্রামের মন্ডলদের কোন দোষ নেই। তার ছেলে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :