রাজু চৌধুরী : [২] এক সৌদি আরব প্রবাসীর প্রায় সাড়ে ২৮ লাখ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে কথিত জ্বিনের বাদশাসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানা পুলিশ।
[৩] বৃহস্পতিবার ২৩ সেপ্টেম্বর পুলিশ জানায়, প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তির নাম মোঃ আবুল হাছান সহিদ। পুলিশ জানায়,
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী গলিতে বুধবার অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
[৪] গ্রেপ্তারকৃত কথিত জ্বিনের বাদশা হলেন, মোঃ আব্দুল মান্নান (৫৮) তার সহযোগী মোঃ জোবাইর হোসাইন রিজভী (২৩) ও আবু তৈয়ব (৫৮)।
[৫] জানা গেছে, মোঃ আবুল হাছান সহিদ সৌদি আরব প্রবাসী। তিনি দীর্ঘ ২২ বছর সৌদি আরবে থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তিনি সৌদি আরব মক্কা শরীফের পাশে আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী ছিলেন। সৌদি আরবে তিনি ৫টি আবাসিক হোটেল পরিচালনা করতেন। আবাসিক হোটেল ব্যবসাটি সৌদি আরবের স্থানীয় আদনান সাঈদ আল সাদী নামক (কপিল) এর নিয়ন্ত্রণাধীনে পরিচালিত হত। সৌদি আরবের নিয়ম মোতাবেক সৌদি নাগরিক আদনান সাঈদ আল সাদীর নামে ব্যাংক একাউন্ট খুলে তার ব্যবসায়ের সমস্ত টাকা উক্ত ব্যাংক একাউন্টে জমা হত। আদনান সাঈদ আল সাদী জনৈক মোঃ আবুল হাছান সহিদকে ছুটি কাটানোর জন্য বাংলাদেশে পাঠায়। তিনি বাংলাদেশে ছুটি শেষে পুনরায় সৌদি আরবে ফেরৎ যেতে চাইলে দেখেন যে, তার ভিসাটিতে সৌদি আরবে প্রবেশ নিষিদ্ধ সীলমোহর দেওয়া। তিনি আর সৌদি আরবে যেতে পারেননি।
পরবর্তীতে বুঝতে পারেন, সৌদি নাগরিক আদনান সাঈদ আল সাদী (৪২) পরিকল্পিতভাবে তার ব্যবসায়ের সমস্ত টাকা এবং হোটেল সমূহ আত্মসাৎ করার জন্য তাকে সৌদি আরব প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।
[৬] আবুল হাছান সহিদ প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে জীবন যাপন করতে থাকেন। গত ২০১৯ইং সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি কোতোয়ালী থানাধীন হাজারী গলিস্থ স্বর্ণের দোকানে তার স্ত্রীর স্বর্ণ বিক্রয় করার জন্য গেলে স্বর্ণের দোকানের কর্মচারী আবু তৈয়বের পরিচয় হয়। তিনি স্বর্ণ বিক্রয়ের কারণ জিজ্ঞাসা করলে প্রবাসী আবুল হাছান সহিদ তার ঘটনা খুলে বলেন। ঘটনা শুনার পর উক্ত বিষয়ের সমাধান করার একটা উপায় আছে পরামর্শ দিয়ে মোবাইল নম্বরটি সংগ্রহ করে। পরবর্তিতে মোবাইলে ফোন করে মোঃ আবুল হাছান সহিদকে কোতোয়ালী থানাধীন লালদিঘীর পাড়স্থ হোটেল আল ফাতাহ এর ৩য় ৩লায় নিয়ে যায়। সেখানে কথিত জ্বিনের বাদশার সাথে পরিচয় করানো হয়।
[৭] জ্বিনের বাদশা নিজেকে একজন পীর ও জ্বিন পালে বলে জানায়। ধর্মীয় আধ্যাত্বিক শক্তি এবং জ্বিনের মাধ্যমে সৌদি নাগরিক আদনান সাঈদ আল সাদী (৪২) কে বাংলাদেশে এনে দিতে পারবে এবং বাংলাদেশে এসে তার সম্পূর্ণ টাকা ফেরৎ দিয়ে যাবে বলে জানিয়ে প্রলোভনে ফেলে। হারানো টাকা এবং সৌদি নাগরিককে বাংলাদেশে ফেরত আনতে হলে শুরুতে দুই লাখ টাকা এবং ৩ ভরি স্বর্ণ ও আমেরিকান এক হাজার টাকার ডলার চায় কথিত জ্বিন। পরে কথিত জ্বিনের বাদশা আব্দুল মান্নান প্রবাসীকে কোতোয়ালী থানাধীন লালদিঘী শাহী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে পবিত্র কোরআন শরীফ ছুয়ে শপথ করায়। এই গোপন আলাপের বিষয়টি কারো কাছে বললে তার মুখ দিয়ে রক্ত বের হবে এবং তার পালিত জ্বিন তাকে গলাটিপে হত্যা করবে বলে ভয় দেখায়। এভাবে বিভিন্ন কৌশলে দফায় দফায় মোট ২৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
[৮] সিএমপির কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দীন গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রতারিত হতে হতে জ্বিনের বাদশাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ প্রতারক জ্বিনের বাদশা সহ সংঘবদ্ধ চক্রটিকে গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে।
[৯] ওসি নেজাম উদ্দীন আরো বলেন, উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ মেহেদী হাসান গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে বুধবার কোতোয়ালী থানাধীন হাজারী গলি এলাকা থেকে আবু তৈয়ব (৫৮)’কে গ্রেপ্তার করে।
[১০] জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে পলাতক আসামিদের ব্যাপারে তথ্য দেয় সেই তথ্যের ভিত্তিতে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মেহেদী হাসান সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্স সহ কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানা হোয়াক্যাং এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোঃ আব্দুল মান্নান ও মোঃ জোবাইর হোসাইন রিজভী কে গ্রেপ্তার করে। অভিযানের সময় এক আসামি পালিয়ে যায় বলে জানান, এস আই মেহেদী হাসান।
আপনার মতামত লিখুন :