শিরোনাম
◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৩:০৮ রাত
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৩:০৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

টিকায় বাড়ছে গতি কমছে ভোগান্তি, বুথের সংখ্যা দ্বিগুণ করার নির্দেশ

যুগান্তর: করোনাভাইরাস রোধে টিকা দেওয়ায় গতি বেড়েছে। আগের তুলনায় চলতি সপ্তাহে বেড়েছে টিকা প্রয়োগের সংখ্যা। আগে গড়ে দিনে ৩-৪ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হলেও এখন দেওয়া হচ্ছে ৫ লাখের বেশি। বেড়েছে প্রথম ডোজের সংখ্যাও। ফলে দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় থাকা মানুষের ভোগান্তি কমতে শুরু করেছে।

তবে এই গতি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মাসে দুই কোটি ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। এরই অংশ হিসাবে প্রতি কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে নির্দেশ চলে গেছে। পাশাপাশি প্রান্তিক পর্যায়ে বয়স্কদের জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। বর্তমানে ইপিআইয়ের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে সপ্তাহে দুদিন অন্যান্য রোগের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এদের মাধ্যমেই এখন সপ্তাহে এক বা দুদিন দেওয়া হবে করোনার টিকা। সপ্তাহে একদিন প্রতিটি কেন্দ্রে স্পট রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ‘অগ্রাধিকার’ ভিত্তিতে ষাটোর্ধ্বদের টিকার আওতায় আনা হবে। টিকায় গতি ফিরলেও প্রবাসীদের বিড়ম্বনা কমছে না।

কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘুরেও তারা প্রয়োজনীয় টিকা পাচ্ছেন না। দেশে টিকার তেমন সংকটও নেই। বর্তমানে প্রায় দেড় কোটি ডোজ মজুত আছে। নিয়মিত আসছে বড় চালান। বুধবারও চীন থেকে ৫০ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। রাত দুইটায় বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ টিকার চালান পৌঁছায়। এ মাসেই আসবে আরও ৫০ লাখ। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে চীন থেকে ৫০ লাখ করে টিকা পাইপলাইনে রয়েছে। পাশাপাশি কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে শিগগিরই ফাইজারের ৫০ লাখ টিকা আসবে।

প্রতিদিন দুই লক্ষাধিক মানুষ সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করছেন। বিগত সময়ে পর্যাপ্ত মজুত না থাকায় তা প্রয়োগে ধীরগতি ছিল। প্রতিদিন যে হারে নিবন্ধন হতো তার চেয়ে টিকা দেওয়া হতো কম। ফলে এক সময় নিবন্ধন করে প্রায় এক কোটি মানুষ অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু গত এক সপ্তাহে অন্য চিত্র দেখা গেছে। দৈনিক নিবন্ধনের চেয়ে বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। ফলে অপেক্ষমাণের তালিকাও ধীরে ধীরে কমছে। ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুরক্ষা অ্যাপ ও পাসপোর্টের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছিলেন ৪ কোটি ১৬ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৭ জন। ওইদিন পর্যন্ত টিকার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন ৬১ লাখ ৬০ হাজার ৭৬২ জন। বুধবার পর্যন্ত সারা দেশে নিবন্ধন করেছেন ৪ কোটি ৩৪ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫০ জন। অর্থাৎ গত আট দিনে নিবন্ধন করেছে ১৮ লাখ ২৮ হাজার ৭৮৩ জন। গড়ে প্রতিদিন ২ লাখ ২৮ হাজার ৫৯৭ জন নিবন্ধন করেছেন। এ সময়ে টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯১ ডোজ। শনিবার থেকে বুধবার এ ৫ দিনেই টিকা দেওয়া হয়েছে ২৭ লাখ ৮৫ হাজার ৯০৫ জনকে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৪ জন ও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয় ১১ লাখ ২৭ হাজার ১৩১ জন। এ ৫ দিনে গড়ে পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার ১৮১ জনকে টিকা দেওয়া হয়। যা এ সময়ে নিবন্ধনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। বুধবার পর্যন্ত ৪৪ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪ জন নিবন্ধন করে অপেক্ষায় ছিলেন।

জানতে চাইলে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম আলমগীর বলেন, আমরা অধিকসংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। ইতোমধ্যে দৈনিক টিকা প্রয়োগের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছি। সামনে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। এছাড়া ষাটোর্ধ্বদের স্পট রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে দেওয়ার প্রক্রিয়াটি শিগগিরই শুরু হবে। নিয়মিতর পাশাপাশি বিশেষ ক্যাম্পইনের মাধ্যমেও প্রস্তুতি চলছে। সবমিলিয়ে মানুষের যে ভোগান্তি ছিল তা অনেকাংশে কমে আসবে।

৭ ফেব্র“য়ারি দেশে টিকাদান শুরু হয়। দেশে বর্তমানে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্মÑ এ চার কোম্পানির টিকা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন উৎস থেকে এসেছে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি ডোজ। এর মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ কোটি ৩৬ লাখ ২৯ হাজার ৬৪০ ডোজ, মডার্নার ৫৫ লাখ, ফাইজারের ১১ লাখ ৬২০ ও সিনোফার্মের ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৭১ হাজার ৬২০ ডোজ। বুধবার পর্যন্ত সবমিলিয়ে টিকা নিয়েছেন ৩ কোটি ৯০ লাখ ৩১ হাজার ৮৯৬ জন। এর মধ্যে ২ কোটি ৩৫ লাখ ১৩ হাজার ৩৬২ জনকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১ কোটি ৫৫ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৪ জন।

এদিকে টিকা প্রয়োগে গতি এলেও ভোগান্তি কমেনি প্রবাসীদের। তারা টিকার জন্য প্রতিদিন কেন্দ্রে ভিড় করছেন। নির্দিষ্ট দিনে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কেন্দ্রে এসেও তারা টিকা পাচ্ছেন না। বিদেশে যেতে তাদের প্রয়োজন অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার বা মডার্নার টিকা। কিন্তু সরকারের হাতে এই মুহূর্তে এসব টিকার পর্যাপ্ত মজুত নেই। কিছু টিকা রয়েছে যা সীমিত পরিসরে দেওয়া হচ্ছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। ফলে টিকা না পেয়ে অনেকে নির্দিষ্ট সময়ে বিদেশ যেতে পারছেন না। ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে কারও কারও। প্রয়োজনীয় টিকা না পেয়ে প্রবাসীরা বিক্ষোভও করছেন। বর্তমানে সারা দেশে বেশিরভাগ কেন্দ্রেই চীনের সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অনেক দেশ সিনোফার্মের টিকা অনুমোদন দেয়নি। ফলে প্রবাসীরা সিনোফার্মের টিকা দেওয়ার সুযোগ পেয়েও নিচ্ছেন না। মডার্না, ফাইজার কিংবা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জন্য তারা অপেক্ষায় রয়েছেন।

সূত্র জানায়, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার কিংবা মডার্নার পর্যাপ্ত টিকা না পাওয়া পর্যন্ত এ ভোগান্তি কমার সম্ভাবনা নেই। সরকার এসব টিকা পেতে নানা মাধ্যমে চেষ্টা চালাচ্ছেন। অক্টোবরে ভারত টিকা রপ্তানির ঘোষণা দিয়েছে। আগামী মাসে ভারতের কাছে পাওনা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেতে চেষ্টা চলছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোভ্যাক্সের আওতায় ৫০ লাখ ফাইজারের টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে। সেগুলো দ্রুত আনতে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ৮৯ লাখ টিকা বছর শেষে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। বুধবার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অনুদান হিসাবে ৭১ লাখ ফাইজার ও ১৮ লাখ মডার্নার টিকা পাবে বাংলাদেশ। নতুন বরাদ্দ পাওয়া এ টিকা বছরের শেষ ভাগে দেশে আসবে।’

জানতে চাইলে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন বলেন, বর্তমানে করোনা সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। এ মহামারি থেকে বাঁচতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। বিগত সময়ে টিকার মজুত কম থাকায় চাহিদা অনুযায়ী তা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে অনেকেই ভোগান্তিতে পড়েন। দীর্ঘদিন নিবন্ধন করেও তারা টিকা পাননি। কিন্তু ধীরে ধীরে দেশে টিকার মজুত বাড়ছে। গতি আসছে প্রয়োগেও। তিনি বলেন, বর্তমানে দৈনিক যে পরিমাণ টিকা দেওয়া হচ্ছে এর চেয়ে বেশি দেওয়ার সক্ষমতা আমাদের আছে। মাসে দুই কোটি ডোজ টিকা দিতে বিশেষ ক্যাম্পেইনেরও প্রয়োজন নেই। নিয়মিত কেন্দ্রে দৈনিক টিকা প্রয়োগ বাড়ালেই সেই লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব।

প্রবাসীদের টিকা নিয়ে বিড়ম্বনা প্রসঙ্গে মোশতাক হোসেন বলেন, টিকা নিয়ে বিশ্ব রাজনীতি ও কয়েকটি দেশের মুনাফার বলি হচ্ছি আমরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সিনোফার্ম টিকার অনুমোদন দিলেও কয়েকটি দেশ সেটার স্বীকৃতি দিচ্ছে না। ফলে শুধু প্রবাসী নয়, সাধারণ অনেকেই এ ভোগান্তিতে পড়ছেন। এ সংকট নিরসনে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ফাইজার, মডার্না বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আনার পাশাপাশি সিনোফার্ম নেওয়ার পর প্রবাসীরা যাতে বিদেশে যেতে পারে সেই প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়