নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে গত ৯ আগস্ট মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) আফিফ আফতাব খান ওরফে সুহৃদ সরকার নামের এক ব্যক্তিকে মাত্র চার গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ বা আইসসহ গ্রেপ্তার করে। শুরুতে সুহৃদকে গ্রেপ্তারে ভাড়া বাসায় মাদকের আড্ডা বসানোর অভিযোগ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য পাননি ডিএনসি কর্মকর্তারা। তবে ওই সময় মডেল পিয়াসা, মৌ, মিশু হাসানসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলে হাউস পার্টিতে আইস কারবারের তথ্য উঠে আসে। ডিএনসির তদন্তে তথ্য মেলে, সুহৃদও হাউস পার্টিতে আইস ও ইয়াবা সরবরাহকারী। তাঁর দেওয়া তথ্যে নজরদারি করে ২০ আগস্ট বনানী, বারিধারা, ধানমণ্ডি, বনশ্রী ও খিলগাঁও থেকে ৫০০ গ্রাম আইস, পাঁচ হাজার ইয়াবাসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিএনসি। তদন্তের ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার উত্তরার আধুনিক হাসপাতালের সামনে থেকে জালাল উদ্দিন নামের আরেক কারবারিকে ২০ গ্রাম আইসসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার ৫৬০ গ্রাম আইস উদ্ধার করা হয়েছে, যেটি এখন পর্যন্ত ঢাকায় জব্দ হওয়া সবচেয়ে বড় চালান।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নজরদারির কারণে গাঢাকা দিয়ে থাকলেও কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন আইস সরবরাহকারীরা। তদন্তের সূত্রে গ্রেপ্তারের পর জানা গেছে ডিলারদের নেটওয়ার্কের তথ্য। সুহৃদের কাছ থেকে আইস সংগ্রহ করতেন জালাল। সুহৃদ সংগ্রহ করতেন মামুন ও রাসেল নামের দুজনের কাছ থেকে। দুজনই সম্প্রতি ডিবি পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে গাড়ি পোড়ানোর নাশকতার মামলায়। কারবারিরা গ্রেপ্তার হলে নেটওয়ার্ক না ভেঙে নিচের ক্ষুদ্র কারবারিরা এখন ডিলার হয়ে যাচ্ছেন। গুলশান-বনানীতে আইস কারবার চালানো জাবির খান, হোটেলকেন্দ্রিক শাকিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক সরবরাহকারী বার্মাইয়া নূর, নবী হোসেন, হারুনুর রশীদসহ অন্তত ১০ জন ডিলারের নাম পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
সূত্র জানায়, আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই মডেল, নায়িকা, প্রযোজক, মাদক কারবারিসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর অভিজাত এলাকায় হাউস পার্টিতে ইয়াবা ও আইসের কারবারের তথ্য উঠে আসে। নজরদারি বাড়ায় ডিএনসি। এ সময় ৯ আগস্ট মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের চারতলা একটি ভবনের নিচতলায় মাদকের আড্ডার তথ্য মেলে। এই সূত্রে গ্রেপ্তার করা হয় সুহৃদ সরকার ও তাঁর কথিত বোনকে। সুহৃদ সরকারের ভগ্নিপতিদের সবাই সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাঁর স্ত্রী রাজধানীর একটি বড় কলেজে শিক্ষকতা করেন। সুহৃদ বিদেশ থেকে বনসাই আমদানির আড়ালে আইস ও আইস সেবনের উপকরণ আমদানির চেষ্টা করেছিলেন। মামলাটি তদন্তকালে মোহাম্মদপুরের মতো বনানী, গুলশান, উত্তরা, বারিধারা ও বনশ্রীতে হাউস পার্টির ফ্ল্যাটের তথ্য পায় ডিএনসি। এর সূত্র ধরে ২০ আগস্ট অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় ১০ জনকে। তদন্তে নাম আসে চারটি সিন্ডিকেটের অন্তত ১০ জন ডিলারসহ শতাধিক ব্যক্তির। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন তরুণীও আছেন। তবে অভিযানের পর গাঢাকা দিয়েছেন কারবারিরা। এক সপ্তাহ আগে জাবির খান ও ইডেনের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের পায়নি তদন্তকারীরা। তথ্য মেলে—ছদ্মবেশে নিচের স্তরের খুচরা বিক্রেতারা এখন ডিলারের মতোই কাজ করছেন। এমন তথ্য পেয়ে গত সোমবার রাতে উত্তরা থেকে জালালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর কাছে ২০০ পিস ইয়াবা ও ২০ গ্রাম আইস পাওয়া যায়। তবে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, জালাল একজন ডিলার। তিনি সুহৃদের কাছ থেকে আইস কিনতেন। নজরদারির কারণে তেজগাঁওয়ের বাসা থেকে সরে ভিন্ন এলাকায় থাকছিলেন। ভেসপায় চেপে ছোট ছোট চালান নিয়ে বেড়ান তিনি। জালাল জানান, চক্রের বড় দুই ডিলার মামুন ও রাসেল গাড়ি পোড়ানোর মামলায় ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। অন্যদের মধ্যে রহিত, বাবর, হাসিব ডিএনসির অভিযানে ২০ আগস্ট ধরা পড়েছেন। এ কারণে অনেক খুচরা বিক্রেতা এখন সরাসরি আইস এনে বিক্রি করছেন। গুলশান-বনানীর কিছু তরুণীও আইস বিক্রি করছেন।
সূত্র মতে, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে ঢাকায় আইস আনার রুটেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ৫৬০ গ্রাম আইস ধরা পড়েছে।
জানতে চাইলে ডিএনসির সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, ‘ধারাবাহিক অভিযানে জালালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নজরদারির মাধ্যমে ৫৬০ গ্রাম আইসের চালান পাওয়া গেছে। এটিই এখন পর্যন্ত ঢাকায় বড় চালান। এর বেশি কিছু জানাতে পারছি না। শুক্রবার (আজ) সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।’