আরমান কবীর: [২] করোনা মহামারিতে দীর্ঘ দেড় বছর শিক্ষ প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে প্রায় তিন শতাধিক ছাত্রী। অল্প বয়সেই কিশোরী বধূ সেজে সংসারের বোঝা মাথায় নিয়েছেন তারা।
[৩] উপজেলার ২৭টির মধ্যে ১২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আড়াই শতাধিক ছাত্রীর বাল্যবিয়ের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ৯টি দাখিল মাদ্রাসার একটিতেই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ১৬ ছাত্রী।
[৪] সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে বাল্যবিয়ের যে চিত্র পাওয়া গেছে তা উদ্বেগজনক। এ নিয়ে শাফিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দা তাহমিনা বেগম জানান, তার প্রতিষ্ঠানে শুধু এসএসসি পরিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকেই ১৪ জনের বিয়ে হয়ে গেছে। অন্য শ্রেণীর সঠিক তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। মাত্র ক্লাস শুরু হওয়ায় সবাই বিদ্যালয়ে আসছে না। সবাই আসা শুরু করলে বাল্যবিয়ের সংখ্যা আরও বেড়েছে কিনা জানা যাবে।
৫] এলাসিন নলশোধা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মির্জা আখলিমা বেগম জানান, এ পযর্ন্ত তিনি ২৯ ছাত্রীর বাল্যবিয়ের তথ্য পেয়েছেন। সব শ্রেণীর তথ্য পেলে সংখ্যাটি বেড়ে যেতে পারে। অভিভাবকদের অসচেতনতাই বাল্যবিয়ের কারণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
[৬] বেলায়েত হোসেন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহসান হাবীব জানান, তার বিদ্যালয়ের ৪১ ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার।
[৭] এম এ করিম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, নতুন ১০ম শ্রেণির ১২৮ ছাত্রীর মধ্যে ৮ জনের বিয়ের সংবাদ পেয়েছি। অন্য শ্রেণিগুলোর বাল্যবিয়ের সংবাদ নিরূপনের চেষ্টা চলছে।
[৮] ডা.এফআর পাইলট ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক নিলুফার ইয়াসমিন জানান, তিনি ২৩ শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের তথ্য পেয়েছেন।
[৯] এছাড়া এলাসিন নাছিমুননেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩০, সুফিয়া কাশেম উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫, লাউহাটী এমএএম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩১, ড. আলীম আল রাজী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৭, মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান উচ্চ বিদ্যালয়ের (পুটিয়াজানী) ২৩, দেওজান সমাজ কল্যাণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬, সোনার বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ ও পড়াইখালী বালিকা দাখিল মাদ্রাসার ১৬ শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের তথ্য জানা গেছে
[১০] উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুজিবুল আহসান জানান, উপজেলার ২৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১২টি ও ৯টি মাদ্রাসার মধ্যে একটির তথ্য পাওয়া গেছে। তাতে দেখা গেছে, ১২টি বিদ্যালয়ের ২৫৩ ও ১টি মাদ্রাসার ১৬ ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।
[১১] তিনি আরোও জানান, উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঠিক তথ্য পেলে এ সংখ্যা ৩'শ ছাড়িয়ে যাবে। করোনাকালে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, সামাজিক কুসংস্কার ও অভিভাবকদের অসচেতনতাই বাল্যবিয়ের কারণ বলে জানান তিনি মনে করেন।
আপনার মতামত লিখুন :