মো. সামসুল ইসলাম: বিভিন্ন অনলাইল নিউজ পোর্টালে, সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষকদের নিয়ে একটা রিপোর্ট দেখে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ জন শিক্ষক মিলে একাডেমিক কাজের কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা মিনিবাস নিয়ে নাকি বিরুলিয়ার এক রিসোর্টে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সারাদিনে পর তারা রাতে এসে মিনিবাস যথারীতি ফেরত দিয়েছেন।
আমাদের তথাকথিত অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা বিশাল এক দুর্নীতির খবর পেয়েছেন এভাবে সংবাদটি পরিবেশন করেছেন। তারা সব শিক্ষকের নাম পত্রিকায় ছেপে দিয়েছেন। তাদের বিভিন্নভাবে ফোন করেছেন। রিপোর্টেই পড়লাম তাদের কেউ কেউ ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। নিশ্চয়ই তাদের পরিবার ভীষণ লজ্জায় পড়েছেন!
শিক্ষকদের এই সামাজিক হেনস্থা দেখে মনটা খুবই বিষন্ন হয়ে পড়ল। দীর্ঘদিন সরকারি চাকরি করতে গিয়ে দেখেছি যে রিকুইজিশন দিয়ে সরকারি গাড়ি নেয়া কোনো ব্যাপার নয়। আমি নিজেও কতবার এভাবে গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন দাওয়াতে গিয়েছিলাম তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
আমি বেশ বুঝতে পারছি দেশের প্রধানতম বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত মেধাবী এই শিক্ষকদের কারোরই নিজেদের গাড়ি নেই। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে তা হবে বিরলতম ঘটনা!
অথচ বছর দুয়েক আগেই আমরা জেনেছি তরুণ ইউএনওরা একেকজন ৯৪ লাখ টাকা দামের গাড়ি পাচ্ছেন। সেখানে এই মেধাবী ২০ জন শিক্ষকদের কয়েকঘন্টার জন্য তার প্রতিষ্ঠানের একটা গাড়ি ব্যবহারকে চরম দুর্নীতি হিসেবে সবাই সামাজিক ভাবে আলোচনা করছেন!
কিছু শিক্ষক নেতা হয়ত দুর্নীতি করেন। কিন্তু সম্প্রতি ঢালাওভাবে শিক্ষকদের নিয়ে রাজনৈতিক নেতাসহ অন্যান্যরা যেসব মন্তব্য করছেন তাতে শিক্ষকতা পেশার উপর সবাই আগ্রহ হারাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এক গ্রুপে দেখলাম অনেকে তাদের ডিগ্রি এবং যোগ্যতার বিবরণ দিচ্ছেন, কারণ কে নাকি বলেছেন যারা অন্য কোথাও সুযোগ না পায় তারা নাকি শিক্ষকতায় আসে!
কথাটা আমার নিজের গায়েও লেগেছে। সরকারি চাকরি ছেড়ে আমি নিজেও শিক্ষকতায় এসেছি। সে চাকরিতে থাকলে আমি কি অবস্থায় থাকতাম সেটা আর নাই উল্লেখ করলাম। কিন্তু আমি তো এসেছি শিক্ষকতা পেশাকে ভালোবেসে!
চুরি, বাটপারি, ই-কমার্সের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাট এসবের মধ্যে আপনাদের শিক্ষকদের কয়েক ঘন্টার জন্য গাড়ি নেয়াটা বিশাল অপরাধ মনে হলো? রাষ্ট্রেরই তো উচিত ছিল এদের ব্যক্তিগত গাড়ি দেয়া।
র্যাংকিং বলেন, নলেজ ইনডেক্স বলেন কোনো জায়গায় দেশের সম্মান বাড়বে না যতদিন না প্রাইমারি পর্যায় থেকে সব পর্যায়ের মেধাবি শিক্ষকরা রাষ্ট্র এবং সমাজের কাছ থেকে তাদের প্রাপ্য মর্যাদা পাবেন।
দেশের স্বাধীনতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের রক্ত দিয়েছে। যুক্তিসঙ্গত উপায়ে তাদের সমালোচনা করুন, এসব সামান্য ব্যাপার নিয়ে তাদের হেনস্থা করবেন না।
আপনারা কি কখনো এটা রিপোর্ট করেছেন যে কত পার্সেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গাড়ি আছে? তারা তো দেশের সবচেয়ে মেধাবীদের মধ্যে অন্যতম।
করুন না এরকম একটা রিপোর্ট! জাতি দেখুক মেধাবীদের এদেশে কি অবস্থা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :