শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৩:১২ রাত
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৩:১২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বর্জ্য সমস্যা প্রকট করে তুলছে কাঁচাবাজারে নষ্ট কৃষিপণ্য

বণিক বার্তা: রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের বাজারগুলোয় শুধু পরিবহন প্রক্রিয়াতেই নষ্ট হচ্ছে প্রচুর সবজি ও দ্রুত পচনশীল কৃষিপণ্য। অবিক্রীত অবস্থায়ও নষ্ট হচ্ছে অনেক পণ্য। কাঁচাবাজারে নষ্ট হওয়া এসব কৃষিপণ্যের একাংশ যাচ্ছে নগরের অনুমোদিত ভাগাড়গুলোয়। বড় একটি অংশ পড়ে থাকছে রাস্তার ওপরই। অথবা নিক্ষিপ্ত হচ্ছে আশপাশে অননুমোদিতভাবে গড়ে ওঠা ময়লার স্তূপে। এসব সবজি ও দ্রুত পচনশীল কৃষিপণ্যের আবর্জনা শেষ পর্যন্ত নাগরিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বাইরেই থেকে যাচ্ছে, যা পরিবেশদূষণের পাশাপাশি বড় ধরনের হুমকি তৈরি করছে জনস্বাস্থ্যে।

ঢাকা ও প্রতিবেশী শহরগুলোয় কাঁচাবাজারগুলোয় প্রতিদিন যে পরিমাণ সবজি ও কৃষিপণ্য নষ্ট হচ্ছে, তা জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থারও (এফএও) দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ চার সিটি করপোরেশন এলাকায় জরিপের ভিত্তিতে প্রকাশিত এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, এসব এলাকার কাঁচাবাজারগুলোয় উত্পন্ন খাদ্য ও কৃষিপণ্যের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দ্রুত বিকল্প সমাধান প্রয়োজন। অন্যথায় এসব এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংকট আরো প্রকট হয়ে ওঠার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব দিন দিন বাড়বে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিদিন শুধু ঢাকা শহরেই গড়ে ১১ হাজার টন বর্জ্য উত্পন্ন হচ্ছে। এর মধ্যে অর্ধেক সংগ্রহ করে ফেলা হচ্ছে আমিনবাজার ও সাভার ল্যান্ডফিলে। বাকি অর্ধেক থেকে যাচ্ছে আনুষ্ঠানিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বাইরে। খোলা অবস্থায় পড়ে থাকা এসব বর্জ্যের অধিকাংশই খাদ্য ও কৃষিপণ্যজাত। এর বড় একটি অংশ নষ্ট হচ্ছে কাঁচাবাজারে। রাস্তায় বা রাস্তার পাশে পড়ে থাকা এসব খাদ্যবর্জ্য থেকে উত্পন্ন দূষিত কণা বাতাসে মিশে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি সৃষ্টি করছে। আবার কিছু কিছু এলাকায় ডাস্টবিন পরিষ্কার করা হয় না দিনের পর দিন। এসব এলাকায় উপচে পড়া অতিরিক্ত বর্জ্যের কারণে রাস্তা সংকুচিত হয়ে আসা এবং যানজটের মতো ঘটনাও ঘটছে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শক্তিশালী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখা আছে। তবে সক্ষমতা ও জনবলের অভাবে তারাও প্রতিদিন সব বর্জ্য অপসারণ করতে পারে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের গাফিলতিকেও অপসারণ না করার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন স্থানীয়রা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বর্জ্য নেয়ার পরও বিশাল পরিমাণ বর্জ্য রয়ে যায়। সেগুলো পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। দুর্গন্ধের মধ্যে বসেই ব্যবসা চালিয়ে যেতে হয় বাজারের দোকানিদের।

কারওয়ান বাজারের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত শ্যামবাজারের। সেখানে নদীতীরে নষ্ট হওয়া কৃষিপণ্য পচে কয়েকটি আস্তরণ তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিনের পচা বর্জ্যের ওপরই গড়ে উঠেছে খাবারের দোকান। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এ বাজারের প্রতিদিনকার বর্জ্য নেয়ার পরও অনেক বর্জ্য অবশিষ্ট থেকে যায়। খাদ্য ও শস্যপণ্য ব্যবসায়ীরা তা নদীতে ফেলে দেন। ফলে নদী সরাসরি দূষণের শিকার হচ্ছে।

অন্যদিকে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নেই নিজস্ব ল্যান্ডফিল বা ময়লা ফেলার ভাগাড়। ফলে সেখানকার অবস্থা আরো ভয়ংকর। সেখানে মূল সড়কের দুপাশে, স্থানীয় নদী ও খালে ফেলা হচ্ছে এসব বর্জ্য। সাধারণ লোকজন তো ফেলছেই, খোদ সিটি করপোরেশনও একই কাজ করছে।

পরিসংখ্যান মতে, বিপুল এ বর্জ্যের ৯০ শতাংশই পুনঃচক্রায়নযোগ্য। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, কারওয়ান বাজার থেকে আসা বর্জ্যের ৮২ শতাংশই পচনশীল। এছাড়া শ্যামবাজারের বর্জ্যের ৭০ শতাংশ, দিগুবাবু বাজারের ৯০, বনলতা মার্কেটের ৮০, শান্তিনগর বাজারের ৮৫, টাউনহল মার্কেটের ৭০, বোর্ড বাজারের ৮০, জয়দেবপুর বাজারের ৮০, বন্দর বাজারের ৮০ ও বনানী বাজারের ৯০ শতাংশ খাদ্যবর্জ্যই পুনঃচক্রায়নযোগ্য। এসব বর্জ্য থেকে জ্বালানি, বায়োগ্যাস, জৈব সার ও পশুখাদ্য তৈরি করা যায়, যা অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরির পাশাপাশি পরিবেশদূষণ রোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এ বিষয়ে এফএও বলছে, সংশ্লিষ্ট বাজার কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা গেলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারেন। সমন্বিত উদ্যোগ না থাকলেও অনেক ব্যবসায়ী পুনঃচক্রায়নযোগ্য বর্জ্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিক্রি করছেন। সংকট কাটিয়ে উঠতে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে বাজারগুলোকে নিজস্ব উদ্যোগে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ শফিউল্লাহ সিদ্দিক ভুঁইয়া বলেন, খাদ্য ও কৃষিপণ্যজাত বর্জ্য কীভাবে পুনঃচক্রায়নের মাধ্যমে সম্পদে পরিণত করা যায়, সে বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। কিছু কাজও করা হচ্ছে। এতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য দুটোই নিরাপদ থাকবে।

একই কথা বলেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প চলমান রয়েছে। বর্জ্যবিষয়ক এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়