রউফুল আলম: দুনিয়াখ্যাত প্রতিষ্ঠান এমাজনের ‘অসধুড়হ’ মার্কেট ক্যাপিটাল হলো ১.৭৫ ট্রিলিয়ন ডলার। চলতি বছর বাংলাদেশের বাজেট ছিলো ৭১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এমাজনের টাকা দিয়ে এমন চব্বিশটা বাজেট দেওয়া যাবে। তাহলে এমাজন কি করে এতো বড়ো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠলো? প্রচলিত ধারার বেচা-কেনায় একজন কার্স্টমার যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়, এমাজন সেই সমস্যাগুলোকে সহজ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। অর্থাৎ ভোক্তাদের সেবার মানকে বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। আর প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে তাদের অর্ডারিং, প্যাকেজিং, সর্টিং, লেভেলিং, শিপিং ইত্যাদিকে আরও আধুনিকায়নের জন্য কাজ করে গেছে। আমেরিকা আসার পর থেকেই আমি এমাজনের প্রাইম মেম্বার। এই মেম্বারশিপের জন্য বছরে ফি দিতে হয়, কিন্তু সেটার জন্য সেবাও পাওয়া যায় অনেক। আমি যখন কোনো পণ্য কিনি, সেটা ফ্রি শিপিং ‘ডেলিভারি’ পাই। দ্রুত ডেলিভারি পাই। বহু প্রোডাক্ট ২৪ ঘণ্টায় চলে আসে। সব পণ্য ফেরতের জন্য এক মাসের সময় পাই। পণ্য ভালো না লাগলে, এক মাসের মধ্যে রিটার্ন। কোনো জবাবদিহিতা নেই। পণ্য ফেরতের জন্য আমাকে কোথাও যেতে হয় না। প্যাকেট করে বাসার দরজায় রেখে দেই। তাদের গাড়ি এসে নিয়ে যায়। যেসব পণ্য আমার প্রতিনিয়ত লাগে সেগুলো সাবস্ক্রাইব করা থাকে। প্রতি মাসের এক তারিখে সে পণ্যগুলো চলে আসে। এমাজনের রিটার্নিং পলিসি অনেক ফ্লেক্সিবল। কোনো ঘ্যানঘ্যান নেই।
এমাজন চাইলে বিলিয় ডলার লোটপাট করে উধাও হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু তাতে আমেরিকার ই-কর্মাস সংস্কৃতিতে একটা বড়ো ধাক্কা খেতো। মানুষ ই-কর্মাসে আস্থা হারাতো। অনলাইন শপিং থেকে সরে আসতো। কিন্তু সেটা হয়নি। সরকারও এই ধরণের বাটপারি করলে সেটা শক্ত হাতে দমনের চেষ্টা করতো। প্রথম আলোর রিপোর্ট বলছে, ই-কর্মাস ও অন্যান্য নামে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা লোটপাট হয়েছে। কী দুর্ভাগ্য। মানুষের টাকা নিয়ে চলে যায়, অথচ কেউ দেখার নেই। প্রত্যেকটা জায়গায় আমরা অভিভাবকহীন। মানুষ কোথাও বিচার পায় না। আস্থা পায় না। এসব বাটপার প্রতিষ্ঠানগুলো কতোগুলো সেলিব্রেটিকে নিয়ে ছবি তুলে ব্যবসা শুরু করে। মানুষকে আকৃষ্ট করে। তারপর কিছুদিন পর উধাও। সেসব সেলিব্রেটিদের অনেকেই অবশ্য বাটপারদের মাস্তুত ভাই। এই যে বাটপারি, এতে করে দেশে ই-কমার্সের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। মানুষের আস্থা হারিয়ে একটা সংস্কৃতি গড়ে তোলা অসম্ভব। সারা দুনিয়া যখন ই-কর্মাসের উপর চলছে, তখন আমরা যদি একটা ভিত তৈরি করতেই হাবুডুবু খাই, তাহলে দেশের বাণিজ্যের জন্য এটা মোটেও ভালো নয়। সমাজের প্রতিটা ব্যবস্থাপনা থেকে মানুষের আস্থা উঠে যাচ্ছে। বিশ্বাস ক্ষয়ে যাচ্ছে। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস না থাকা, সমাজের সবার জন্যই বিপদ। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :