ইউসুফ মিয়া: [২] রাজবাড়ীর পদ্মা নদীতে নতুন কৌশলে জেলেরা অবাধে শুরু করেছে মাছ ধরা। এই চায়না নামের দুয়ারীতে রেনুসহ সবকিছুই ছেকে জেলেরা ধরেন মাছ। মৎস্য সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন এই নতুন পদ্ধিতে জাল ব্যবহারে ভবিষ্যতে দেশীয় প্রজাতির মাছ চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়বে দেশে।
[৩] বাংলাদেশ সরকার দেশে কারেন্ট জাল ব্যবহার বন্ধে সরকার ও মৎস্য অধিদপ্তর বিভাগ যখন হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনি দেশের মৎস্য সম্পদকে ধ্বংস করতে মরিয়া হয়ে জেলেরা পদ্মা নদীতে নির্বিচারে অধিক মাছ শিকারের আশায় চায়না দুয়ারী নামের বিশেষ ফাঁদ ব্যবহার করে মাছ শিকার করছে। এই ধরনের ক্ষতিকর ফাঁদ ব্যবহার বন্ধে মৎস্য বিভাগের কোনো আইন না থাকায় মৎস্য বিভাগও নিতে পরছে না কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। তবে মৎস্য আইনের বিভিন্ন ধারা উপধারা প্রয়োগ করে মৎস্য বিভাগ নিয়মিত নদীতে অভিযান পরিচালনা করছে।
[৪] সরেজমিনে রাজবাড়ীর সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের গোদারবাজার, সোনাকান্দর, বরাট ইউনিয়নের উড়াকান্দা চরকাঠুরিয়া পদ্মানদীর এলাকায় নদীতে গিয়ে দেখা যায় অসংখ্য ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা নদীর তীরের দিকে নোঙর করে আছে। দেখে বোঝার উপায় নেই, কি কারণে নৌকাগুলো অলস পড়ে আছে। একটু খোঁজ নিতেই জানা গেল, এসব নৌকা মাছের বংশ ধ্বংসকারী ‘চায়না দোয়ারী’ নামের এক ধরনের ফাঁদ ফেলে বসে আছে জেলেরা।
[৫] পদ্মায় মিঠা পানির সব ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ সুক্ষ এই ফাঁদে ধরা পড়ছে। বিশেষ করে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির ডিমওলা মাছ ও রেনু পর্যন্ত এই ফাঁদের হাত থেকে রক্ষা পায় না। এতে করে ক্রমেই দেশীয় মৎস্য শূন্য হয়ে পড়ছে নদ-নদী, খাল-বিল ও ছোট নদীগুলোতেও। তবে এগুলো নদীতে যাতে না এই ফাঁদ না পাতে পারে তার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
[৬] চায়না দুয়ারী সাধারণত এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতা ৬০ থেকে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ক্ষুদ্র ফাঁশবিশিষ্ট ঢলুক আকৃতির হয়ে থাকে। লোহার ৪টি রড ও রডের রিং দিয়ে খোঁপ খোঁপ আকারে বক্স তৈরি করে চারপাশ সুক্ষ জাল দিয়ে ঘের দিয়ে তৈরি করা হয়।একেকটি চায়না দুয়ারীর দাম ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। সহজে মাছ ধরা পরে বলে এতে আয় বেশি, অন্যদিকে পরিশ্রম কম।
[৭] চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ শিকার করা বিমল হালদার নামের এক জেলে বলেন, এই ফাঁদে সবধরণের মাছই আটকা পড়ে। আগে আমরা কারেন্ট জাল ব্যবহার করতাম কিন্তু মৎস্য বিভাগ নিয়মিত অভিযান চালানোর কারণে কারেন্ট জাল ব্যবহার বাদ দিয়েছি। এখন চায়না দুয়ারী ব্যবহার করি।এই জালে খরচ কম আয় বেশি।
[৮] পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা জানান, বিকাল হলেই ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় করে এই চায়না দুয়ারী নদীতে ফেলা হয়। সারা রাত নদীতে রাখার পর সকালে জাল তুলে আনলে ধরা পড়ে দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় সব মাছ, নদীতে থাকা জলজ প্রাণী এমনকি ছেঁকে ওঠে মাছের ডিমও। এ জাল দিয়ে মাছ ধরলে কিছুদিন পর হয়ত নদীতে আর কোনো মাছ পাওয়াই কঠিন হবে।
[৯] জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রোকোনুজ্জামান বলেন, চায়না দুয়ারী ব্যবহারে দেশীয় প্রজাতির মাছ ধ্বংস হচ্ছে। এই ফাঁদ বন্ধে মৎস্য আইনে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নদীতে এ ধরনের ফাঁদ ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান তিনি। সম্পাদনা: হ্যাপি
আপনার মতামত লিখুন :