নিউজ ডেস্ক: পরিবেশ দূষণের দায়ে রাজধানী শ্যামপুরের একটি ডায়িং ও একটি টেক্সটাইল কারখানাকে এখন পর্যন্ত্ত তিনবার জরিমানা করা হয়েছে। অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকা, নির্গত তরল বর্জ্য সরাসরি বুড়িগঙ্গা এক দূষিত করাসহ নানা কারণে সবশেষ ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সসেন্ট শাখা তাদের ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করে। তবে এতকিছুর পরও বন্ধ হয়নি দূষণ, প্রতিষ্ঠান দুটিও চলছে বহাল-তবিয়তে।
তিনবার জরিমানা গুনেও কীভাবে কারখানা সচল রেখেছেন জানতে চাইলে একটি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রথমবার ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তবে মন্ত্রণালয় থেকে তা বিশেষ বিবেচনায় মওকুফ করিয়ে আনা হয়। এর পরের দুবার আপিল করে ৮০ হাজার টাকা কমানো হয়েছে। আর এভাবেই কারখানা চালু রেখেছেন তারা।
একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ১০ বছরে পরিবেশ অধিদপ্তরের ধার্য করা জরিমানার ৩৮৫ কোটি টাকার মধ্যে আদায় হয়েছে মাত্র ১৮৭ কোটি টাকা। এনফোর্সমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করার পর তারা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত আপিল আদালতে মামলা করে জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে নেয়। এছাড়াও দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করেও অনেক সময় জরিমানা মওকুফ করিয়ে নেন। ফলে জরিমানার বেশির ভাগ অর্থই অনাদায়ী থেকে যায়।
পরিবেশবিদরা বলছেন, এ জরিমানা লোক দেখানো। যেহেতু এটি আদায়ই করা যায় না, তাই অনেক সময় এটি পরিবেশ দূষণে শিল্পমালিকদের উৎসাহিতও করে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এটা অস্বীকারের উপায় নেই যে ক্ষতিপূরণ বা জরিমানা ধার্য করেও পরিবেশ দূষণ থামানো যাচ্ছে না। এর কারণ হলো জরিমানার পরিমাণ কম ও সেটি মওকুফের সুযোগ আছে। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের একাধিকবার জরিমানা করা হলেও তারা দূষণ থামায় না। এমনকি বারবার ক্ষতিপূরণ দিয়েও কারখানা সচল রাখছেন মালিকরা।
ফতুল্লাহর একাধিক ডায়িং কারখানার মালিক জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিমানা নিয়ে মাথাই ঘামায় না বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। দেখা যায়, চার-পাঁচ বছরে একবার পরিবেশ অধিদপ্তর পরিদর্শনে যায়। সে সময় যদি তারা ১০ লাখ টাকাও জরিমানা করে, তাতেও কিছু যায়-আসে না। ক্ষতিপূরণ দিয়ে কারখানা আগের মতোই সচল থাকে ও পরিবেশ দূষণ অব্যাহত রাখে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের তো সবসময় কারো পেছনে গোয়েন্দার মতো লেগে থাকা সম্ভব না। সে পরিমাণ জনবলও অধিদপ্তরের নেই। ফলে এটাও সত্য, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো জরিমানার টাকা আলাদা করে রেখেই পরিবেশ দূষণ কার্যক্রমসহ কারখানা সচল রাখে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর যে ক্যাটাগরিতে জরিমানা করে তা মোটেও যথেষ্ট নয়। তারা ১০ বছরে ৩৮৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করেছে। অথচ বহির্বিশ্বে পরিবেশ দূষণের দায়ে একটি কোম্পানিকেই এর চেয়ে বেশি পরিমাণ টাকা ধার্যের নজির রয়েছে।
তিনি বলেন, অবশ্যই পরিবেশ অধিদপ্তরের দুর্বল এনফোর্সমেন্ট পদ্ধতি পরিবেশ দূষণ বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখছে। প্রথমত, তাদের এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমই কম, তার ওপর যা করে তার চেয়ে সংখ্যায় বাড়িয়ে দেখানো হয়। একজন কারখানা মালিক যখন দেখবে নামমাত্র ক্ষতিপূরণ ধার্য করা হয়েছে, তার ওপর এটা থেকেও কমানোর জন্য আপিল ও মওকুফের ব্যবস্থা রয়েছে, তখন সে তো পরিবেশ দূষণে উৎসাহিত হবেই।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট শাখার পরিচালক মোহাম্মাদ মাসুদ হাসান পাটোয়ারী বলেন, ক্ষতিপূরণ ধার্যের একটি নীতিমালা আছে। কী কারণে পরিবেশ দূষণ করলে কত টাকা ক্ষতিপূরণ করা হবে, তা বিশেষজ্ঞ প্যানেল ঠিক করে দিয়েছে। আমরা শুধু সে নির্দেশনা অনুসরণ করি।
তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ানো কমানোর যৌক্তিকতা-অযৌক্তিকতা এটা বিশেষজ্ঞ প্যানেল, পরিবেশবিদ ও গবেষকরা ভাববেন। তাছাড়া আপিলের সুযোগ রাখা হয়েছে এ জন্য যে যিনি ক্ষতিপূরণ দেবেন তার কোনো কথা থাকলে তা যেন উপস্থাপন করতে পারেন। এ সুযোগ থাকা উচিত বলেও মনে করেন তিনি। সূত্র: বণিক বার্তা
আপনার মতামত লিখুন :