মহসীন কবির: [২] বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের বাড়ির ভাত কার পেটে না গেছে?।
[৩] তিনি বলেন, মানুষের একটা বদভ্যাস আছে। কথায় কথায় হতাশ হওয়া। যতই কাজ করি তার পরও বলে এটি হলো না কেন, ওটি হলো না কেন? এসব না করে আগে কী ছিল আর এখন কী হয়েছে, সেটি দেখলে তো হয়ে যায়। আর মিডিয়া কী লিখল আর টকশোতে কী বলল, সেটি শুনে আমি কখনো দেশ পরিচালনা করি না। দেশ পরিচালনা করি অন্তর থেকে। কারণ আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করেছেন।
[৪] করোনার টিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, সবাই যাতে টিকা পায় আমরা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। সবাইকে টিকা দেওয়া হবে। ২৪ কোটি ডোজ টিকা আমরা কিনব। ভ্যাকসিন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আমাদের দেশে ভ্যাকসিন তৈরির জন্য চুক্তি হয়েছে। সেখানেও ভ্যাকসিন উৎপাদন করা হবে।
[৫] শেখ হাসিনা বলেন, বলতে গেলে ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত কম করে হলেও ১০ লাখ মানুষকে আমি ঘর করে দিয়েছি। এবারের যে ঘটনাটি ঘটেছে, এখানে এক সংসদ সদস্য প্রশ্ন তুলেছেন- ঘর নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। এটি আমরা তদন্ত করছি। ৯ জায়গায় দুর্নীতি পেয়েছি, আর ১০-১২ জায়গায় অতিবৃষ্টি হলো, এ কারণে মাটি ধসে ঘর পড়ে গেছে। সেখানে কিন্তু আরও অনেক ঘর ছিল। তিনি আরও বলেন, ৩০০টি জায়গায় যেখানে প্রত্যেকটি ঘরের ছবি আমার কাছে আছে। পুরো তদন্ত করে দেখা গেছে, সেখানে দরজা-জানালার ওপর হাতুড়ির আঘাত।
[৬] প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন সংসদ সদস্য বললেন, ‘দুদক নাকি বলছে- আমরা আর তদন্ত করব কী, প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেছেন।’ এই কথা যে কর্মকর্তা বলেছে, যদি আমি জানতে পারি, তা হলে তার ব্যাপারেও খোঁজ নিতে হবে। আমি দুদককে বলব- ৩০০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্রতিটি তদন্ত তাদের করতে হবে এবং রিপোর্ট দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, এখন কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে ঘর করে দিচ্ছি, যাতে সহজে কেউ ভাঙতে না পারে।
[৭] প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪০ বছর পর নয়, জিয়ার মৃত্যুর সংবাদের পর তার লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। গায়েবানা জানাজা হয়েছিল। কয়েক দিন পর একটি বাক্স আনা হলো। এখানে কেউ একটা বুদ্ধি দিয়েছে- আর জেনারেল এরশাদ তো এই বিষয়ে বেশি পারদর্শী। সাজিয়ে-গুজিয়ে একখানা বাক্স নিয়ে এসে দেখানো হলো।
[৮] সংসদ নেতা বলেন, তখন এই পার্লামেন্টে বারবার প্রশ্ন এসেছে- যদি লাশ পাওয়া যায়, তার ছবি থাকবে না কেন? লাশ শনাক্ত করেছিল মীর শওকত। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে চিনতাম। তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম- সত্যি কথা বলেন তো? তিনি বলেছিলেন, লাশ কোথায় পাব? এরশাদ সাহেবকেও জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি যে একটা বাক্স আনলেন, লাশটা কই? তিনি বললেন, লাশ পাব কোথায়?
[৯] শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধু তাকে খেতাব দিয়েছেন। তা সবই সত্য। কিন্তু তার অবদানটা কী? মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কর্নেল আসলাম বেগ তাকে চিঠি লিখেছিল। ওই চিঠি আমার কাছে আছে। এই সংসদে সেটি তুলে ধরব। সংসদের প্রসিডিংসের পার্ট হয়ে থাকা দরকার।
[১০] বিশ্বাসঘাতকদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দলে বেইমান তো ছিলই। খন্দকার মোশতাক-টোশতাক তো ছিলই। এটি তো অস্বীকার করি না। আমাদের বাড়ির ভাত কার পেটে না গেছে। জিয়াউর রহমান তো খালেদা জিয়াকে নিয়ে মাসে একবার করে আমাদের বাড়ি গিয়ে বসে থাকত।
[১১] বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এদের থেকে এখন মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়। জ্ঞানের কথা শুনতে হয়। আইনের শাসনের কথা শুনতে হয়। আমার মা-বাবার হত্যার বিচার চেয়ে আমি মামলা করতে পারিনি। আমাদের সেই অধিকার ছিল না।
[১১] ২৫ বছর দেশে বিকৃত ইতিহাস শেখানো হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ যখন সারাদেশে ব্যারিকেড দেওয়া হয়, তখন চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি সেনাদের হয়ে ব্যারিকেড দেওয়া লোকদের ওপর গুলি চালায়। এর পর সে গেল সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে। সেখানে পাবলিক ঘেরাও দিয়ে তাকে আটকাল। স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ল। সংগ্রাম পরিষদের নেতারা ঘোষণা সংগ্রহ করে সারাদেশে প্রচার করে দিল। চট্টগ্রামে সেটি প্রচার হলো। ২৬ মার্চ দুপুর ২টা থেকে প্রথমে আমাদের হান্নান সাহেব একের পর এক জাতির পিতার ওই ঘোষণাপত্র পাঠ করতে থাকেন। জহুর সাহেব বললেন, একজন আর্মির লোক ডেকে নিয়ে এসো। তা হলে যুদ্ধ যুদ্ধ মনে হবে। তখন মেজর রফিক সাহেবের কাছে যাওয়া হলো। উনি অ্যামবুশে ছিলেন। সরে গেলে পাকিস্তানি আর্মি ঢুকে পড়বে। এ জন্য অন্য কাউকে খুঁজতে বললেন। জিয়াকে কিন্তু তখন পাবলিক অ্যারেস্ট করছে, সোয়াত জাহাজে যেতে দেবে না। ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ওই দিন জিয়াউর রহমান কিন্তু কোনো ঘোষণা দেয়নি।