ফয়সাল চৌধুরী : কুষ্টিয়ায় পদ্মার নদীর তীব্র ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক। কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া এলাকায় ভাঙতে ভাঙতে কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়কের মাত্র ৭০ মিটারের মধ্যে চলে এসেছে এ নদী।
গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ৩২ জেলার প্রবেশদ্বার।প্রতিবছরই ভাঙন হওয়ায় এই এলাকায় নদী ক্রমেই জনবসতির দিকে এগিয়ে আসছে। নদীগর্ভে গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কের ওই অংশটি বিলীন হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষাসহ নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের দাবি স্থানীয়দের।
সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পানি বাড়ার কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে এই ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায়। ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ৬টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে।এরই মধ্যেই বেশ কিছু কৃষি জমি ও বসতবাড়ী বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নদীর তীরবর্তী ভাঙন কবলিত মানুষের।
নদী ভাঙনে ভিটামাটি হারা পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছেন।নদী ভাঙ্গন রোধে সেখানে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জমিজায়গা যা ছিল তা ভাঙিচোর (বিলীন) হয়ে যাচ্ছে। , শাক -সবজি,উস্তে, করলা ও জমির ধান সুদ্দ ভাঙি যাচ্ছে। আমরা বাস্তুহারা হয়ে গেছি। আমাদের কিছুই নাই।’ ওই এলাকায় বাসিন্দার মোখলেসুর রহমান বলেন, বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙ্গন আর শুষ্ক মৌসুমে শত শত ড্রাম ট্রাক ও অবৈধ পরিবহনে দেদারসে চলাচলের কারণে পরিবেশ দূষণ হয় পুরো গ্রাম অঞ্চল জুড়ে। যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে বালু উত্তোলন বন্ধসহ স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি করেন তিনি।
একাধিক পরিবেশবীদ ও বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, এখানে বালির ব্যবসা ও ড্রাম ট্রাক চলাচল বন্ধ করলেই নদী ও রাস্তা ভাঙ্গন থেমে যাবে।
এছাড়াও বালি ভর্তি শত শত বৃহৎ আকারের কার্গো এসে, পাড়ে আঘাত করার সাথে সাথেই ভেঙ্গে যাচ্ছে। যতদিন এখানে বালি উত্তলন বন্ধ না হবে নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরে আসবেনা।
এ বিষয়ে উন্নয়ন পরিষদ কুষ্টিয়ার সভাপতি হাজী রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন অতিতে এই নদীর পাড়ে বালির ব্যবসা ছিলোনা, ড্রাম ট্রাকের দাপাদাপিও ছিলোনা, যে কারণে নদী ভাঙ্গন ও ছিলোনা, যেদিন থেকে অবৈধ ভাবে এই নদীর পাড়ে বালিমহল তৈরি হয়েছে, যেদিন থেকে ড্রাম ট্রাকের বেপরোয়া চলাচল শুরু হয়েছে, সেদিন থেকেই নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। বালির ব্যবসার সাথে জড়িত একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি ভিন্ন দিকে উপস্থাপন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
মিরপুর উপজেলার চেয়ারম্যান কামরুল আরেফিন বলেন ভাঙন ঠেকানো না গেলে যেকোনো সময় কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি কুষ্টিয়ার বিস্তীর্ন এলাকা বন্যা কবলিত হবে।
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, তালবাড়িয়া এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা পদ্মা নদীর ভাঙনকবলিত হয়েছে। এতে পার্শ্ববর্তী জাতীয় মহাসড়কও হুমকির মুখে রয়েছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) জানানো হয়েছে।তালবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান মণ্ডল বলেন, নদীভাঙনের কারণে গত ৩৭ বছরে তালবাড়িয়া ইউনিয়নের ছয় হাজার বাসিন্দা অন্যত্র চলে গেছে। ভোটারের সংখ্যাও ক্রমেই কমছে। গত ২০দিনে এক হাজার মিটার ভেঙে গেছে। এই এলাকা রক্ষা করতে হলে পদ্মার ভাঙন ঠেকানোর বিকল্প নেই।
পাউবো সূত্র বলছে, তালবাড়িয়া ইউনিয়নে সাত কিলোমিটার এলাকায় পদ্মায় ভাঙন রয়েছে। ২০১৬ সালের দিকে সেখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ৬০০কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়। সব শেষ সেটি ৯৯০ কোটি টাকার প্রকল্পে দাঁড়াই। কিন্তু প্রকল্পটি অনুমোদন হয়নি। যে কারণে বাধ নির্মাণ করা যাচ্ছে না ।
কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন বলেন, তালবাড়িয়া পয়েন্টে কুষ্টিয়া- পাবনা জাতীয় মহাসড়কও হুমকিতে পড়তে পারে।বর্তমানে এই সড়কের একটি অংশের অবস্থান পদ্মা নদী থেকে মাত্র ৭০ মিটার দূরে।