সুজন কৈরী : [২] বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের (প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান) বিরুদ্ধে ডিএমপির গুলশান থানায় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন আরিফ বাকের নামে এক ভুক্তভোগী।
[৩] ভুক্তভোগী আরিফ বাকের এর লিখিত অভিযোগটি নিচে তুলে ধরা হল:-
[৪] লিখিত অভিযোগ পত্রে বলা হয়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অভিযোগকারী আরিফ বাকের ও তার বন্ধুরা চলতি বছরের মে ও জুন মাসে কিছু পণ্য অর্ডার করেন। পণ্যের অর্ডার বাবদ সব মূল্য বিকাশ, নগদ ও সিটি ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে সম্পূর্ণ পরিশোধ করেন তারা। পণ্যগুলো ৭ থেকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে ডেলিভারি ও নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠান সমপরিমাণ টাকা ফেরত দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ওই সময়সীমার মধ্যে পণ্যগুলো ডেলিভারি না পাওয়ায় বহুবার ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধিকে ফোন করা হয়। সর্বশেষ গত ৫ সেপ্টেম্বর যোগাযোগ করে অর্ডার করা পণ্যগুলো পাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই।
[৫] সিইও রাসেলের সঙ্গেও দেখা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের সঙ্গে ইভ্যালি চরম দুর্ব্যবহার করেছে। আমার মতো অনেকের একই অবস্থা।
[৬] অভিযোগপত্রে আরিফ বাকের উল্লেখ করেন, ইভ্যালিকে প্রতিটি পণ্যের মূল্য বিকাশ, নগদ ও সিটি ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করি। আমার মতো আবুল কাশেম এবং আবদুল্লাহ ওমর হক নামে ক্রেতারাও অনেক টাকার পণ্য ক্রয় করেন। নির্ধারিত সময়ে পণ্য না পেয়ে আমরা ধানমন্ডি ১৪ নম্বর রোডে ইভ্যালির অফিসে যাই। তখন তাদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেলের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়।
[৭] অতঃপর ১০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টায় আমি এবং অন্যান্য ভুক্তভোগীরা ইভ্যালির অফিসে যাই এবং তাদের প্রতিনিধির সঙ্গে পণ্যের অর্ডার সম্পর্কে কথা বলতে চাইলে তারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে অফিসের অভ্যন্তরে থাকা ইভ্যালির সিইও রাসেল সাহেব উত্তেজিত হয়ে তার রুম থেকে বেরিয়ে এসে আমাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন এবং আমাদের পণ্য অথবা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। এ সময় আমাদের প্রাণ নাশের হুমকিও প্রদান করেন তিনি। আমরা চরম আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দিন যাপন করছি এবং পণ্যগুলাে না পাওয়ায় আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
[৮] অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, আমরা জানতে পারি ইভ্যালি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পণ্য বিক্রয়ের নামে নানা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের অসংখ্য গ্রাহকের কাছ থেকে আনুমানিক ৭০০-৮০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এই টাকার অংক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তাই আমরা সিইও মো. রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনসহ আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করার প্রার্থনা করছি।
[৯] এ বিষয়ে গুলশান থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক হাফিজুর রহমান বলেন, একজন ভুক্তভোগী ইভ্যালির এমডি রাসেলের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ নিয়ে আমাদের থানায় আসেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির অফিস ধানমন্ডি থানা এলাকায় হওয়ায় ভুক্তভোগী নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি মামলাটি কোথায় করবেন। যেহেতু অফিসটি ধানমন্ডিতে নিয়ম অনুযায়ী সেখানেই মামলাটি হওয়ার কথা। তবে ভুক্তভোগীর বাসা গুলশান এলাকায় হওয়ায় তিনি আমাদের কাছে এ বিষয়ে পরামর্শ করতে এসেছিলেন। তার কাছ থেকে অভিযোগের একটি কপি আমরা রেখে দিয়েছি এবং তাকে আমরা বলেছি আগামীকাল সকালে থানায় আসতে; তখন সিনিয়র অফিসাররা থাকবেন এই বিশেষ সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। বেশি রাত হওয়ায় ভুক্তভোগীরা এখন বাসায় চলে যাচ্ছেন।
[১০] তিনি আরও বলেন, যেহেতু আইন লঙ্ঘন হয়েছে, তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দায়িত্ব না নিয়ে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে দেবে। তার আগে কমিটির সুপারিশ বাণিজ্যমন্ত্রী ও বাণিজ্য সচিবকে জানানো হবে।
[১১] হাফিজুর রহমান বলেন, ১০টি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চাওয়া হয়েছিল। একটি পাওয়া গেছে। বাকিগুলোর তথ্যও আসবে। বৈঠকে ধামাকা, ই–অরেঞ্জ ইত্যাদির কর্মকাণ্ড নিয়েও আলোচনা হয়েছে।